সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়নি: সিইসি

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০১৭, ২০:১৭ | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৭, ২০:৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

একজন নির্বাচন কমিশনার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও সংস্থাটির প্রধান কেএম নূরুল হুদা জানিয়েছেন, কমিশন এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি। নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত’ হিসেবে দেখছেন সিইসি।

গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে নিশ্চিত করেন সাংবাদিকদের। তবে কী প্রক্রিয়ায় সেনা মোতায়েন হবে সেটা তিনি জানাতে পারেননি।

ইসি মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যের একদিন পর মঙ্গলবার সিইসি সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘বক্তব্যটি তার ব্যক্তিগত। এ ব্যাপারে কমিশন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে সেনাবাহিনী নির্বাচনে থাকতে পারে কি না এ ব্যাপারে কথাবার্তা হচ্ছে।’

সিইসির এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, তিনি মনে করেন সেনাবাহিনী থাকাটা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিলে তা নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন তিনি।  

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘সিআরপিসিতেও বলা আছে সেনাবাহিনীর কমিশন অফিসার কোথাও গণ্ডগোল দেখলে আইনের আওতায় আনতে পারবেন।’

সোমবার এই কমিশনার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হলেও এখানে একটি ‘কিন্তু’ আছে। সেনাবাহিনীকে আমরা কীভাবে কাজে লাগাবো, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনী কীভাবে যুক্ত হবে, সেটি বলার সময় এখনো হয়নি। কমিশনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আমি কখনোই বলতে পারবো না যে,  নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে না।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে কি না এটা নিয়ে ইসির সঙ্গে সংলাপে দুই ধরনের প্রস্তাবই দিয়েছে রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ। বিএনপি শুরু থেকেই নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে থাকলেও সরকারি দলের অবস্থান এর বিপক্ষে। রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে দীর্ঘ বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জোরালো দাবি জানান। খালেদা জিয়ার বক্তব্য সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইসি মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা। এছাড়া তিনি আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার ইঙ্গিতও দেন।

এদিকে ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে বাসসের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নির্বাচনের এখনো এক বছর বাকি। কমিশন এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।’

সেনাবাহিনীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করতে হলে- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), সংবিধান ও সিআরপিসি সংশোধন করতে হবে। সেনাবাহিনী হচ্ছে দেশরক্ষা বাহিনী, এরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না।’

সচিব বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েন হবে না অন্য কোনো পদ্ধতিতে হবে।

নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েন বিষয়ে বিএনপি’র দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে দেশে যতগুলো সাধারণ নির্বাচন হয়েছে, প্রত্যেকটিতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনেই বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন হয়নি।

ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আগামী নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে কি না এ বিষয়েও এখনো কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ওয়ার্ডে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। জাতীয় নির্বাচনে কী হবে এটা পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

 (ঢাকাটাইমস/১৪নভেম্বর/জেআর/জেবি)