চরে নেই কেন্দ্র, পিইসিতে বসতে খরচ দেড় হাজার

রিমন রহমান, রাজশাহী
| আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৪৯ | প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৪৫
ফাইল ছবি

রাজশাহী শহরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। নদীর ওপারে চর। সেই চরে রয়েছে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর (পিইসি) জন্য নেই কোনো পরীক্ষা কেন্দ্র। ফলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হবে নদী পার হয়ে। এ জন্য মাথাপিছু খরচ প্রায় দেড় হাজার টাকা। ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই টাকা আদায় করছেন শিক্ষকরা।

অথচ প্রাথমিক শিক্ষার সব বই সরকার থেকে দেয়া হয় বিনামূল্যে। সেই সঙ্গে দেয়া হয় উপবৃত্তি। এতে শিক্ষার্থীদের পেছনে অভিভাবকদের সামান্যই খরচ হয়। কিন্তু এখন পরীক্ষায় বসতেই টাকা গুণতে হচ্ছে তাদের। চরাঞ্চলের অনেক হতদরিদ্র অভিভাবকেরই সেই টাকা দেয়ার সামর্থ নেই। ফলে আগামী ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরীক্ষায় অংশ নেয়া নিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

পদ্মার চরে পবা উপজেলায় রয়েছে তারানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খিদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদীর ভাঙনে তারানগর স্কুলটি খানপুরে, নবীনগর স্কুলটি মাঝারদিয়াড় ও খিদিরপুর স্কুলটি মধ্যচরে স্থানান্তর করা হয়। এসব স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের রাজশাহী শহরে এনে পিইসি পরীক্ষা দেওয়ানো হয়। এবার এই তিন স্কুল থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা জানান, তাদের সন্তানদের পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পরীক্ষার সময় রাজশাহী শহরে থাকা-খাওয়ার জন্য এক হাজার ৪২০ টাকা, এক কেজি ডাল বা নগদ আরও ১০০ টাকা চাঁদা ধরা হয়েছে। সে হিসাবে একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক হাজার ৫২০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এই টাকা কিছু শিক্ষার্থী জমা দিতে না পারায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খিদিরপুর স্কুলের এক শিক্ষার্থীর দাদা বলেন, মেয়েটির বাবা নেই। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করানো হচ্ছে। এখন এত টাকা দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ানোর সামর্থ্য তার নেই। এখন তিনি মেয়েটির পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে বিয়ে দেয়ার কথা ভাবছেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য চরখিদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু আলম বলেন, যখন থেকে পিইসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে, তখন থেকেই তারা পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে চরের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উপকেন্দ্র করার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু তাদের কথা কেউ শুনছেন না।

তারানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা আক্তার বলেন, চরে একটি উপকেন্দ্রের জন্য তারাও বলেছেন। কিন্তু তাদের বলা হয়, ৮-১০টি স্কুল নিয়ে একটি পরীক্ষা কেন্দ্র করা হয়। চরে এত স্কুল নেই। এ জন্য চরে কেন্দ্র করা সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন, চরে পরীক্ষাকেন্দ্র হলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হতো। শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমত। ফলে শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হতো।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে পিইসি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ইউএনওর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন।

ইউএনও আলমগীর কবির বলেন, তিনি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। নির্দেশনা পেলে তিনি আগামী বছর থেকে পরীক্ষা উপকেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেবেন।

(ঢাকাটাইমস/১৫নভেম্বর/ব্যুরো প্রধান/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :