রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক

২১ আগস্ট হামলায় ডিজিএফআই এনএসআই সিআইডি ব্যবহৃত হয়

আদালত প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৫৩

২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সামরিক-বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, এনএসআই, সিআইডি ও পুলিশকেও ব্যবহার করেছিল বলে দাবি করেছে মামলার রাষ্ট্রপক্ষ।

বুধবার ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান কৌসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান অষ্টম দিনের যুক্তিতর্কে এ দাবি করেন।

এদিন বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে যুক্তিতর্কে উপস্থাপন শুরু করেন এই পাবলিক প্রসিকিউটর। তিনি প্রায় বেলা ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণে আসা যুক্তি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন।

এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুরুদ্দিন এদিন রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আগামী ১৩, ১৪ ও ১৫ অক্টোবর যুক্তি উপস্থাপনের পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তি উপস্থাপনে বলেন, এই দুই মামলায় মোট আসামি ৫২ জন, যার মধ্যে দ-বিধি আইনের মামলায় ৫২ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়। কিন্তু বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৫২ জন আসামি থাকলেও ১১ জন আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে ৪১ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়। এরপর তিনি কোন আসামির বিরুদ্ধে কোন কোন ধারায় চার্জগঠন করা হয়েছে তা আদালতে উপস্থাপন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌসুলি বলেন, ‘মামলা দুটিতে প্রথম ও সম্পূরক চার্জশিট মিলে ৫১১ জনকে সাক্ষী করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের মধ্যে ২০৭ জনকে আমরা আদালতে উপস্থাপন করি। এ ছাড়া চার্জশিটের বাইরে থেকে আমরা ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আবেদন করলে আদালত সেখান থেকে ১৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সব মিলিয়ে রাষ্ট্রপক্ষে আমরা ২২৫ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করি।’

আদালত সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করার পর আসামিপক্ষ সাক্ষীদের জেরা করেন। চলতি বছর ৩০ মে সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়। এরপর চলতি বছর ১২ জুন থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গত ১২ জুলাই থেকে আসামিপক্ষে ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দেন। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ তাদের জেরা করি, যা গত ১১ অক্টোবর সম্পন্ন হয়। কোনো কোনো আসামির সাফাই সাক্ষ্য তাদেরই বিরুদ্ধে গেছে।

রেজাউর রহমান আরও বলেন, মামলা দুটির সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে চারজন আসামি চারবার উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন। সেখানে ২৯৪ কার্যদিসব সময় ব্যয় হয়।

সিনিয়র এই আইনজীবী বলেন, তৎকালীন সরকার গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, এনএসআই, সিআইডি ও পুলিশকে ২১ আগস্ট ঘটনায় ব্যবহার করেছিল। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জঙ্গি সংগঠন ছাড়াও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়েরও সম্পৃক্ততাও ছিল।

যুক্তিতর্কে রেজাউর রহমান বলেন, এই অপরাধ সংগঠনের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ৫টি জঙ্গি সংগঠন জড়িত ছিল। এ ছাড়া তৎকালীন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামি সরকারও জড়িত ছিল। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ৫টি জঙ্গি সংগঠন হলো, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ, কাশ্মীর ভিত্তিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদীন, তেহেরিক ই জিহাদী আল ইসলাম, পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন লস্কর-ই-তায়েবা ও আরাকানের রোহিঙ্গাভিত্তিক সংগঠন আরএসও।

মামলাটিতে দোষ স্বীকার করে ১২ জন আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ১৩টি জবানবন্দি দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধান কৌসুলি বলেন, ‘তাদের মধ্যে জঙ্গি মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সি দুটি জবানবন্দি দেন।’ এ সময় তিনি মুফতি হান্নানের জবানবন্দির আংশবিশেষ উপস্থাপন করে বলেন, মুফতি হান্নানের জবানবন্দির সমর্থন করে রাষ্ট্রপক্ষে ৮ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস, মোশাররফ হোসেন কাজল ও ইকরাম উদ্দিন শ্যামল।

মামলার আসামিদের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছে। পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী, লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা- সিআইডির সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদসহ মোট আটজন জামিনে রয়েছেন। আর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এটিএম আমিন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন পলাতক।

এ ছাড়া তিনজন আসামি জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুফতি হান্নান ও শরীফ সাইদুল আলম বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। গ্রেনেডের স্পিøন্টারের আঘাতে আহত হন কয়েক শতাধিক। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

(ঢাকাটাইমস/৮নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি

কক্সবাজারে কতজন রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

সাউথ এশিয়ান ল' ইয়ার্স ফোরাম ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল চ্যাপ্টারের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন

আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় চট্টগ্রামের ডিসি এসপিসহ চার জনকে হাইকোর্টে তলব

১১ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি ২৯ জুলাই

২৮ দিন পর খুলল সুপ্রিম কোর্ট

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা: পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি

বোট ক্লাব কাণ্ড: পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন

সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খেয়েছিলেন পরীমনি, পার্সেল না দেওয়ায় তাণ্ডব

বোট ক্লাব কাণ্ড: প্রতিবেদন দিল পিবিআই, ব্যবসায়ী নাসিরের মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন পরীমনি?

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :