‘পাকিস্তানিরা না পারলেও পঁচাত্তরের পর বন্ধ হয় সেই ভাষণ’

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০১৭, ২৩:০৩ | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৭, ২৩:০৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

পাকিস্তানি শাসকেরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করতে চায়নি। রেডিও-টেলিভিশনের কর্মীদের আন্দোলনের মুখে পরদিন পাকিস্তান সরকার সেই ভাষণ প্রচার করতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানি শাসকরা যে ভাষণ প্রচার বন্ধ করতে পারেনি সেই ভাষণ ১৫ আগস্টের পর বাজানো বন্ধ করে দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি উপলক্ষে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সমাপনী আলোচনায় তিনি এই আক্ষেপ প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অফ দি ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত হওয়ায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংসদে এই ধন্যবাদ প্রস্তাব আনেন। সরকারি ও বিরোধী দলীয় সদস্যরা এর ওপর দীর্ঘ আলোচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ভাষণের সঙ্গে আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের ইতিহাস সবই জড়িত। এই ভাষণেই বাংলাদেশের মানুষ উজ্জীবিত হয়েছিল। ভাষণের শুরুতেই ছিল ভাইয়েরা আমার। জাতির সঙ্গে বঙ্গন্ধুর যে একাত্মতা ছিল সেটা এই শব্দে প্রকাশ পেয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাষণের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।’ এটা ছিল বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পাকিস্তানি শাসকদের বাধার দুঃখ। সেখানে তিনি বলেছেন, আপনারা সবই জানেন এবং বুঝেন। দেশের মানুষ যে জাতির পিতার কথা বুঝতে পারে সেটা তিনি স্মরণ করে দিয়েছেন এই ভাষণে। জনগণের সঙ্গে তাঁর যে সম্পর্ক ছিল সেটাই এখানে প্রকাশ পেয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৪৮ সাল থেকেই কাজ শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ৭ মার্চের ভাষণ ছিল চূড়ান্ত মুহূর্ত। ভাষণে তিনি শুধু স্বাধীনতার কথা বলেননি, অর্থনেতিক অধিকারের কথাও বলেছিলেন। বাংলার মানুষ কী চায় এবং তিনি কী করতে চান সেটা তার ভাষণে ছিল।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা জানান, একটি জাতিকে গড়ে তোলার সব প্রয়োজনীয় কথা এই ভাষণে ছিল। শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের একটি প্রেরণা এই ভাষণ। সারা বিশ্বের বঞ্চিত মানুষের জন্য এটি একটি অবলম্বন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অসহযোগ আন্দোলনে কী করতে হবে সেটা তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি যদি হুকুর দেবার নাও পারি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তানি শাসকরা এই সুযোগ নাও দিতে পারে। আর তার সেই নির্দেশ জাতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি জানান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের কেউ ধাবিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন কোনো ভাষণ নেই যা প্রতিটি ওয়ার্ডে বারবার বেজেছে। কত হাজার বার যে এই ভাষণ বেজেছে তা হিসাব করাও কঠিন। আমি চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কোনো কূল-কিনারা পাইনি।’

শেখ হাসিনা জানান, যেদিন এই ভাষণকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেয় সেদিন তাঁর মায়ের কথা সবচেয়ে বেশি স্মরণ হয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের পেছনে তাঁর মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সেদিন অনেকে অনেক কথা বলেছেন। যার যেভাবে মনে হয়েছে বলেছেন। আমাদের কাছে অনেক কাগজ জমা হলো। মিটিংয়ে যাওয়ার আগে আমার মা আমার বাবাকে ডেকে কাছে বসে বললেন, অনেকে অনেক কিছু বলবে। এদেশের মানুষের জন্য তুমি অনেক সংগ্রাম করেছ। এদেশের মানুষের জন্য কী করতে হবে সেটা তোমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না। সামনে বাঁশের লাঠি পেছনে বন্দুকের নল। তোমার কারও কথা শোনার দরকার নেই। তোমার মনে যা কথা আসবে সেটাই তুমি বলে দেবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই ভাষণটা ছিল উপস্থিত বক্তৃতা। এখানে কোনো নোট নেই, কোনো পয়েন্ট নেই। মূলত ভাষণটা ছিল ২৩ মিনিটের। তবে ১৮/১৯ মিনিটের মতো রেকর্ড করা হয়।’

ভাষণটি রেকর্ডের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘এমএলএ ছিলেন আবুল খায়ের। রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থাপনা তাঁর ছিল। তিনি ভাষণটি রেকর্ড করেন। পরবর্তী সময়ে এটাই আমাদের বড় সম্পদ হয়ে যায়। পঁচাত্তরের পর সব হারিয়ে যায়। তবে রেডিওর কর্মকর্তারা অনেক রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও এই ভাষণটি সংরক্ষণ করেন।’  

আওয়ামী লীগ সভাপতি জানান, এই ভাষণটি প্রচারে তার দল সবসময় সক্রিয় ছিল। এখনো নানা ব্যবস্থাপনা রয়েছে। এই ভাষণের স্বীকৃতি বিশ্ববাসীর সামনে বাঙালি জাতিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে স্বীকৃতি দেয়ায় ইউনেস্কোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা। সংসদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করায় তোফায়েল আহমেদকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া যারা যারা এই আলোচনায় অংশ নিয়েছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সংসদ নেতা।

(ঢাকাটাইমস/১৪নভেম্বর/জেবি)