উপকূলীয় বাগেরহাটে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৪৪ | প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৩৯

জলবায়ুর পরিবর্তনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে বিশুদ্ধ পানির সংকট দিনদিন তীব্র হচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুম আসলে এই সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। জলবায়ুর পরিবর্তন ও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই জেলায় প্রায় আঠোরো লাখ মানুষের বসবাস। এখানকার মানুষের বিশুদ্ধ পানির উৎস জলাশয়, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং পন্ড স্যান্ড ফিল্টার (পিএসএফ)। এ জেলার অধিকাংশ এলাকায় গভীর নলকূপ বসাতে না পারায় দূর-দূরান্ত থেকে নারী পুরুষদের পুকুরের পানি সংগ্রহ করতে হয়। আর যেসব এলাকায় গভীর নলকূপ বসে তা আর্সেনিক যুক্ত ও লবনাক্ত।

সরেজমিনে বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

জেলার অন্তত পাঁচটি উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তাই ওই এলাকার বিশুদ্ধ পানির আধার পুকুর ও পিএসএফগুলো সংরক্ষণ এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে বিশুদ্ধ পানির সংকট মেটানোর পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য বিভাগ।

বাগেরহাটের নয়টি উপজেলার মধ্যে বাগেরহাট সদর, কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মংলায় বসবাস করা মানুষদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ স্ব স্ব এলাকার পুকুরগুলোকে সংরক্ষণ করা এবং আরও বেশি করে পুকুর খনন করা এমনটাই পরামর্শ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।

কচুয়া উপজেলার সাংদিয়া গ্রামের সুব্রত মুখার্জি বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আমাদের এলাকায় গভীর নলকূপ বসানো যাচ্ছে না। সুপেয় পানির জন্য প্রায় চার কিলোমিটার দূরে গোয়ালমাঠ এলাকার একটি পুকুর থেকে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে হয়। যা খুব কষ্টসাধ্য। দিন যতই যাচ্ছে সুপেয় পানির সংকট যেন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সামনে আমরা পানযোগ্য পানি কোথায় পাব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

উপকূলীয় শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন ও সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, গভীর ও অগভীর নলকূপ বসে না বললেই চলে। আর যা বসে তা হয় আর্সেনিক যুক্ত না হয় লবণাক্ত। পিএসএফ আছে তা অধিকাংশই নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। যা সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই।

তারা আরও বলেন, আমাদের এলাকায় সুপেয় পানির একমাত্র উৎস পুকুর বা উন্মুক্ত জলাশয়। যেসব পুকুর রয়েছে তাতে গরমের সময়ে শুকিয়ে যায়। আমার খাবার পানি পাইনা। তাই বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে অনেক দূর থেকে সংগ্রহ করতে হয়। অনেক পরিবার নিজেরা যেতে না পেরে টাকার বিনিময়ে কাউকে দিয়ে সংগ্রহ করে আনেন।

বেসরকরি উন্নয়ন সংস্থা অগ্রদূত ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. আউব আলী আকন বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের জলোচ্ছ্বাসে জলাশয়গুলোতে লবন পানিতে ভেসে যায়। ফলে এখানকার বিশুদ্ধ পানির উৎসগুলো সব নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে এই এলাকায় পুকুর ও জলাশয়গুলো সংস্কার করে তার পাড়ে পিএসএফ নির্মাণ করা হয়। যাতে এখানকার মানুষ পুকুর ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তাদের পানির চাহিদা মেটাতে পারে। এছাড়া তাদের মাঝে বড় বড় প্লাস্টিকের ড্রামও সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এক দুই বছর যেতে না যেতেই সংরক্ষণের অভাবে তা ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। এই এলাকার মানুষদের পানযোগ্য পানি সংরক্ষণে এখনই সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন ওই এনজিও কর্মকর্তা।

কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, আমার এই উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। সব এলাকার মানুষেরই বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। গভীর নলকূপ বসে না। বিশুদ্ধ পানির একমাত্র জায়গা হলো পুকুর আর পিএসএফ। সেগুলো খনন করা হয়না। বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করতে আরও পুকুর খনন করা দরকার বলে মনে করেন এই জনপ্রতিনিধি।

বিশুদ্ধ পানির সংকটের কথা স্বীকার করে জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শামীম আহমেদ বলেন, উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে নয়টি উপজেলা রয়েছে। এরমধ্যে পাঁচটি উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকহারে নিচে নেমে গেছে। তাই সুপেয় পানির সংকট দিনদিন তীব্র হচ্ছে। তাই বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করতে নানা প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উপর আমরা জোর দিচ্ছি। জেলার পিএসএফগুলো সংষ্কার করা হবে তবে এই এলাকার জনগণকেও পিএসএফগুলো রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ১১৬টি পুকুর পিএসএফ এর আওতায় আনছি। এগুলো খনন করা হবে। এগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে কিছুটা হলেও সংকট কাটবে বলে মনে করছে জনস্বাস্থ্য বিভাগ।

(ঢাকাটাইমস/১৫নভেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :