১৪১ ট্যাক্স কার্ড, ৫১৭ জন পেলেন সম্মাননা
আয়কর প্রদানে দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে এ বছর কর বাহাদুর পরিবার, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সেরা করদাতার পুরস্কার ও ট্যাক্স কার্ড দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সারাদেশের ৮৪টি পরিবারকে করবাহাদুর পুরস্কার, ৩৭০ জনকে সর্বোচ্চ আয়কর প্রদানকারী এবং ১৪৭ জনকে দীর্ঘ সময় আয়কর প্রদানকারীসহ মোট ৫১৭ করদাতাকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া সেরা করদাতা হিসেবে ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স কার্ড দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্যক্তি রয়েছেন ৭৬ জন, বাকি ৬৫টি হলো প্রতিষ্ঠান।
করদাতার বাইরে সেরা রিপোর্টার হিসেবে ১৩ জন সাংবাদিক ও আয়কর নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় ১২ জন শিক্ষার্থী বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়।
বুধবার রাজধানীর শেরে-ই-বাংলানগরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান ও এফবিসিসিআইর সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বিভিন্ন ধাপে বিজয়ীদের হাতে এসব সম্মাননা ও ট্যাক্স কার্ড তুলে দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সম্মাননা তুলে দেয়া হয় নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান ও তার পরিবারকে।
এরপর ব্যক্তি পর্যায়ে ‘বিশেষ শ্রেণি’ এবং ‘আয়ের উৎস বা পেশা’ নামের দুটি শ্রেণিতে ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা দেয় হয়। বিশেষ শ্রেণির মধ্যে রয়েছে সিনিয়র সিটিজেন, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, নারী এবং তরুণ। আয়ের উৎস বা পেশার মধ্যে রয়েছে ১৩টি শ্রেণি। এগুলো হচ্ছে ব্যবসায়ী, বেতনভোগী, ডাক্তার, সাংবাদিক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, স্থপতি, হিসাবরক্ষক, নতুন করদাতা, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিল্পী (গায়ক-গায়িকা) এবং অন্যান্য। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোম্পানি পর্যায়ে ট্যাক্স কার্ড পেয়েছে ৬৫টি কোম্পানি। এ ক্যাটাগরিতে রয়েছে ব্যাংকিং, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকমিউনিকেশন, প্রকৌশল, খাদ্য ও আনুসঙ্গিক, জ্বালানি, পাট শিল্প, স্পিনিং ও টেক্সটাইল, ওষুধ ও রসায়ন, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, আবাসন খাত, তৈরি পোশাক খাত, চামড়া শিল্প, ফার্ম, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, ব্যক্তিসংঘ।
সিনিয়র সিটিজেন শ্রেণিতে ট্যাক্স কার্ড পেয়েছেন স্যামুয়েল এস চৌধুরী, গোলাম দস্তগীর গাজী, চট্টগ্রামের আলী হোসাইন আকবর আলী, রাজশাহীর অনিতা চৌধুরী এবং ঢাকার এম আনিস-উদ-দৌলা।
গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শ্রেণিতে ঢাকার তিনটি কর অঞ্চলের আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম, মো. নাসিরউদ্দিন মৃধা ও এস এম আবদুল ওয়াহাব এবং কুমিল্লার দুটি কর অঞ্চলের মো. আবদুল ওয়াহাব ও মো. আবুল খায়ের।
নারী শ্রেণিতে হোসনে আরা হোসেন, লায়লা হোসেন, পারভীন হাসান, রাজশাহীর বুলা চৌধুরী এবং রংপুরের নিশাত ফারজানা চৌধুরী।
তরুণ শ্রেণিতে নাফিস সিকদার, গাজী গোলাম মতুর্জা, মো. শাহনেওয়াজ, সিলেটের এ কে এম আতাউল করিম এবং চট্টগ্রামের সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর ট্যাক্স কার্ড পেলেন।
প্রতিবন্ধী শ্রেণিতে ঢাকার আকরাম মাহমুদ, সিলেটের মো. মামুনুর রশিদ এবং মো. কুমিল্লার জহিরুল ইসলাম।
ব্যবসায়ী শ্রেণিতে ঢাকার মো. কাউছ মিয়া, আবদুল কাদির মোল্লা, খন্দকার বদরুল হাসান, কামরুল আশরাফ খান এবং চট্টগ্রামের মোহাম্মদ কামাল।
চিকিৎসক শ্রেণিতে এ কে এম ফজলুল হক, প্রাণ গোপাল দত্ত, জাহাঙ্গীর কবির, এন এ এম মোমেনুজ্জামান এবং মো. আবদুল মোবিন খান।
আইনজীবী শ্রেণিতে শেখ ফজলে নূর তাপস, মাহবুবে আলম, আহসানুল করিম, কাজী মুহাম্মদ তানজীবুল আলম এবং মুহাম্মদ কবির উজ্জামান ইয়াকুব।
খেলোয়াড় শ্রেণিতে তামিম ইকবাল খান, মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং সাকিব আল হাসান।
অভিনেতা-অভিনেত্রী শ্রেণিতে মেহের আফরোজ শাওন, শাকিব খান এবং জাহিদ হাসান। শিল্পীদের মধ্যে সেরা করদাতা রুনা লায়লা, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও এস ডি রুবেল।
স্থপতি শ্রেণিতে মো. রফিক আজম, মো. ইকবাল হাবিব এবং এনামুল করিম নির্ঝর।
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া শ্রেণিতে মিডিয়া স্টার, ট্রান্সক্রাফট, মিডিয়া ওয়ার্ল্ড লিমিটেড ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ।
প্রাতিষ্ঠানিক করদাতার মধ্যে ব্যাংক শ্রেণিতে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এইচএসবিসি, ইউসিবিএল, পূবালী ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে নেসলে বাংলাদেশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ।
করবাহাদুপ পরিবারের মধ্যে ঢাকায় ১৬টি পরিবার, চট্টগ্রামে আটটি আর বাকি ৬০ দেশের অন্যান্য জেলার পরিবার এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ২৫২ জন সম্মাননা গ্রহণ করেছেন।
নীতিমালা অনুযায়ী, ট্যাক্স কার্ড দেয়ার পর থেকে এর মেয়াদ থাকবে এক বছর। ট্যাক্স কার্ডধারীরা সরকারের বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন। যেকোনো ভ্রমণে সড়ক, বিমান বা জলপথে টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। স্ত্রী-স্বামী, নির্ভরশীল পুত্র-কন্যা নিজেদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কেবিন সুবিধা পাবেন।
এ ছাড়া বিমানবন্দরে সিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার এবং তারকা হোটেলসহ সব আবাসিক হোটেলে বুকিং পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন।
দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়ে এই সম্মাননা অনুষ্ঠান শেষ হয় বিকাল ৫টায়।
(ঢাকাটাইমস/০৮নভেম্বর/জেআর/জেবি)