রংপুর-২: ডিউকদের পরিবারে জাপা-আ.লীগের তিন সম্ভাব্য প্রার্থী

রফিকুল ইসলাম রফিক, রংপুর
 | প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:১২

বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-২ আসনে এবার সাংসদ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকদের পারিবারিক লড়াই দেখা যেতে পারে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রধান তিনজনই এই পরিবারের। মনোনয়ন কিংবা নির্বাচনে তারা কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ বলে এখন পর্যন্ত জানা যাচ্ছে। পারিবারিক এই দ্বন্দ্বের সুযোগ কাজে লাগাতে চায় দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।

এই আসনটি এ-যাবৎ কখনো টানা আওয়ামী লীগের আবার কখনো জাতীয় পার্টির ঘরে ছিল। বর্তমান এমপি বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডিউক এবারও নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন চাইবেন।

নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য দলের মনোনয়ন চাইবেন তার চাচাতো ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসানুল হক চৌধুরী টুটুলও।

আর ডিউকের চাচা উপজেলা জাপার সভাপতি আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলুকে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

দুই ভাই আর চাচা নিজেদের কর্মী-সমর্থক নিয়ে কাজ করছেন আগাম নির্বাচনী মাঠে। সব মিলে আওয়ামী লীগ ও জাপার আধা ডজন সম্ভাব্য প্রার্থী এখন মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা রয়েছেন বিপাকে। তারা কার পক্ষে কাজ করবেন সে নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব।

অন্য প্রধান দল বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থী- সাবেক এমপি (জাপা) পরিতোষ চক্রবর্তী, সাবেক এমপি (জাপা) মোহাম্মদ আলী সরকার ও হাইকোর্টের আইনজীবী গোলাম রসুল বকুল।

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে রংপুর-২ আসনটি দখলে ছিল আওয়ামী লীগের। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা প্রয়াত আনিছুল হক চৌধুরী পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ের পর যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এর আগে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর রংপুরের মানুষের আবেগ আর ভালোবাসা পুঁজি করে জেলে থাকা অবস্থায় ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে এমপি হন অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী। বর্তমানে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ওই সময় থেকে বৃহত্তর রংপুরের আসনগুলো এরশাদের দুর্গে পরিণত হয়। পর পর দুবার জাপার দখলে থাকে রংপুর-২ আসনটি। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসনটি আবার দখলে নেয় আওয়ামী লীগ।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের দাবি, রংপুরের বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জে এখন আর এরশাদের সেই জৌলুশ নেই। এটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। দলের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরাও তাতে চাঙ্গা।

এ অবস্থায় আবার দলের মনোনয়ন ও নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আশা পোষণ করছেন বর্তমান সাংসদ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক। তার দাবি, তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে দলের মধ্যে যত দ্বন্দ্ব ছিল সব মিটিয়ে দলকে সংগঠিত করেছেন। দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সব নেতাকর্মী তার সঙ্গে আছেন। অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে উন্নয়ন কাজ করেছেন তিনি।

বেশির ভাগ সময় তিনি এলাকায় থাকেন জানিয়ে ডিউক চৌধুরী বলেন, প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় যান জনসংযোগে। সাধারণ মানুষের জন্য তার ঘরের দরজা খোলা সব সময়। তাই তার বিশ্বাস, ‘আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তবে বিপুল ভোটে জয়লাভ করব আমি।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক চৌধুরী টুটুলও নিজের পক্ষে একই আশা পোষণ করেন। পাঁচবারের বিজয়ী বাবা আনিছুল হক চৌধুরীর উত্তরাধিকার হিসেবে তার পক্ষে একটা বিশেষ সুবিধা কাজ করবে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘তার (বাবা) উত্তসূরি হিসেবে আমিও সারা জীবন মানুষের সেবা করে যেতে চাই। এলাকার মানুষের বিপদে আপদে সব সময় জনগণ আমাকে কাছে পায়, তাই তারা আমাকে আগামী নির্বাচন এমপি হিসেবে দেখতে চায়।’ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দল আমাকে মনোনয়ন দিলে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করতে পারব।’

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য আরেক প্রার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও সাবেক রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. শাহ নওয়াজ আলি। দীর্ঘদিন বিভিন্ন উচ্চপদে কাজ করেছেন। বলেন, তার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই। এখন বাকি জীবনটা জনগণের সেবা করে যেতে চান। তাই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন। সে লক্ষ্য মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান। ক্ষমতাসীন দল থেকে আরো মনোনয়ন চাইবেন বিশ্বনাথ সরকার বিটু।

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য দুই প্রার্থী ডিউক চৌধুরী ও টুটুল চৌধুরীর চাচা আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী। তার মতে, রংপুর হলো জাপার দুর্গ। এখানে অন্য দলের কোনো স্থান নেই। তিনি বলেন, ‘আমি নেতাকর্মীদের নিয়ে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছি। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমি বিজয়ী হব।’

জাপা থেকে সাবলুর মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়ে গেলেও দলের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচন করবেন বলে নাম শোনা যাচ্ছে জাপার সাবেক এমপি আনিছুল ইসলাম মন্ডলের। আমেরিকা থেকে এসে তিনি ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে জাপা থেকে এমপি নির্বাচিত হন তিনি।

যদিও রংপুরের কোনো আসনে বিএনপি কখনো জয়লাভ করেনি, কিন্তু এবার দুই সাবেক এমপি রংপুর-২ আসনে দলটির মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন। দুজনই জাপার সাবেক নেতা।

সাবেক এমপি অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী এবার নির্বাচন করবেন বলে কাজ শুরু করে দিয়েছেন বেশ আগে। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি জয়লাভ করব। কারণ মানুষ বর্তমান সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’

একসময়ের জাপা নেতা সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকারও বর্তমানে বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন বলে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া হাইকোর্টের আইনজীবী বদরগঞ্জের তরুণ নেতা গোলাম রসুল বকুলের প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে গুঞ্জন। সম্প্রতি বকুল রঙিন পোস্টার ছাপিয়ে বিলি করেছেন বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ এলাকায়।

(ঢাকাটাইমস/১০নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

বিএনপির ভারত বিরোধিতা মানুষের কষ্ট বাড়ানোর নতুন সংস্করণ: নাছিম

ভোট ডাকাত সরকারকে সমর্থনকারী দেশের পণ্য বর্জন ন্যায়সঙ্গত: রিজভী

১১ মামলায় আগাম জামিন পেলেন বিএনপি নেতা বকুল

বর্তমান সরকার ভারতের অনুগ্রহে ক্ষমতায় বসে আছে: সাকি

জিয়াউর রহমান উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে: ওবায়দুল কাদের

রুহুল আমিন হাওলাদারের বড় ভাই সুলতান আহমেদ মারা গেছেন

গণতন্ত্রের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবো: মির্জা ফখরুল

বাসায় মেডিকেল বোর্ডের পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া

বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস: প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান

স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ নেই: মির্জা আব্বাস

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :