ভেঙে যেতে বসা সংসার জোড়া লাগালেন এএসপি লিমা

মো. শাখাওয়াত হোসেন সজল, সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ)
| আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৭, ২২:২৫ | প্রকাশিত : ১৩ নভেম্বর ২০১৭, ২১:৩২

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানায় গত শুক্রবার রাতে ভেঙে যেতে বসা সাড়ে পাঁচ বছরের সংসার জোড়া লাগালেন সিরাজদিখান সার্কেল এএসপি কাজী মাকসুদা লীমা। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় থানায় মামলা না নিয়ে সংসারটি জোড়া লাগানো হয়। শুধু তাই নয়, সাংসার ভেঙে যেতে বসা ওই দম্পতির দীর্ঘ পাঁচ বছরের কোন কাবিন রেজিস্ট্রি না থাকলেও দেড় লাখ টাকা দেনমোহরে ওই রাতেই কাবিন রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করা হয়।

এ নিয়ে এলাকাবাসী সিরাজদিখানের সার্কেল এএসপি কাজী মাকসুদা লিমা-কে জানিয়েছেন সাধুবাদ।

জানা গেছে, গত সাড়ে পাঁচ বছর আগে সিরাজদিখান উপজেলার দক্ষিণ তাজপুর গ্রামের আব্দুল খালেক মিয়ার ছেলে মো. আল আমিনের সঙ্গে একই উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের চন্দদুল গ্রামের মো. ইব্রাহিম মিয়ার মেয়ে মাকসুদা আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। দর্জি দোকানের কর্মচারী আল আমিন ও মাকসুদার সংসার বিয়ের পরে ভালই চলছিল। তাদের ঘরে তানজিদ শেখ নামে একটি দুই বছরের সন্তানও আছে। বিয়ের সময় মাকুসাদার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। বাল্যবিয়ের কারণে কোনো কাবিন রেজিস্ট্রি হয়নি। বিয়ের দুই বছর পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়।

স্ত্রীর অভিযোগ, স্বামী তাকে টর্চার করে। টর্চারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় উপায় না দেখে স্ত্রী মাকসুদা গত শুক্রবার সিরাজদিখান থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে আসেন। থানায় ঢুকতেই এএসপি কাজী মাকসুদা লিমার সামনে পড়েন গৃহবধূ মাকসুদা। এএসপি নিজেই জিজ্ঞাসা করেন আপনারা কার কাছে যাবেন।

উত্তরে গৃহবধূ জানান, স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে এসেছি। এ কথা শুনে এএসপি তার রুমে নিয়ে যান ওই গৃহবধূকে এবং ভুক্তভোগী মাকসুদার সব কথা শোনেন।

পরে দুই পক্ষের অভিভাবককে থানায় ডেকে এনে ধৈর্য সহকারে উভয়ের কথা শুনেন এএসপি। তিনি উভয়কে স্মরণ করিয়ে দেন একটি সংসারের ভাল মন্দের কথা। সুখ-দুঃখ সংসারে থাকবে। অভাব-অনটনে সংসার ভেঙে যায়। কিন্তু নিজেদের মধ্যে মিল থাকলে অভাবও সংসারে হানা দিতে পারে না। অনেক কষ্টও জয় হয় স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসার কারণে। তার এ কথা শুনে উভয়েই অনুতপ্ত হয়। তারা সংসার করার আগ্রহ প্রকাশ করে।

এসময় এএসপি মাকসুদা উভয়কে ধৈর্য্যরে সাথে সংসার করতে বলেন। বিয়ের কাবিন যেহেতু নেই, তাই দেড় লাখ টাকা দেনমোহরে থানায় বসে স্বামী স্ত্রীর কাবিন রেজিস্ট্রি করা হয়। এরপর উভয় পরিবার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তাদের দুজনকে মিলিয়ে দেয়া হয়। এসময় মিষ্টিও খাওয়ানো হয় সবাইকে এবং সার্কেল এসএসপি কাজী মাকসুদা লিমা দুজনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

এএসপি মাকসুদার এ প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সিরাজদিখান উপজেলা সুধী সমাজসহ সমাজের নানান শ্রেণির লোকজন।

আল-আমিন জানান, সংসার জীবনে আমাদের দুজনের অনেক ভুল বুঝাবুঝি ছিল- লিমা স্যার আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। এখন আমরা অনেক সুখী। আশা করি, ভবিষ্যতে আমাদের সংসারে আর কোন সমস্যা হবে না।

এ ব্যাপরে এএসপি কাজী মাকসুদা লিমা জানান, সমাজের অনেক লোকের মাঝে পুলিশ সম্পর্কে অনেক সময় অনেক খাপার ধারণা আছে। কিন্তু আমরাও মানুষ। আমদেরও ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রীসহ সমাজ সংসার রয়েছে। সংসারের সমস্যাটা আমরাও বুঝি। তাই মামলা করলে অনেক ঝামেলা। সংসারও ভাঙতে পারে। নিজের বিবেকের তাড়নায় চেষ্টা করলাম সংসারটি জোড়া লাগাতে। আপাতত জোড়া লাগাতে সক্ষম হয়েছি। কাবিন রেজিস্ট্রিও করিয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, মামলা না নিয়ে আগে সংসারটি জোড়া লাগাতে পেরেছি।

(ঢাকাটাইমস/১৩নভেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :