ডাকাতদের গুলিতে তিনজন নিহতের ঘটনায় মামলা, বিয়ে স্থগিত

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:৪৭

বুধবার রাত আড়াইটার দিকে চরভদ্রাসনে এবং সাড়ে তিনটার দিকে পাশের সদরপুর উপজেলায় দুটি ডাকাতি ও ডাকাতদের হাতে তিনজন গ্রামবাসীর নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি থানায় ডাকাতিসহ হত্যার অভিযোগে দুটি মামলা করা হয়েছে।

এ তিনটি হত্যাকাণ্ডসহ ডাকাতির সাথে জড়িত কাউকে গত ৩৬ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ বলেছে, ডাকাত দলকে ধরতে তিনটি থানার পুলিশ সম্মিলিত অভিযান শুরু করেছে।

এদিকে বিয়ে বাড়িতে ডাকাতি ও দুই গ্রামবাসীকে হত্যার ঘটনার ফলে চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের চরভদ্রাসনের আব্দুল গফুর মৃধার ডাঙ্গি গ্রামে শামসুল ফকিরের ছেলে প্রবাসী সোহরাবের সাথে পাশের বাড়ির হামজেল ফকিরের মেয়ে রুনা আক্তারের বিয়ে স্থগিত হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার এ বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু বুধবার রাতে বরের বাড়িতে ডাকাতি ও দুই গ্রামবাসীর নিহত হওয়ার ঘটনায় স্থগিত করা হয় বিয়ে।

সাত বোন ও চার ভাইয়ের আদরের ছোট বোন রুনা। কত স্বপ্ন কত আশা নিয়ে ঘর বাঁধতে যাচ্ছিল সে। নিয়তির নির্মম পরিহাস। বুধবার রাতে ডাকাতির ঘটনায় স্থগিত হয়ে গেল তার সংসার গড়ার স্বপ্ন। ঘরের কোনায় চুপচাপ বসে আছে রুনা।

শনিবার দুপুরে চরভদ্রাসন উপজেলার সদর ইউনিয়নের আব্দুল গফুর মৃধা ডাঙ্গী গ্রামের হামজেল ফকিরের বাড়িতে দেখা গেল এমনই এক দৃশ্য।

রুনার মা রাহেলা বেগম বলেন, ‘আমাগো সব শেষ কইরা থুইয়্যা গেছে ডাকাতের দল। বিয়ায় আসা সব মেহমানও চইলা গেছে। এদিকে দুই দুইডা তাজা জান হারায় গেল। কি করুম দিশা পাইতেছি না।’

রুনার বাবা হমজেল ফকির জানান, ‘নিহত সাজ্জাত আর সেন্টুর জন্য দোয়া মাহফিল হইব- তারপর সবার সাথে পরামর্শ করে ঘরোয়াভাবে মেয়ে দিয়া দিমু।’

অপর দিকে বর সোহরাবদের বাড়িতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। সোহরাবের বাবা সামচেল ফকির বলেন, ‘বিয়েতে মেহমানদারি করার জন্য আনা গরুটি শুক্রবার চরভদ্রাসন হাটে বিক্রির করে দিয়েছি। আমার তিন নগদ লক্ষসহ প্রায় ছয় লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে ডাকাতরা। আমি সর্বশান্ত হয়ে গেছি।’

এছাড়া গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম।

সোহরাবের চাচতো ভাই ওই গ্রামের বাসিন্দা অটোচালক বাবুল ফকির বলেন, ‘চরভদ্রাসনে আগে কখনও এত বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। কাজে যেতে পারছি না।’

চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাম প্রসাদ ভক্ত বলেন, ডাকাতিসহ হত্যার ঘটনায় সামচেল ফকির বাদী হয়ে অজ্ঞাত বিশজনের নামে দুটি খুন ও ডাকাতির মামলা করেছে। আমরা আসামিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, চরভদ্রাসন ও সদরপুরে তিনটি হত্যাকাণ্ডসহ ডাকাতির সাথে জড়িত দলকে গ্রেপ্তারের জন্য সদরপুর, চরভদ্রসন ও পাশে মাদারীপুরের শিবচর থানার পুলিশ গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে সম্মিলিত অভিযান শুরু করেছে। তবে শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

তিনি বলেন, ডাকাতের হাতে নিহত সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের শয়তানখালী গ্রামের আব্দুল মালেককে হত্যার ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মজিবর খান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ডাকাতদলের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ডাকাতির অভিযোগে একটি মামলা করেছেন।

প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের আব্দুল গফুর মৃধার ডাঙ্গি গ্রামে বিয়ে বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ও ডাকাতের গুলিতে দুইজন নিহত হন। ওই রাতেই পাশের সদরপুরের ঢেউখালী ইউনিয়নের শয়তানখালী গ্রামে ডাকাতের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। দুটি ঘটনাতেই ডাকাতদলের সদস্যরা পদ্মা নদী দিয়ে স্প্রিটবোটে করে এসেছিল। ডাকাতি করে পালিয়ে পাওয়ার সময় গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে গুলি ছোড়ে ডাকাতদলের সদস্যরা।

(ঢাকাটাইমস/১১নভেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :