ভোল পাল্টালেন ট্রাম্প
প্রথা ভাঙার পালা শুরু হয়েছিল বুধবার থেকেই। গতকাল বৃহস্পতিবার সেই ‘ব্যতিক্রমী’ খাতেই বইল দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। সবার চোখ কপালে তুলে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর জন্য প্রশংসার ঝুলি উপুড় করে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টানা দু’ঘণ্টা কথা।
সফরের দ্বিতীয় দিনে বাণিজ্যে বেইজিংয়ের ‘বাঁধ ভাঙা সাফল্যের’ প্রশংসা করে ট্রাম্প বললেন, ‘সুবিধে নেয়ার জন্য চীনকে আমি দোষ দিই না!’ যা শুনে হতবাক অনেকেই। কারণ হোয়াইট হাউসে ঢোকার আগে এই ট্রাম্পই বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের দুর্নীতি নিয়ে ভয়ংকর সরব ছিলেন। প্রথম বার সেই চীনে পা রেখে ২৫ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্যিক চুক্তি সইও করে ফেললেন ট্রাম্প।
বেইজিং প্রসঙ্গে তার আপত্তির স্মৃতি ফিকে হওয়ার আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেন বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, তার ‘ভাবনা’ পাল্টে গিয়েছে।
প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি ধনকুবের ব্যবসায়ী ট্রাম্পের মনে হচ্ছে, দু’টো দেশ যে পথে ব্যবসা বাড়িয়েছে, তাতে চীন সুবিধে করে নিয়েছে। এর মধ্যে ত্রুটি খোঁজার কোনও মানেই হয় না!
ট্রাম্প বলেন, ‘দেশের নাগরিকদের ভালোর জন্য অন্য দেশকে পিছনে ফেলে যে এগিয়ে যেতে পারে, তাকে কি দোষ দেয়া যায়? আমি চীনকে কৃতিত্বই দিতে চাই।’
ট্রাম্প কাঠগড়ায় তুলছেন পূর্বতন প্রশাসনকে। সাফ বলেছেন, মার্কিন বাণিজ্যে ঘাটতির দায় অতীত প্রশাসনের।
ট্রাম্পের মুখে হাসি ফুটিয়ে বৃহস্পতিবারের সকালে শি জিনপিং বলেন, ‘চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রশান্ত মহাসাগরটা যথেষ্টই বড়!’ তারপরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার শপথ নিলেন দুই রাষ্ট্রনেতা।
তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের পশ্চিম কোণে ‘গ্রেট হল অব পিপল।’ সেই হল-এ একান্তে দুই ঘণ্টা বৈঠকের করেন তারা।
ট্রাম্প বললেন, ‘চীনের সঙ্গে আমরা একটা চনমনে বাণিজ্যিক সম্পর্কে যেতে চাইছি। আমরা চাই পারস্পরিক স্বচ্ছ সম্পর্ক।’
এত দিন বেইজিং-ওয়াশিংটনের সম্পর্কের ভারসাম্যে কোথাও যে একটা গলদ ছিল তা মেনে নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য, ‘আজ শি-এর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। ব্যবসা ক্ষেত্রে যে বিপুল সমস্যা আছে, তা দূর করতে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করা দরকার।’
ট্রাম্পের সুর এতটুকু না কেটে শি বলে গেলেন, ‘দুটি আলাদা দেশ। একটা বিষয়ে দু’দেশের পৃথক মত থাকতেই পারে। সেটাই স্বাভাবিক। সেই পার্থক্য মেনে ঠিকঠাক এগিয়ে যাওয়াটাই আসল চাবিকাঠি।’
ব্যবসায়িক সম্পর্কের পাশাপাশি ট্রাম্পের ১৩ দিনের এশিয়া সফরে উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে মাথাব্যথাও রয়েছে পূর্ণ মাত্রায়।
বেইজিং-কে সে কথা মনে করিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার মোকাবিলা করতে বিশ্বের সব সভ্য দেশের একজোট হওয়া দরকার।’ কিম জং উনের দেশের নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের অবস্থান বদল হয়েছে, এমন ইঙ্গিত আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়া যায়নি।
শি বলেন, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র কোরীয় উপদ্বীপে স্থিতিশীলতা দেখতে চায়। উত্তর কোরিয়ার ওপরে জাতিসংঘের সদ্য চাপানো নিষেধ যাতে ঠিকমতো প্রয়োগ হয়, সে ব্যাপারে নজর রাখার আশ্বাসও দিয়েছে বেইজিং।
(ঢাকাটাইমস/১০নভেম্বর/এসআই)