দুই শিক্ষকের স্কুল, খসে পড়া ভবনে চলছে পাঠদান

মাজহারুল ইসলাম রোকন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০১৭, ১১:১৮

নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁয়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হয় দুই শিক্ষকের দ্বারা। তারাই দপ্তরি, তারাই শিক্ষক আবার তারাই বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের তালা লাগানো খোলার কাজও করেন। প্রধান শিক্ষক না থাকলেও রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, যিনি বিদ্যালয়ে নিয়মিত থাকেন অনুপুস্থিত। এমন একটি স্কুলের ছাদের আস্তর খসে খসে পড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে চলছে শিশুদের পাঠদান। যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এমনটা চলছে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে।

জানা গেছে, এমন দূরাবস্থা সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নে অবস্থিত ১১২নং দামোদরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির। ১৯৯৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষকের স্থলে মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়েই চলছে পাঠদান। একজন আবার না থাকার মতোই। বিদ্যালয়ে নেই একটি টয়লেটও।

২০১১ সাল থেকে এই বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মেরিনা সুলতানা, রেখা রানী সূত্রধর ও রওশন আরা জাহান নামে তিনজন শিক্ষিকা ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করে আসছেন। এখানে একজন দপ্তরি কিংবা সিকিরিউটি গার্ড তো দূরের কথা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এই বিদ্যালয়টিতে নিয়মানুযায়ী পাঁচজন শিক্ষক থাকার নিয়ম থাকলেও অদ্যাবধি তিনজনকেই পাঁচজনের কাজ করতে হয়। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে সপ্তাহের বেশির ভাগ দিন সময় অনুপস্থিত থাকেন বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

এত্তসব সমস্যার মধ্যে এখন বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে বিদ্যালয়ের ছাদের আস্তর খসে খসে পড়ছে। এতে রড বের হয়ে আসছে। এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঁচ বছর ধরে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বেশ। বিদ্যালয়ের একমাত্র টয়লেটটি কয়েক বছর ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় প্রয়োজনবশত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছুটতে হয় আশপাশের কোনো বাড়িতে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত মেরিনা সুলতানা ঢাকাটাইমসকে জানান, ২০১৬ সালে বিকল্প ক্লাসরুম নির্মাণের জন্য ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। ওই টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে একটি টিনের ঘর তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ঘরের মেঝেতে মাটি ফেলা হয়নি বিধায় ক্লাস করা যাচ্ছে না। তাছাড়া বিদ্যালয়ের মাঠে এলাকার ছেলেরা ফুটবল খেলায় ফুটবলের আঘাতে টিনের ঘরের সামনের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান এটি মেরামত করে ক্লাস চালানোর উপযুক্ত করে দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

এছাড়া স্থানীয় এমপি, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা একটি নতুন ভবনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন বলে দাবি করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আ.ফ.ম জাহিদ ইকবাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দামোদরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সম্প্রতি আমি এই স্কুলসহ উপজেলার আরও দুটি স্কুলে নতুন ভবনের জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা চালিয়েছি। এর মধ্যে একটি স্কুলে নতুন ভবনের অনুমোদন পাওয়া গেছে। আশা করি দ্রুত দামোদরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও নতুন ভবনের অনুমোদন পাওয়া যাবে।’

শিক্ষকদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ে একজন প্রধান শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। ইতিপূর্বে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি যোগদান করেননি। এছাড়া বিকল্প ক্লাস রুম নির্মাণের জন্য ইতিপূর্বে ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই টাকায় ক্লাস রুমটির কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। এক্ষেত্রে আরও বরাদ্দের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :