কিং খানের বেড়ে উঠা- ৭

পাকিস্তানি শরণার্থীর ছেলের অবশেষে বলিউডে অভিষেক

আমিনুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ১০:১৩ | প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ০৯:৪৮

মায়ের মৃত্যুর পর শাহরুখ সিনেমাতে অভিনয় করা শুরুর দৃঢ় সংকল্প করলেন। কিন্তু সে পথ এতটুকু মসৃণ ছিল না। স্বজনপ্রিয়তার জন্য বলিউড কুখ্যাত। পারিবারিকভাবেই অনেকে বলিউডে এসে স্টার হয়ে যান। কিন্তু শাহরুখখানের তো কেউ নাই।

পূর্বসূরী আমির খানের বাবা তাহির হোসেন খান ছিলেন একজন সিনেমার প্রযোজক ও প্রভাবশালী লোক। অত্যন্ত অভিজাত আমির খান পারিবারিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত সিনেমায় আসার আগেই। ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামী নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ হচ্ছেন আমির খানের পূর্বপুরুষ। সালমান খানের পূর্বপুরুষরা ছিলেন জমিদার। সালমান খানের পিতা সেলিম খান বলিউডের সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার। অমিতাভ বচ্চনের বাবা হরিবনশ রায় ছিলেন হিন্দি ভাষার প্রখ্যাত কবি। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর সাথে বন্ধুত্ব ছিল হরিবনশ রায়ের। অমিতাভ বচ্চন কিছুটা হলেও সে সুবিধা বলিউডে পেয়েছিলেন। অনিল কাপুর ছিলেন প্রযোজক সুরিন্দর কাপুরের ছেলে। এ রকম হাজারটা উদাহরণ আছে। সত্যি কথা বলতে গেলে শাহরুখ খান হচ্ছেন একজন পাকিস্তনি ‘শরণার্থী’র ছেলে। শাহরুখ খানের আছে কেবল পরিচালক বন্ধু আজিজ মির্জা ও বিবেক ভাস্বানী। টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করার সুবাদে কিছুটা পরিচিতি তিনি পেয়েছিলেন সত্যি। কিন্তু তখন পর্যন্ত কোনো টিভি অভিনয় শিল্পী সিনেমা করে বিন্দুমাত্র সফল হননি। আর শাহরুখের অতি অহংকারী মনোভাব ও জীর্র্ণ স্বাস্থ্যের কারণেও পরিচালকেরা তাকে পছন্দ করতেন না।

রাজকানওয়ার নামে একজন নতুন পরিচালক শাহরুখকে ‘দিওয়ানা’ ছবিতে অভিনয় করার প্রস্তাব দিলেন। রাজ আরও কয়েকজন অভিনেতাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু চরিত্রটি প্রধান না হওয়ায় সবাই তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু চিত্রনাট্য পড়ে শাহরুখ এই সেকেন্ড রোলকেই পছন্দ করেন। ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন ঋষি কাপুর। বিখ্যাতদের মধ্যে শাহরুখকে দেখে প্রথম পছন্দ করেন বলিউডের ড্রিমগার্ল খ্যাত হেমামালিনী। তিনি তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবি ‘দিল অ্যাশনা হ্যায়’ তে শাহরুখ খানকে অফার করেন। আরেকজন পরিচালক রাজীব মেহরা ‘চমৎকার’ মুভিতে শাহরুখ খানকে কাস্ট করেন। এভাবেই পরপর তিনটি মুভিতে কাজ পাওয়ার পর বন্ধু আজিজ মির্জা শাহরুখ খানকে নিয়ে ছবি বানানোর জন্য আবারও পরিচালক প্রযোজক রমেশ সিপ্পির কাছে যান। সিপ্পি আগেই শাহরুখকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেন। আজিজ মির্জার পীড়াপীড়িতে সিপ্পি ছবি প্রযোজনা করতে রাজি হন। শাহরুখের জন্য আজিজ মির্জা অনেক দিন যাবত খুব যত্ন করে একটা চিত্রনাট্য তৈরি করেন। মফস্বলের একটি ছেলে মুম্বাই আসে। টাকা-পয়সা আয় করে বিপথে চলে যায়। শেষমেশ প্রেমিকাই তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনে। ছবিটির নাম সিদ্ধান্ত হয় ‘রাজু বানগ্যায়া জেন্টলম্যান’।

