আসব বলেও এলেন না তিনি

মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:৪৯ | প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:০৬

ছুটিতে দেশে ছাড়ার আগ মুহূর্তে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে পদত্যাগকারী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনা বলেছিলেন, তিনি পালিয়ে যাচ্ছেন না, অবশ্যই দেশে ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি এলেন না। কানাডার টরেন্টোতে তার জন্য বাড়ি ভাড়া করা হয়েছে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠানোর আগেই।

বাংলাদেশের কোনো প্রধান বিচারপতি এই প্রথম দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদ ছাড়লেন। তিনি দেশে ফিরে এসে এগুলো মোকাবেলা করলে তার পদের জন্যই ভালো হতো বলে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন একাধিক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। তবে সংবেদনশীল বিধায় নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেছেন সবাই।

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা মামলার কারণে। এই মামলার শুনানি আদালতে চলাচালে বারবার তার নানা মন্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। আর বিচারকের অপসারণক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে নেয়ার বিধান করে করা এই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায়ে যেসব মন্তব্য করা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তুমুল বিতর্ক থামেনি এখনও।

প্রধানমন্ত্রী, সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা তো বটেই, সাবেক একজন প্রধান বিচারপতিও এসব মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনুরাগ বা বিরাগ থেকে এই রায় দেয়া হয়েছে কি না, আর এতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে সিনহার শপথ ভঙ্গ হয়েছে কি না, এটি খতিয়ে দেখার পরামর্শও এসেছে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের কাছ থেকে।

এই রায়ে জাতীয় সংসদ, শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে নানা বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননার অভিযোগও করেছে আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি এই রায়কে সাহসী আখ্যা দিয়ে বিচারপতি সিনহার পক্ষে দাঁড়িয়েছে।

কেবল এই মামলার রায় নিয়ে নয়, সিনহাকে নিয়ে বিতর্ক হয়েছে তার ছুটির আবেদন নিয়েও। এসব নানা প্রতিক্রিয়ার মধ্যে অক্টোবরের ২ তারিখ জনাব সিনহা হঠাৎ এক মাসের ছুটির আবেদন করেন রাষ্ট্রপতির কাছে। ওই আবেদনে তিনি স্পষ্টতই তার শারীরিক অসুস্থতার কথা বলেন। কিন্তু ১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়ার সময় তিনি গণমাধ্যম কর্মীদেরকে জানান, তিনি অসুস্থ নন।

বিচারপতি সিনহার এই মন্তব্যে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। কারণ, বিএনপি আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছিল, ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ের কারণে প্রধান বিচারপতিকে চাপ দিচ্ছে সরকার।

বাইরে যাওয়ার আগ মুহূ্র্তে সিনহা এমনও বলেন, ‘আমি পালিয়ে যাচ্ছি না, আবার ফিরে বিচারকাজে অংশ নেবো।’ কিন্তু তিনি কেন এই কথা রাখলেন না, সেটির কোনো ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি তার পক্ষ থেকে।

কানাডাভিত্তিক অনলাইন সংবাদপত্র নতুন দেশ জানিয়েছে, দেশটির টরেন্টো শহরে একটি বাড়ি ভাড়া করা হয়েছে সিনহার জন্য। আর তার পদত্যাগপত্র দূতাবাস মারফত রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর আগেই এই বাড়ি ভাড়া করা হয়। অর্থাৎ ছুটি শেষ হওয়ার আগেই তার দেশে না ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

প্রধান বিচারপতির মতো পদে থেকে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে দুই বার দুই ধরনের বক্তব্য আসার পর দেশে ফেরার কথা না রাখার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে অন্য একটি কারণে।

বিচারপতি সিনহা দেশের বাইরে যাওয়ার পরদিন ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিবৃতি দিয়ে জানান হয়, সদ্য পদত্যাগী প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারসহ ১১টি গুরুতর অভিযোগ আছে। এগুলো দুর্নীতি দমন কমিশন খতিয়ে দেখবে বলেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন।

সিনহা দেশে ফিরলেও এসব অভিযোগের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত তার পদে বসার সুযোগ ছিল না বলে জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও একই কথা বলেন। কারণ, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ পাঁচ জন বিচারপতি তার সঙ্গে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

সিনহার প্রধান বিচারপতি হিসেবে মেয়াদ ছিল আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তিনি তার চেয়ারে না বসতে পারলেও তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের বিষয়ে অন্তত তার বক্তব্য জানা যেত, এ জন্য গণমাধ্যম কর্মীদেরও আগ্রহ ছিল তার দেশে ফেরার বিষয়ে।

তবে প্রধান বিচারপতির পদের কথা ভেবেই বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সতর্ক সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ইউসূফ হোসেন হুমায়ূন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ তার ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি হয়তো মনে করছেন, দেশে ফিরলে অন্য বিচারপতিরা যদি তার সঙ্গে না বসেন তাহলে তিনি কীভাবে কাজ করবেন। বিষয়টি হয়তো বিব্রতকর। হবে। এই জন্যই হয়ত তিনি পদত্যাগ করেছেন।’

জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দেখুন তার (এস কে সিনহা) অধ্যায় শেষ। এখন আর এনিয়ে কথা বলতে চাই না।’

সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, ‘এস কে সিনহার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার মধ্যে যেগুলো আর্থিক অনিয়ম সংশ্লিষ্ট, সেগুলো দুদক অনুসন্ধান করতে পারে।’

ঢাকাটাইমস/১১নভেম্বর/এমএম/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :