বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে আইন চলবে ‘নিজস্ব গতিতে’

মোসাদ্দেক বশির, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:০১ | প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:৪০

প্রধান বিচারপতির পদ ছাড়লেও সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বলেছেন, রাষ্ট্রপতি এখন নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। তার আগ পর্যন্ত অস্থায়ী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আবদুল ওয়াহহাব মিঞা।

গত ১৩ অক্টোবর এক মাসের ছুটিতে দেশের বাইরে যাওয়ার আগেই সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আর দেশে ফিরবেন কি না, সে নিয়ে গুঞ্জন ছিল। তবে যাওয়ার আগে তিনি বলে যান, ‘আমি পালিয়ে ‍যাচ্ছি না, আবার ফিরে বিচারকাজে অংশ নেবো।’

অবশ্য দেশ ছাড়ার পর দিন সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে বিদেশে অর্থপাচারসহ সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগের কথা জানান হয়। এরপর তার দেশে ফেরা বা না ফেরা নিয়ে নিয়ে আবারও নতুন গুঞ্জন শুরু হয়।

সিনহা ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে যান চিকিৎসার জন্য। তিনি যখন সেখানেই অবস্থান করছেন, তখন কানাডার টরেন্টো শহরে তার জন্য বাড়ি ভাড়া করা হয়। সেখানে থাকেন তার মেয়ে।

এর মধ্যে শুক্রবার রাত থেকেই প্রচার চলে যে পদত্যাগ করেছন সিনহা শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপতির দপ্তর। জানান হয়, সিঙ্গাপুর দূতাবাসের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন সদস্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি।

সিঙ্গাপুর থেকে সিনহা কানাডায় পৌঁছেছেন এরই মধ্যে। তবে তিনিও সেখানে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কারও সঙ্গে তিনি কথা বলছেন না বলে জানিয়েছে কানাডা থেকে প্রকাশিত অনলাইনভিত্তিক বাংলা গণমাধ্যম নতুন দেশ।

সিনহা দেশে ফিরেননি, তাহলে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের কী হবে-এই বক্তব্য জানতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসায় ছুটে যান গণমাধ্যমকর্মীরা। এই প্রশ্নে মন্ত্রীর জবাব আসে খুবই সংক্ষিপ্ত। তিনি বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’

সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সদ্য পদত্যাগকারী প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার মধ্যে যেগুলো দুর্নীতি দমন কমিশনের আওতাভুক্ত, সেগুলোর বিষয়ে তারা অনুসন্ধান করতে পারে। এর সত্যতা পেলে মামলা করতে পারে।’

অবশ্য এই কথা আইনমন্ত্রী বলেছিলেন গত ১৫ অক্টোবরেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত দুদক সে অনুসন্ধান শুরু করেনি। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর ক্ষেত্রে আইনি কোনো সমস্যা আছে কি না, এ নিয়ে চিন্তিত ছিল সংস্থাটি। তবে তিনি পদত্যাগ করায় এখন আর কোনো সমস্যা হবে না বলেই মনে করছেন কর্মকর্তারা।

সিনহার পদত্যাগের পর এখন তার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। এই নিয়োগ না নেয়া পর্যন্ত ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি তার দায়িত্ব পালন করবেন।’

সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি স্বাধীন। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী বা কারও সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে না তাকে।

বিচারপতি সিনহার ছুটি অনুমোদন হওয়ার পর থেকেই আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে বিচারপতি সিনহা কেন পদত্যাগ করলেন, সে কারণ জানাতে পারেননি আইনমন্ত্রী। বলেন, ‘তিনি পদত্যাগ করেছেন, সেটি আমি রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে শুনেছি। তবে এখনো তার পদত্যাগপত্র পড়িনি, তাহলে তাকে কী করে বলব তিনি কী কারণ উল্লেখ করেছেন?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নুল আবেদিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা ছুটির দিন বলে এখনো তার ফাইল খুলিনি। তিনি যেভাবে দিয়েছেন, সেভাবেই আছে। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’

সিনহার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ

গত ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাঠানো বিবৃতিতে সে সময়ের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগের কথা জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলন প্রভৃতি।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছাড়া আপিল বিভাগের অন্য পাঁচ বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। বিচারপতি মো. ইমান আলী দেশের বাইরে থাকায় ওই আমন্ত্রণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেদিন তিনি বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সংবলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন।

বিচারপতি মো. ইমান আলী ঢাকায় ফেরার পর পাঁচ নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধান বিচারপতির বাসভবনে যান। কিন্তু তার কাছ থেকে কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর পাওয়া যায়নি। পরে প্রধান বিচারপতিকে পাঁচ বিচারপতি জানিয়ে দেন যে, অভিযোগগুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।

এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে এ ব্যাপারে পরের দিন ২ অক্টোবর তিনি তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে সেদিন বিচারপতিদের কোনো কিছু না জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটির দরখাস্ত দেন পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি সিনহা।

(ঢাকাটাইমস/১১নভেম্বর/এমএবি/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :