ধাতবমুদ্রার দুর্দিন কেন?

সৈয়দ রশিদ আলম
| আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০১৭, ১১:১০ | প্রকাশিত : ১৩ নভেম্বর ২০১৭, ১২:৪০

জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রায় দেখতে পাওয়া যায় সারাদেশে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বস্তা বস্তা ধাতব মুদ্রা নিয়ে বসে আছেন। কিন্তু কোন ক্রেতার কাছে এই ধাতব মুদ্রা দিতে পারছেন না। স্থানীয় বেসরকারী ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ পাওয়ার পরও ধাতবমুদ্রা নিতে আগ্রহী নন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সারা পৃথিবীতে ধাতবমুদ্রার প্রচলন রয়েছে। ইউরোপের যে কোন দেশে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান এর মতো উন্নত দেশগুলোতে এখনো প্রত্যেকই ধাতব মুদ্রা দ্বারা পণ্য বেঁচা-কেনায় ব্যবহার করছেন। কোন কোন দেশে ব্যাংক নোট দিয়ে আপনি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারবেন না, যদি আপনার কাছে ধাতবমুদ্রা না থাকে। অর্থাৎ বাধ্যতামূলক ভাবে উন্নত দেশের নাগরিকরা ধাতবমুদ্রা ব্যবহার করছেন।

সারা পৃথিবীর সব মুদ্রা জাদুঘরগুলোতে প্রাচীন যুগের ব্যাংক নোটের চাইতে ধাতবমুদ্রা বেশি প্রদর্শন করা হয়। যখন ব্যাংক নোটের কোন অস্তিত্ব ছিল না তখন ছিল ধাতবমুদ্রার অস্তিত্ব। তখন পাঞ্চমার্ক নামে ধাতবমুদ্রার প্রচলন ছিল। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রায় দু’বছর আগে এক অনুষ্ঠানে হঠাৎ বলে বসলেন ১ টাকা, ২ টাকা ও ৫ টাকার কোন প্রয়োজন নেই। এরপর থেকে এক টাকা, দুই টাকা ও পাঁচ টাকার ধাতব মুদ্রা নিতে অনেকেই আর আগ্রহী নন। ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করলে প্রাচীন যুগের সব ধরনের ধাতবমুদ্রা দেখতে পাবেন।

দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের দেশের তৈরি করা এক পঁয়সা, পাঁচ পঁয়সা, দশ পঁয়সা, পচিশ পঁয়সা ও পঁঞ্চাশ পঁয়সার সাথে নতুন প্রজন্মের কেউ পরিচিত নন। টাকা জাদুঘর ডোনার ক্লাব নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের ধাতবমুদ্রা উপহার দিয়ে মুদ্রার সাথে পরিচিত করে তুলছেন। এর ফলে অনেকেই বাংলাদেশের ধাতবমুদ্রা সংগ্রহের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন, সংগ্রহ শুরু করেছেন। এক টাকা, দুই টাকা ও পাঁচ টাকার ধাতবমুদ্রা বৈধ ভাবে সারা বাংলাদেশে ব্যবহারের কথা রয়েছে কিন্তু অনেকেই ধাতব মুদ্রা নিতে আগ্রহী নন। যেকারণে আমরা শুরুতেই বলেছি বস্তা বস্তা ধাতব মুদ্রা রাখা আছে কিন্তু ক্রেতা নেই।

বাংলাদেশের এক টাকা, দুই টাকা ও পাঁচ টাকার ধাতব মুদ্রা সারা পৃথিবীর সব মুদ্রা জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। সারা পৃথিবীর মুদ্রা সংগ্রাহকরা বাংলাদেশের দৃষ্টিনন্দন ব্যাংক নোটের সাথে সাথে বাংলাদেশের ধাতবমুদ্রা সংগ্রহ করছেন। কিন্তু বৈধভাবে চালু থাকা সত্ত্বেও সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশের দৃষ্টিনন্দন ধাতব মুদ্রার নেওয়ার ব্যাপারে অনেকেরই আগ্রহ খুবই কম। প্রচার মাধ্যমে বিশেষ করে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বাংলাদেশের ধাতব মুদ্রা ব্যবহারের উপর যদি পরামর্শ দেওয়া হয় তাহলে ফলাফল ইতিবাচক হবে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিতে পারেন। একটি দেশের ব্যাংক নোটের স্থায়ীত্ব যতটা ধাতব মুদ্রার স্থায়ীত্ব অনেক অনেক বেশি। যেকারণে সারা পৃথিবীতে ধাতবমুদ্রাকে ব্যাংক নোটের চাইতেও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমরা আশাবাদী সারা বাংলাদেশে আমাদের ধাতবমুদ্রা ব্যবহার অনেকটা বেড়ে যাবে, এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কিছু দিন পর পর বাংলাদেশের ধাতবমুদ্রা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশের ধাতবমুদ্রা তৈরি শুরু হয়। প্রথমে পাঁচ পয়সার ধাতবমুদ্রা তৈরি করা হয়। ১৯৭৩-১৯৭৪ সালে প্রথম ৫ পঁয়সার ধাতবমুদ্রা বের হয়। এরপর ১৯৭৫, ১৯৭৭,১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৮০ ও ১৯৯৪ সালে ৫ পঁয়সার ধাতবমুদ্রা তৈরি হয়। এরপর আর পাঁচ পঁয়সার ধাতবমুদ্রা তৈরি হয়নি। ১৯৭৪ সালে ১ পঁয়সার ধাতবমুদ্রা প্রথমবার তৈরি হয়। এরপর আর ১ পঁয়সার ধাতবমুদ্রা তৈরি করা হয়নি। ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো শাপলা পাতার ছবিসহ ১০ পঁয়সার ধাতবমুদ্রা তৈরি করা হয়। এই ধাতব মুদ্রা পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালেও তৈরি হয়। এরপর ট্রাক্টরের ছবিসহ ১০ পঁয়সার ধাতব মুদ্রা ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৮৯ সালে তৈরি হয়। এরপর এক দম্পত্তির দুই সন্তানের ছবিসহ ধাতবমুদ্রা তৈরি হয়।

এই ধাতবমুদ্রাটা ১৯৭৭,১৯৭৮,১৯৮৯,১৯৮০,১৯৮৩, ১৯৯৪ সালে তৈরি হয়। ১৯৭৩ সালে ইলিশ মাছের ছবিসহ প্রথমবারের মতো ২৫ পঁয়সার ধাতব মুদ্রা তৈরি হয়। এরপর কয়েকটি ফলের ছবিসহ ২৫ পঁয়সার আরেকটি ধাতবমুদ্রা তৈরি করা হয়। এটি ১৯৭৪,১৯৭৫,১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৭৮ ও ১৯৮৯ সালে তৈরি হয়। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখের ছবি সহ ২৫ পঁয়সার আরেকটি ধাতবমুদ্রা ১৯৭৭, ১৯৭৮,১৯৮৯,১৯৮০, ১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালে তৈরি করা হয়। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ৫০ পঁয়সার ধাতবমুদ্রা কবুতরের ছবিসহ ১৯৭৩ সালে তৈরি করা হয়। এরপর আরেকটি ৫০ পঁয়সার ধাতব মুদ্রা ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৮৯, ১৯৮০, ১৯৮৩, ১৯৮৪ ও ১৯৯৪ সালে তৈরি করা হয়। সর্বশেষ ২০০১ সালে ৫০ পঁয়সার আরেকটি ডিজাইনের ধাতব মুদ্রা তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের প্রথম ১ টাকার ধাতব মুদ্রা ১৯৭৫ সালে তৈরি করা হয়। এরপর ১৯৭৬-১৯৭৭ সালে ১ টাকার ধাতব মুদ্রা তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ ১ টাকার ধাতবমুদ্রা ২০১০, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে তৈরি করা।

২ টাকার ধাতব মুদ্রা ২০০৪ সালে পরবর্তীতে ২০০৮ সালে তৈরি করা হয়। এরপর ২০১০ ও ২০১৩ সালে ২ টাকার ধাতবমুদ্রা নতুন করে তৈরি করা হয়। সর্বশেষ ২ টাকার ধাতব মুদ্রাতে বঙ্গবন্ধুর ছবি মুদ্রিত হয়। বাংলাদেশে প্রথম ৫ টাকার ধাতব মুদ্রা ১৯৯৪, ১৯৯৬, ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৮ সালে তৈরি করা হয়। তারপর বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ ৫ টাকার ধাতব মুদ্রা ২০১২ ও ২০১৩ সালে তৈরি করা হয়। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ১ টাকা, ২ টাকা ও ৫ টাকার ধাতবমুদ্রায় বঙ্গবন্ধুর ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমানের সময় তৈরি করা হয়। এর ফলে তিনি ইতিহাসের অংশ হয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর মুদ্রিত ছবিসহ বাংলাদেশের ধাতবমুদ্রা গুলো বিশ্বব্যাপী প্রসংশিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়কে উপলক্ষ্য করে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্মারক ধাতব মুদ্রা তৈরি করা হয়েছে। যা টাকা জাদুঘর থেকে স্বল্প মূল্যে ক্রয় করা যাবে।

সৈয়দ রশিদ আলম: সাধারন সম্পাদক, টাকা জাদুঘর ডোনার ক্লাব

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :