বাঁশি বিক্রিতেই চলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আলী আকবরের জীবন

আতাউর রহমান সানী, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
 | প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৪৫

ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে না নিয়ে বাঁশি বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আলী আকবর। নরসিংদী জেলার গ্রাম চুলা এলাকায় জন্ম তার। আলী আকবর জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তার বাবা একজন কৃষক হওয়ার কারণে তাকে ছোট বেলা থেকেই অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। প্রতিবন্ধী স্কুলে পড়ানোর মতো সামর্থ্য আলী আকবরের বাবার ছিল না। তাই আলী আকবরের স্কুলে যাওয়া হয়নি। দুই চোখে কিছুই দেখতে পান না তিনি।

ছোট বেলা থেকেই গান, বাঁশি ও তবলা বাজানোর প্রতি অসীম আগ্রহ ছিল আকবরের। এ কারণে এলাকার এক উস্তাদের কাছে তিনি গান, বাঁশি ও তবলা বাজানোর তালিম নেন। পরিবার ও ভাইদের অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার হওয়া আলী আকবর রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকার উস্তাদ সূন্দর আলী দেওয়ানের কাছে এসে গান, বাঁশি ও তবলা বাজানো শেখা শুরু করেন। এর পর থেকেই আলী আকবর বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠানে গান ও বাঁশি বাজাতেন।

আলী আকবরের ওস্তাদ সুন্দর আলী দেওয়ান জানান, হিন্দু থেকে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করায় আলী আকবরের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়। সুন্দর আলী দেওয়ানের ছাত্রী শিরিনা আক্তারকে ভালবেসে বিয়ে করেন আলী আকবর। বিয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই শিরিনা হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এর পর থেকেই আলী আকবর একা হয়ে পড়েন। আলী আকবর জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে বাঁশি বাজান। যখন কোন অনুষ্ঠান থাকে না তখন বেড়িয়ে বাঁশি বিক্রির জন্য। আলী আকবরের গান ও বাঁশি বাজানো মনোমুগ্ধকর বাঁশি শুনে অনেকেই বিমোহিত হয়েছেন।

আলী আকবর জানান, ছোট বেলা থেকেই দারিদ্রের মাঝে বড় হয়েছেন। এছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে জীবনে তাকে কম অবহেলার শিকার হতে হয়নি। তিনি সবসময় মানুষের কাছে অবহেলার পাত্র হিসেবে ছিলো। এছাড়া তার ভাইয়েরা তাকে কানা বলে বিভিন্ন সময় উপহাস করত। মুসলমান ধর্মের এক মেয়েকে ভালবেসে বিয়ে করার জন্য হিন্দু থেকে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করার তার পরিবার তাকে সকল সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে।

তারপরও হেরে যাননি আলী আকবর। ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে না নিয়ে বাঁশি বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতিদিন রূপগঞ্জ ফেরিঘাটসহ বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ডে বাঁশি বাজিয়ে বাজিয়ে বিক্রি করেন। বাঁশি বিক্রি করে আলী আকবরের একার সংসার বেশ ভালভাবেই চলে যায়।

আলী আকবর আরো বলেন, আমি প্রতিবন্ধী বলে নিজেকে কখনো ছোট মনে করিনি। আমার প্রতিবন্ধকতা আমার দুর্বলতা নয়, বরং এটাই আমার অস্ত্র।

আলী আকবরের মতো যারা প্রতিবন্ধী আছে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তার মতো যারা প্রতিবন্ধী আছে- তাদের ভিক্ষা না করে আমার মতো কোন না কোন কাজ করা উচিত। জীবনে চলতে চলতে গেলে অনেক বাধা বিপত্তি আসবে, তাই বলে থেমে থাকলে চলবে না।

(ঢাকাটাইমস/১১নভেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :