কিং খানের বেড়ে উঠা- ৩

ক্যান্সারে শাহরুখের বাবার মৃত্যু, শোকে বাকরুদ্ধ বোন

আমিনুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:১৬

১৯৭৮ সালে ১২ বছর বয়সী শাহরুখ প্রথম বাবার সঙ্গে পাকিস্তান যান। গন্তব্য ছিল পিতৃভূমি পাকিস্তানের পেশোয়ার নগরীর কিসসা খাওয়ানি বাজার। শাহরুখের পিতার সমস্ত আত্মীয়স্বজনের বাস সেখানেই। সেই ভ্রমণ শাহরুখ খুবই উপভোগ করেছিলেন। চাচাতো ভাইবোনেরা শাহরুখকে খুবই আদর করেছিলেন।

দুই বছর পর ১৯৮০ সালে পিতার সাথে আবার পাকিস্তান যান। হতদরিদ্র হয়ে পড়া শাহরুখের পিতার ইচ্ছা হলো-পেশোয়ারে তাঁর যে পৈত্রিক সম্পত্তি আছে এর কিয়দংশ যদি বিক্রি করে কিছু টাকা পয়সা নিয়ে আসতেন তাহলে পরিবারের এই দুঃসময়ে কিছু কাজে লাগত। সেবার শাহরুখ প্রচুর পাকিস্তানি চলচ্চিত্র দেখেন এবং খাইবার পাস পর্যন্ত ঘুরে দেখেন। কিন্তু আর যাই হোক, এবার শাহরুখ তার চাচাতো ভাই বোনদের মধ্যে আগের মতো আন্তরিকতা দেখলেন না। সবার মাঝেই এক ধরনের অস্বস্তি আর ফিসফাস লক্ষ্য করলেন তিনি। কেউ একজন শাহরুখকে চুপচাপ বলেই দিলেন, ‘তোমার পিতা যে সম্পত্তি বিক্রি করতে চায়, তাতে তোমার চাচারা মোটেও খুশি নয়।’

শাহরুখের বাবা ছিলেন উদাসীন প্রকৃতির কবি মানুষ। যখন দেখলেন তার রক্তের সম্পর্কের লোকজন তার এই বিপদের দিনে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারলেই খুশি, ভগ্নহৃদয়ে মনে অনেক কষ্ট নিয়ে ছেলেকে নিয়ে ভারত চলে আসলেন। ভারতবর্ষে তো আগে থেকেই নানার বাড়ি ব্যাঙ্গালোরের লোকজন ছাড়া শাহরুখের আর কেউ ছিল না, এবার যখন দেখলেন পাকিস্তানে তার পরিবারের লোকজন থেকেও নেই-প্রকৃত অর্থে পুরো পরিবারটি এবার অথৈ সাগরে পড়ল।

পাকিস্তান থেকে ফিরে আসার কয়েক মাস পরেই মীর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ওরাল ক্যান্সার হলো। জিহ্বাতে ঘা। কিছুই খেতে পারেন না। কাগজে লিখে লিখে কথা চালান। কয়েকদিন পর সে শক্তিও নেই। ইশারায় কথা চলতে লাগল। ২৪ ঘন্টাই শাহরুখ পড়ে রইলেন বাবাকে যত্ন করার জন্য। পুত্রের কাছে পিতা সবসময়ই সুপার হিরো। শাহরুখ ভাবতেন-নিশ্চয়ই তার বাবা সুস্থ হয়ে উঠবেন।

কিন্তু ছয় মাস রোগে ভোগে শাহরুখের বাবা দিল্লির সফদর জং হাসপাতালে রাত দুটোর দিকে মারা গেলেন। শাহরুখ ছিলেন কক্ষের একটু বাইরে। মা ফাতেমা ছিলেন স্বামীর শয্যাপাশে। ফাতেমা পুত্রকে নিজে এই সংবাদ দেননি। শুধু বললেন-‘তোমার বাবাকে দেখে এসো’। কক্ষে ঢুকে শাহরুখ বুঝে ফেললেন বাবার বিদায়ের অন্তিম মুহূর্ত এসে গেছে।

মা-ছেলে দুজন মিলে মীরকে বাড়িতে নিয়ে আসলেন। কি কঠিন সময়! পিতা-মাতা কারো পক্ষের একটা আত্মীয়স্বজনও নাই। কী পরিমাণ মানসিক শক্তি নিয়ে শাহরুখ বড় হয়েছিলেন এ ঘটনাতেই বোঝা যায়। এজন্যই তো তিনি হতে পেরেছিলেন বলিউড বাদশাহ।

এদিকে শাহরুখের বোন শাহনাজ দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়ে। ফাতেমা শাহরুখকে বললেন-শাহনাজকে নিয়ে আসতে। শাহনাজ ছিলেন পিতার নয়নমনি। শাহনাজের নামের শেষ অংশ হচ্ছে লালারুখ। শাহরুখ পিতা লালারুখ নামটি এতই পছন্দ করতেন যে-বন্ধু কানহাইয়া লালকে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন তার মেয়ের নাম যেন লালারুখ রাখে। যদিও কানহাইয়া বন্ধুর সে আবদার রাখেননি।

মা শাহরুখকে পরামর্শ দিয়েছিলেন শাহনাজকে বাবার মৃত্যুসংবাদ না জানাতে। শাহরুখ তাই করলেন। বাড়িতে এসে শাহনাজ দেখলেন তাঁর বাবা আর দুনিয়াতে নেই। অধিক শোকে পাথর হয়ে যান শাহনাজ। কান্নাকাটি করতে ভুলে গেলেন। প্রচণ্ড শোকে কোমাতে চলে গেলেন। আর সারাজীবনেও স্বাভাবিক হতে পারেননি। বিয়ে, পড়াশোনা আর কিছুই করতে পারেননি শাহরুখের বোন। অদ্যাবধি শাহরুখের সাথেই আছেন তার বোন। চুপচাপ হয়েই থাকেন সারাক্ষণ।

শাহরুখ তখন দিল্লির বিখ্যাত সেন্ট কলম্বা স্কুলের ছাত্র। সেন্ট কলম্বা হচ্ছে খুবই নামকরা একটি খ্রিষ্টান মিশনারি স্কুল। একথাটা জেনে রাখা ভালো বলিউডের তিন খানের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ছাত্র হচ্ছেন শাহরুখ খান। সালমান খান দশম শ্রেণি আর আমির খান একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। কিন্তু শাহরুখ খান লেখাপড়ার ছিলেন ক্লাসের সেরা ছাত্রদের মধ্যে একজন। শুধু তাই নয়, খেলাধুলায়ও তিনি স্কুলকে নেতৃত্ব দেন। স্কুলের হকি, ফুটবল ও ক্রিকেট এই তিন খেলাতেই তিনি স্কুলের অপরিহার্য সদস্য ছিলেন।

১৯৮৫ সালে শাহরুখ খান সেন্ট কলম্বা থেকে গ্রাজুয়েশন লাভ করেন। স্কুলের সর্বোচ্চ সন্মান ‘সোর্ড অব অনার’ পুরস্কারে তাকে ভূষিত করা হয়। জীবনের ১৩টি বছর সেন্ট কলম্বার মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাটানোর ফলে শাহরুখ বাকপটু, স্মার্ট, জ্ঞানী ও ফ্যাশন সচেতন হয়ে উঠেন, যা পরবর্র্তী বছরগুলোতে তাঁর জীবনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। আর দিল্লির মতো উদার ও মিশ্র সংস্কৃতির শহর শাহরুখের চিন্তাভাবনাকে মহৎ করেছে।

অভিনয়ে জড়িয়ে পড়া

‘তোমাকেই তো মানায় সিনেমাতে অভিনয় করা’- শাহরুখকে এই কথাটা প্রথম বলেছিলেন ব্যারি জন নামে এক ব্রিটিশ ভদ্রলোক। সেটা ছিলো ১৯৮৫ সালের কথা।

ষাটের দশকে আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব থেকে দলে দলে প্রচুর ভবঘুরে তরুণ-তরুণীরা ভারতে ঘাঁটি গড়তে আসলো। এই ভবঘুরেরাই হিপ্পি নামে পরিচিত। তখন আমেরিকায় হিপ্পি আন্দোলন ছিলো অত্যন্ত আলোচিত ঘটনা সারা দুনিয়া জুড়ে। পুঁজিবাদের ঘিনঘিনে রূপকে সহ্য করতে না পেরে একদল তরুণ-তরুণী যুদ্ধবিরোধী, সরকারবিরোধী, পুঁজিবিরোধী ও প্রতিষ্ঠানবিরোধী হয়ে পড়ে। এমনও হয়েছে আমেরিকাতে কোনো এক তরুণ বৈষয়িক সূত্রে হয়তো ১০ কোটি টাকার মালিক কিন্তু সে এসব ছেড়েছুড়ে ভারতের রাস্তায় গিটার বাজিয়ে টাকা তুলে খাবার খাচ্ছে। অবাধ স্বাধীনতাই ছিলো হিপ্পিদের প্রধান চাওয়া।

ব্যারি জন ছিলেন এমনই এক হিপ্পি। ব্যারি জন কোনো একটা উপলক্ষে ব্যাঙ্গালোর আসেন এবং পরে ভারতেই থেকে যান। তিনি গড়ে তোলেন Theatre Action Group নামে একটি নাট্যদল। `লেডি শ্রীরাম কলেজে’ পারফর্ম করতে আসে এই দল। শাহরুখকে পছন্দ করে ফেলেন ব্যারি জন। পাঁচ বছর এই দলে কাজ করে শাহরুখ শিখে ফেলেন অভিনয়ের খুঁটিনাটি।

Theatre Action Group এ কাজ করে দিনকাল চলে যাচ্ছিল শাহরুখের। যদিও অভিনেতা হবার বাসনা প্রবল, কিন্তু দিল্লি ছেড়ে মুম্বাই আসার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। তবে শাহরুখের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যায়, যার জন্য তিনি মুম্বাই আসতে বাধ্য হন। এবং সেটা অভিনয়ের কারণে নয়, সেটা হচ্ছে তার হিন্দুু ধর্মাবলম্বী প্রেমিকা গৌরি চিব্বাকে খুঁজতে। সময়কাল ১৯৯০ সালের শুরুর দিক।

(চলবে...)

ঢাকাটাইমস/১০নভেম্বর/এআই/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :