হবিগঞ্জে নাশকতার আসামিদের দলে ভেড়ানোর অভিযোগ সাংসদের বিরুদ্ধে

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ০০:০২

পাবেল খান চৌধুরী, ঢাকাটাইমস

হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ খান বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা মামলার আসামিদের দলে ভেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোহাম্মদ আমীর হোসেন মাস্টারসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

উপজেলা আওয়ামী লীগ বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মতামতকে উপেক্ষা করে তিনি এমন কর্মকা- চালিয়েছেন বলে আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করা হয়।

অভিযোগ করেন, এমপি আব্দুল মজিদ খান জামাত-বিএনপির নেতাকর্মী একাধিক নাশকতা মামলার আসামিদের দলে এনে ‘এমপিলিগ’ গঠন করেছেন। এর  ফলে দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দিন দিন তার দূরত্ব বাড়ছে।

মঙ্গলবার দুপরে বানিয়াচং উপজেলা সদরের ১নং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদ হল রুমে আগামী নির্বাচনে আমির হোসেন মাস্টারকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ তুলেন তৃণমূল আওয়ামী লীগ। সংবাদ সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রাণপুরুষ আমীর হোসেন মাস্টারের নাম ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোহাম্মদ আমীর হোসেন মাস্টার লিখিত বক্তব্যে তার জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরে বলেন, ১৯৬৯ সালে বানিয়াচং থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করে সম্মিলিত ছাত্রদের ১১দফা আন্দোলনে সক্রীয় নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে হবিগঞ্জ মহুকোমা ছাত্রলীগের নির্বাচিত সভাপতি হয়ে ১৯৭০ এর নির্বাচনে ছাত্র-যুব কমিটির আঞ্চলিক আহ্বায়ক এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে বানিয়াচং এর বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং সেই সাথে ছাত্র যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে ভারতে নিয়ে আলাদ প্রশিক্ষণ দিয়ে ৫নং সেক্টরের অধীনে বিভিন্ন স্থানে পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ অংশ নেন। ১৯৭২ সালে বানিয়াচং থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৭৩ সালে সিলেট বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের কার্যকরী পরিষদ সদস্য হন। ১৯৭৪ সালে থানা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির জনকের হত্যার প্রতিবাদে তার নেতৃত্বে বানিয়াচং এ প্রতিবাদ মিছিল করেন। ১৯৭৬ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিবস উদযাপন করেন। ২২ মার্চ গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ ১৮ মাস কারাবাস করেন। ১৯৭৮ সালের ঐক্য জোটের প্রার্থী জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে প্রচার অভিযান পরিচালনা করেন। ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শরীফ উদ্দিন আহমেদ এমপির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনা করেন। ১৯৮১ সালে বানিয়াচং থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওই সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. কামাল হোসেনের পক্ষে নির্বাচনী কাজে নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৪ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উপজেলায় কোন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিলে বিরত রাখতে সক্ষম হন। পরে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দানের কারণে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবাস করেন। ১৯৯১ সালে বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ও পরবর্তীতে পুনর্নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদের নির্বাচনী কার্য পরিচালনা করেন এবং বিজয নিশ্চিত করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বি.এন.পির প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করা আন্দোলন পরিচালনা করেন। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদকে পূনরায় নির্বাচিত করেত জোরদার কার্যক্রম গ্রহন করে বিজয় নিশ্চিত করেন। শরীফ উদ্দিন আহমেদ এমপির অকাল মৃত্যুতে আসন শূন্য হলে দলীয় মনোনয়ন প্রার্থনা করেন তিনি। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মনোনীত হওয়ায় তার পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা তাকে জয়যুক্ত করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন চাইলে দল নাজমুল হাসান জাহেদকে মনোনয়ন দেয় এবং পরবর্তী নির্বাচনে নেত্রী তাকে দেখবেন বলে আশ^স্ত করেন। ১৯৯১ সালে থেকে এখন পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন এই ত্যগী নেতা।। ২০০৮ সালে মনোনয়ন প্রার্থনা করেন। মনোনয়ন পেয়েও প্রয়াত শাহএএমএস কিবরিয়ার স্ত্রী আছমা কিবরিয়া তার স্বামীর মামলার বাদী হিসেবে অ্যাড. আ. মজিদ খানকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ২০০৮ সালের মনোনয়নের সময় পরবর্তীতে আমাকে মনোনয়ন দেবেন বলে নেত্রী আশ^স্ত করেন বলে তিনি জানান। ২০১৪ ৫ জানুয়ারী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও ব্যর্থ হই। তাই আগামী সংসদ নির্বাচনে নেত্রী তাকে মনোনয়ন দেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি  মো. কবির হোসেন মাস্টার, আহম্মদ লস্কর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসেন খান, বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহজাহান মিয়া, গোলাম কিবরিয়া লিলু, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. রেখাছ মিয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল মিয়া, মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোছা. নাছরিন আক্তার, উপজেলা শ্রমিকলীগ আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. মুর্শেদুজ্জামান লুকু, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল হালিম সোহেল, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হাসান শাহীন, কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ আলম রাজুসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ, স্বেচ্ছা সেবকলীগসহ অঙ্গ-সংগঠনের সভাপতি-সম্পাদকসহ বিভিন্নস্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কোনো নাশকতা মামলার আসামিকে দলে যোগদান করাইনি। যারা এসেছেন তাদের অধিকাংশই অরাজনৈতিক এবং কয়েকজন বিএনপির কর্মী ছিল। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ে মুগ্ধ হয়ে তারা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। 
তাছাড়া আমি কোন এমপিলিগ গঠন করিনি। প্রতিটি অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়েই যোগদান করেছি। আমার উপর উত্থাপিত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

(ঢাকাটাইমস/১৫নভেম্বর/প্রতিনিধি/ইএস)