এই ছবিতে শাহরুখের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে সিলেক্ট করা হয় জুহি চাওলাকে। আজিজ মির্জা বিবেক ভাস্বানীকে দায়িত্ব দেন জুহি চাওলাকে ম্যানেজ করার জন্য। জুহি চাওলা ততদিনে বড় তারকা। আমির খানের বিপরীতে ‘কেয়ামাত সে কেয়ামাত তক’ মুভিতে অভিনয় করে অত্যন্ত আলোচিত। জুহি চাওলা এর আগে শাহরুখের নাম শুনেছেন, কিন্তু তাকে দেখেননি। ফৌজি সিরিয়ালও দেখেননি। বিবেক ভাস্বানী জুহিকে গিয়ে বলেন, আপনার বিপরীতে যে অভিনয় করবে সে টিভি সিরিয়ালের একজন বড় স্টার। সেই হতে যাচ্ছে আগামী দিনের আমির খান।

পরের দিন জুহি চাওলা সেটে গিয়ে যখন দেখলেন একেবারে হালকাপাতলা শরীর ও এলোমেলো চুল নিয়ে শাহরুখ উপস্থিত। সবার সামনেই চিৎকার দিয়ে উঠলেন, ‘এই তোমাদের আমির খান?’। স্বয়ং শাহরুখও এই কথা শুনলেন। শাহরুখ অবশ্য এই কথা শুনে মজা করে উড়িয়ে দিলেন। শুরু হলো শাহরুখ-জুহির আজীবনের বন্ধুত্ব।

২৬ জুন, ১৯৯১ সন। মায়ের মৃত্যুর প্রায় দুই মাস পর শাহরুখ প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। মুভিটি ছিল হেমামালিনী পরিচালিত ‘দিল অ্যাশনা হ্যায়’। তার পর বাকি সিনেমাগুলোর কাজ চলতে থাকল। দিওয়ানা, চমৎকার ও রাজু বানগায়া জেন্টলম্যান। পাকিস্তানি শরণার্থীর ছেলে শাহরুখ বলিউডের যুদ্ধক্ষেত্রে নামলেন ঢাল তলোয়ার হাতে নিয়েই। একজন নবাগত অভিনেতা হিসেবে প্রথমেই চারচারটি সিনেমার কাজ এক সাথে পাওয়া সোজা কথা নয়।

গৌরির সঙ্গে বিয়ে

মুম্বাইতে স্থায়ী হবার পর গৌরির সঙ্গে সম্পর্ক আরেকটু ঘোলাটে হয়ে গেল। তারা দুজন ঠিক ছিলেন। কিন্তু গৌরির পরিবার আবারও শাহরুখের সাথে বিয়ে দেয়া নিয়ে আপত্তি জানাল। গৌরির বাবা যখন জানলেন তাদের মেয়ে শাহরুখকে বিয়ে করবেই, অনিচ্ছাসত্ত্বেও মেনে নিলেন। মায়ের মৃত্যুর ছয় মাস পর ১৯৯১ সালের অক্টোবরের ২৫ তারিখে শাহরুখ-গৌরির বিয়ে হয়। বিয়েটা হয় হিন্দু রীতিতে। ‘রাজু বানগায়া জেন্টলম্যান’ মুভির সেট থেকে কস্টিউম নিয়ে শাহরুখ বিয়ের পোশাক পড়েন। বিয়ের পরের দিনই নব দম্পতি মুম্বাই চলে আসেন। আবারও অভিভাবক আজিজ মির্জা। নিজের ফ্ল্যাটের একটা অংশ শাহরুখকে দিয়ে দেন বউ নিয়ে থাকার জন্য। ছয় মাস শাহরুখ খান সেখানেই ছিলেন।

পরের বছর ১৯৯২ সালে একঝাঁক নতুন তারকার পদার্পন ঘটে বলিউডে। তাই ৯২ সাল বলিউডের ইতিহাসে স্বরণীয়। সাইফ আলী খান, অক্ষয় কুমার, অজয় দেবগন, সুনীল শেঠী-এসব তারকার মুভি এ বছর মুক্তি পায়। খান সাম্রাজ্যের কনিষ্ঠ রাজপুত্র শাহরুখ খানের প্রথম মুক্তি প্রাপ্ত ছবি হলো ‘দিওয়ানা’ যেটি মুক্তি পায় ১৯৯২ সালের ২৫ জুন। জন্ম হলো এক সুপার স্টারের।

(চলবে...)

ঢাকাটাইমস/১৫নভেম্বর/এআই/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :