৫০ কোটি ভারতীয় টয়লেট ব্যবহার করে না

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০১৭, ২০:২০ | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৭, ২০:২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ভারতে এখন টয়লেট তৈরির ধূম চলছে। সরকার এ বাবদ ধার্য করেছে ২০০০ কোটি ডলার। ভারত সরকারের লক্ষ্য ২০১৯ সালের মধ্যে মানুষকে যাতে উন্মুক্ত স্থানে পায়খানা করতে না হয় সেটা নিশ্চিত করা।

বিবিসি জানায়, ভারতের অন্যতম দরিদ্র একটি এলাকায় গণ টয়লেট বানানোর চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছে সামাজিক প্রকল্প নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা। সংস্থাটি টয়লেটের বর্জ্য থেকে টয়লেট চালানোর খরচ তুলছে।

ভারতের গ্রামাঞ্চলে ৫০ কোটির বেশি মানুষ টয়লেট ব্যবহার করে না। উন্মুক্ত স্থানে পায়খানা করার কারণে তৈরি হয় নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত এবং সামাজিক সমস্যা। এর কারণে শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না এবং মলত্যাগ করার জন্য নির্জন জায়গায় যেতে গিয়ে মেয়েরা হয় আক্রান্ত হয় নয় আক্রান্ত হবার ভয়ে থাকে।

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি অভিনব উপায়ে সমস্যা সমাধানের কাজে এগিয়ে এসেছে স্যানিটেশন অ্যান্ড হেলথ রাইটস ইন ইন্ডিয়ার(শ্রি) মতো সংস্থা।

টয়লেট চালু রাখার খরচ

শ্রীর অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাতা প্রবীন কুমার যখন স্কুলে পড়তেন তখন প্রায়ই তার স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যেত, কারণ নদীর ধারে মলত্যাগের জন্য তাকে এক কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটে যেতে হতো।

যে তিনজন উদ্যোক্তা ভারতের বিহার রাজ্যে বিনা খরচে ব্যবহারের জন্য টয়লেট তৈরি করছেন, প্রবীন কুমার তাদের একজন।

রাষ্ট্রীয় পরিচালনাধীন যেসব টয়লেট আছে সেগুলোতে বর্জ্য পরিষ্কার করা এবং টয়লেট পরিষ্কার রাখার অর্থ জোগানো বড় একটা সমস্যা।

বর্জ্য অপসারণ করার বদলে শ্রী টয়লেট ঐ বর্জ্য একটা জৈব-শোধন যন্ত্র বা বায়ো-ডাইজেস্টারের মধ্যে পাঠিয়ে দেয়।

ঐ যন্ত্র-চালিত বিদ্যুৎ থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা দিয়ে পাম্প করে পানি তোলা হয়। ওই পানি ফিলটার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিশোধন করে তা বোতলজাত করা হয় এবং ঐ বোতলের পানি ৫০ পয়সায় বাজারে বিক্রি করা হয়। ওই পানি বিক্রির অর্থ থেকে টয়লেট পরিষ্কার ও চালু রাখার খরচ ওঠানো হয়। শ্রী প্রতিদিন ফিলটার করা অর্থাৎ পরিশ্রুত ৩০০০ লিটার পানি বিক্রি করে।

কমিউনিটি টয়লেট

প্রবীন কুমার এবং তার সতীর্থ প্রতিষ্ঠাতা চন্দর কুমারের সঙ্গে ২০১০ সালে কানাডায় জন্ম একজন প্রকৌশলী অনুপ জৈনের পরিচয় হয়।

চার বছর পর বিহার রাজ্যের সুপল জেলায় নেমুয়া গ্রামে তারা প্রথম কম্যুনিটি টয়লেট বা সবার ব্যবহারের জন্য টয়লেট তৈরি করেন।

ঐ পাবলিক শৌচালয় পুরুষদের জন্য আটটি টয়লেট এবং মেয়েদের জন্য আটটি টয়লেট তৈরি করা হয়। ভোর চারটায় ঐ শৌচালয় খোলা হয় এবং বন্ধ করা হয় রাত দশটায়।

তাদের দল এ পর্যন্ত পাঁচটি গ্রামে টয়লেট বসিয়েছে। তারা বলছে তাদের তৈরি টয়লেট প্রতিদিন প্রায় ৮০০ বার ব্যবহার হয়।

তাদের হিসাব অনুযায়ী প্রতিটি শৌচালয় তৈরি করতে প্রাথমিকভাবে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার ডলার সমপরিমাণ অর্থ। নির্মাণকাজ হয়ে যাবার পর পরিশ্রুত বোতলের পানি বিক্রি থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে টয়লেট চালু রাখার খরচ উঠে আসে।

‘আমরা এমন গ্রাম বেছে নিই যেখানে সরকারি অর্থে এখনও কোনো টয়লেট তৈরি হয়নি’- জানান চন্দন কুমার। শৌচাগার নির্মাণের আগে তারা গ্রামে ঘুরে ঘুরে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করেন।

কারণ এসব গ্রামের মানুষের শৌচকর্মের এতদিনের যে অভ্যাস রয়েছে সেই সংস্কৃতিটা ভাঙাই সবচেয়ে জরুরি। টয়লেট থাকলেই শুধু হবে না, সেগুলো ব্যবহারে তাদের উদ্বুদ্ধ করাটাই আসল চ্যালেঞ্জ বলে তারা মনে করেন।

উদ্যমী দৃষ্টিভঙ্গি

‘যারা নতুন নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে আসছেন আমরা তাদের উপরই বেশি করে নির্ভর করছি’- বলছিলেন ইউনিসেফ ইণ্ডিয়ার নিকোলাস অসবার্ট।

‘সমস্যা সমাধানের নতুন পথ উদ্ভাবনের কথা তারা চিন্তাভাবনা করছেন, প্রকৌশলের দিক থেকে, একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মলত্যাগের বিষয়টিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার কথাটাও তারা মাথায় রাখছেন।’

অসবার্ট বলছেন, বায়ো-ডাইজেস্টারের উদ্ভাবনটা বেশ অভিনব হলেও এই প্রকল্প আরও বিস্তৃত পরিসরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই উদ্ভাবন কতটা সফলভাবে কাজে লাগানো যাবে তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।

তবে শ্রী টয়লেট উদ্ভাবকরা আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী। ‘আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চাই এবং যেখানে সরকার এখনও কিছু করেনি সেখানে আমরা এই টয়লেট বসানোর কথা ভাবছি’- বলছেন জৈন।

‘আরও বেশি শৌচাগার নির্মাণের জন্য আমরা সরকারের কাছ থেকে অর্থসাহায্য পেতে চাই।’

‘এসব শৌচাগার চালাবে গ্রামের বা এলাকার মানুষ। শ্রী নিশ্চিত করবে সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে এবং সেগুলোর যথাযথ দেখ-ভাল করা হচ্ছে।’

তার সহ-প্রতিষ্ঠাতা চন্দন কুমারও একমত, ‘আমরা চাই আমাদের উদ্যোগ আমাদের সমাজের কাজে লাগছে এবং আমরা দেখতে চাই উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের অভ্যাস শতকরা একশ ভাগ বন্ধ হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/১৪নভেম্বর/এসআই)