আ.লীগ নেতাকে স্কুল কমিটির সভাপতি বানাতে...

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর ২০১৭, ২২:২০

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার একটি স্কুলে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বানাতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সভাপতি নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর দিন আবার সভা ডেকে সেখানে নতুন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত দেখানো হয়েছে ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে।

ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলায় জাগির উচ্চ বিদ্যালয়ে। সভাপতি নির্বাচনের পরদিন নতুন নির্বাচন দেখিয়ে সভাপতি করা শামিম আহমেদ মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য। তিনি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহেদ মালিক স্বজনের ফুপাত ভাই।

মঙ্গলবার বিকালে স্কুলের দাতা সদস্য রাকিব আহম্মেদ স্কুলটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু একদিনের মাথায় বুধবার আবার নির্বাচন দেখিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের ফুপাতো ভাই শামিম হোসেনকে ওই স্কুলের সভাপতি বানানো হয়।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা জানান, গত তিন নভেম্বর স্কুলের অভিবাবক সদস্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে ১৪ জন অভিভাবক অংশগ্রহণ করে পাঁচজন সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া শিক্ষক প্রতিনিধি ছিলেন তিনজন এবং স্কুলের দাতা সদস্য হিসেবে ছিলেন একজন। মোট নয়জন সদস্য নিয়ে মঙ্গলবার সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নির্বাচন হয়।

এ নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন রমা শিকদার। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফনিন্দ্র চন্দ্র বারইয়ের উপস্থিতিতে সব সদস্যের সম্মতিতে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নির্বাচিত হন স্কুলের দাতা সদস্য রাকিব আহম্মেদ। কিন্তু সিদ্ধান্তগুলো লিখিত আকারে নথিবদ্ধ করা হয়নি।

এরপর বুধবার নয়জন সদস্যর পাঁচজনের উপস্থিতিতে আবার নির্বাচন দেখিয়ে জাগির ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ শামিম হোসেনকে স্কুলের সভাপতি নির্বাচিত দেখানো হয়।

বিকাল চারটায় সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফনিন্দ্র চন্দ্র বারই এবং সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে অফিসে বসে আছেন শামিম হোসেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে এক এক করে আসতে থাকেন স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. আসলাম, হাবিবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম রউফ, আসাদুল হক ও সালমা বেগম।

পরে সভাপতি নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করেন মঙ্গলবারের নির্বাচনের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা রুমা শিকদার। অভিভাবক সদস্য রফিকুল ইসলাম রউফ সভাপতি হিসেবে শামিম হোসেনের নাম প্রস্তাব করেন। আরেক অভিভাবক সদস্য হাবিবুর রহমান সমর্থন করলে উপস্থিত সব সদস্য একমত পোষণ করে সভার কার্যক্রম দ্রুত শেষ হয়।

এ ব্যাপারে দাতা সদস্য ও মঙ্গলবারের নির্বাচনে সভাপতি রাকিব আহম্মেদ বলেন, আমি নোটিশ পেয়ে মঙ্গলবার সভাপতি নির্বাচনের সভায় উপস্থিত ছিলাম। সেখানে উপস্থিত আট সদস্যর সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু রাত সাড়ে আটটার দিকে সদস্য সচিব স্কুলের প্রধান শিক্ষক টেলিফোনে আমাকে জানান- বুধবার বিকাল তিনটার সময় আবার সভা ডাকা হয়েছে। পরে জানতে পারি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর ফুপাতো ভাই শামিমকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে।

রাকিব বলেন, এটা অবৈধ, নিয়মবহির্ভূত। এ ধরনের সভা ডাকতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে লিখিত নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু আমি কোন নোটিশ পাইনি।

তিনি বলেন, আজকের সভায় যে পাঁচজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন তাদের মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে সমর্থন দিতে রাখা হয়েছে।

সভায় উপস্থিত পাঁচ সদস্যর তিনজনই নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাকিব আহম্মেদ হলে স্কুলসহ তাদের জন্য ভাল হতো।

তাহলে আজকের সভায় কেন উপস্থিত ছিলেন- এমন প্রশ্নে একজন বলেন, শামিম হোসেন ও তার আপন ভাই আওয়ামী লীগের নেতা। তার মামাতো ভাই স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। সভায় আমরা না গেলে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করতে পারত। এ কারণে আমরা সেখানে গিয়ে তাকে সমর্থন দিয়েছি।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে শামিম হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমাকে বৈধভাবে স্কুলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। আজকের নির্বাচনে কোন অনিয়ম হয়নি।

তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভার সদস্য সচিব ফনিন্দ্র চন্দ্র বারই বলেন, মঙ্গলবার একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সভায় উপস্থিত আটজন সদস্যের সর্বসম্মতিতে রাকিব আহম্মেদকে স্কুলের ম্যনেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে প্রিজাইডিং কর্মকতা সেই সভা বাতিল করে বুধবার নতুন সভা আহ্বান করেন। এ সভায় উপস্থিত পাঁচ সদস্যের সবার সম্মতিতে শামিম হোসেনকে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নতুন সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

জানতে চাইলে এই নির্বাচনের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা রুমা শিকদার বলেন, অসুস্থতার কারণে আগের দিন মঙ্গলবারের সভা স্থগিত রেখে পরের দিন বুধবার আবার সভা ডেকেছি। এ নির্বাচনে কোন অনিয়ম হয়নি।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদৎ খন্দকার বলেন, জাগির উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে, এমন অভিযোগ আমরা পাইনি। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/৮নভেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :