কিং খানের বেড়ে উঠা- ৮

নায়ক শাহরুখের প্রথম বাজিমাত খলচরিত্রে

আমিনুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৭, ১২:৫৮ | প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০১৭, ১২:৩২

প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা দিওয়ানা হিট হয় বক্স অফিসে। যেহেতু শাহরুখ প্রধান অভিনেতা নন এই মুভিতে, তাই দিওয়ানা মুভি হিট হওয়াতে এর কৃতিত্ব শাহরুখের ভাগে এতটা যায়নি। কিন্তু শাহরুখ খান দর্শকদের পাগল করলেন এক গান দিয়ে। ‘কোই না কোই চাহিয়ে ... প্যায়ার কারণেওয়ালা’- এই গান তরুণ দর্শকদের মুখে মুখে তখন। বহুদিন পর মনে হলো বলিউড এ রকম একজন প্রাণবন্ত, উচ্ছ্বল নায়কের প্রতীক্ষায় ছিল। মোটর বাইকে চড়ে বন্ধুদের সাথে এ রকম মজা করে গান গাওয়ার দৃশ্য অনেকদিন যাবত দেখছিল না বলিউড। সত্তর ও আশির দশক বলিউডের অধিকাংশ মুভিই ছিল অ্যাকশন ঘরানার। তাই নায়কের এই কোমল রূপ দেখে অনেকেরই ভালোলাগে। প্রথমবারের মতো ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পান এই দিওয়ানা মুভিতে অভিনয়ের সুবাদে। সেরা নবাগত পুরুষ অভিনেতা পুরস্কার পান তিনি।

৯২ সালেই মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রাজু বানগায়া জেন্টলম্যান’ মুভিটিও ভালো ব্যবসা করে। এর কৃতিত্বও শাহরুখ খানের পক্ষে খুব একটা যায়নি। যেহেতু এই ছবির নায়িকা হচ্ছেন তখনকার সময়ের জন্য শাহরুখ খানের চেয়েও বড় তারকা জুহি চাওলা। ৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শাহরুখের আরেকটি ছবি হচ্ছে ‘চমৎকার’, যেখানে তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। কিন্তু ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে। তাই বলা যায়, তারকা বলতে যা বোঝায়-সেটা শাহরুখ তখনও হননি। ৯২ সালের শাহরুখ তারকা নন, একজন হিন্দি সিনেমার মাঝারি মানের অভিনেতা মাত্র।

বলিউডের জার খ্যাত যশ চোপড়ার সান্নিধ্যে

সে সময় যশ চোপড়া বলিউডে এতই প্রভাবশালী ছিলেন যে-রাশিয়ান সম্রাট জারের সাথে তুলনা করা হতো তাকে। ১৯ বছর বয়সে পকেটে ২০০ রুপি নিয়ে ১৯৫১ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে যশ চোপড়া মায়ানগরী মুম্বাইয়ে আসেন। যশ চোপড়ার আদি বাড়ি পাকিস্তানের লাহোরে। দেশভাগের কারণে জন্মভূমি ছেড়ে প্রথম চলে আসেন ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের জলন্ধরে। সেখানে লেখাপড় শেষ করে বড়ভাই বলদেব রাজ চোপড়ার আহ্বানে মুম্বাই পাড়ি জমান। সাত বছর তিনি তাঁর ভাই রাজ চোপড়ার সহকারী হিসেবে সিনেমা পরিচালনার কাজ করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি তাঁর পরিচালনায় প্রথম ছবি নির্মাণ করেন ‘ঢুল কা ফুল’ নাম দিয়ে। তাঁর নির্মিত দ্বিতীয় ছবি হচ্ছে ১৯৬৫ সালে নির্মিত ‘ওয়াক্ত’।

যশ চোপড়ার ছবি মানেই নিটোল প্রেমের গল্প। কাশ্মির-শিমলা-মানালির বরফাচ্ছাদিত পরিবেশে নায়ক-নায়িকার রোমান্স ও গানের দৃশ্য। যশ চোপড়া হয়ে উঠেন বলিউডের ‘কিং অব রোমান্স’। ১৯৭১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন তার নিজের প্রযোজনা হাউস ‘যশোরাজ ফিল্মস। একটাই অ্যাকশন ফিল্ম তিনি তৈরি করেন তার জীবনে; সেটা হচ্ছে অমিতাভ বচ্চন অভিনীত দিওয়ার (১৯৭৫)। আশির দশকে অ্যাকশন মুভির দাপটে তাঁর পরিচালনায় পরপর পাঁচটি ছবি সুপার ফ্লপ হয়। তাই তিনি ছবি পরিচালনায়আগ্রহ হারিয়ে প্রযোজনা ব্যবসায় মন দেন।

তাঁর বড় ছেলে আদিত্য চোপড়া বাবার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। ১৯৮৮ সালে আমির খানের ‘কেয়ামাত সে কেয়ামাত তক’ সুপারহিট হলে বলিউডে রোমান্টিক ছবির জয়যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু যশ চোপড়া রোমান্টিক ছবি করার জন্য মনমতো নায়ক পাচ্ছিলেন না। হলিউড মুভি ‘dead calm’ দেখার পর আদিত্য চোপড়াহিন্দিতে এ রকম একটা মুভি নির্মাণ করতে চাচ্ছিলেন। dead calm মুভিতে দেখান হয় একজন বিবাহিত দম্পতির সুখী জীবন তছনছ করে ফেলে মানসিক বিকারগ্রস্ত এক লোক। আদিত্য চোপড়া হিন্দিতে এর নাম নির্ধারণ করে ফেলেন ‘ডর’। পিতা যশ চোপড়াকে আদিত্য বলেন, এই কাহিনি নিয়ে কম বাজেটের একটা ছবি বানাবেন।

যশ চোপড়া বললেন, ‘কম বাজেট নয়, বড় বাজেট নিয়েই এই ছবিটা তুমি করতে পারো। কাশ্মিরে লোকেশান আর সুরেলা গান দিয়ে এই ছবিতেও রোমান্টিক আবহ আনা যায়। তুমি প্রধান চরিত্রে দুই নায়ক নায়িকা আর মানসিক বিকারগ্রস্ত চরিত্রের জন্য একজন অভিনেতাকে সিলেক্ট করো’।

যেই কথা সেই কাজ। প্রধান চরিত্রে সিলেক্ট করা হলো সানি দেউল আর জুহি চাওলাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো কে করবে তৃতীয় চরিত্র? চরিত্রটি পুরোপুরি নেগেটিভ ও খল চরিত্রের। কোনো নায়ক জেনেশুনে এই চরিত্রে অভিনয় করবে না। এটা যে পুরোপুরি ‘প্রফেশনাল সুইসাইড’। আদিত্য চোপড়া কাউকেই রাজি করাতে পারলেন না। আমির খান স্ক্রিপ্ট শোনার সাথে সাথেই না করে দিলেন। অজয় দেবগন ও সঞ্জয় দত্তও না করলেন। আদিত্য চোপড়া তার বাবাকে দেখালেন শাহরুখের দিওয়ানা মুভির গান। যশ চোপড়া যখন দেখলেন তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নাই, তাই শাহরুখকে তৃতীয় চরিত্রের জন্য নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলেন। যশ চোপড়া আদিত্যকে নির্দেশ দিলেন-শাহরুখকে যশরাজ ফিল্মসের স্টুডিওতে নিয়ে আসতে।

এই সেই যশরাজ ফিল্মস যেখানে পরবর্তীকালে শাহরুখ ‘ঘরের ছেলে’ হিসেবে আবির্ভুত হবেন। যশ চোপড়ার চোখে পরবর্তীকালে শাহরুখ খান ছাড়া আর কোনো নায়ককেই রোমান্টিক চরিত্রের জন্য পছন্দ হয়নি। ‘ডর’ ছাড়াও আরেকটি মুভিতে শাহরুখ খানকে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। সেটি হচ্ছে আব্বাস-মাস্তান পরিচালিত ‘বাজিগর’। দুটো ছবিতে অভিনয় করেই শাহরুখ খান বলিউডকে জানান দেন-‘আমি আসছি রাজত্ব করতে’। ‘ডর’ এবং ‘বাজিগর’ মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালে। তাই ১৯৯৩ সাল শাহরুখের উত্থানের বছর। সে কাহিনি আগামীকাল। (চলবে...)

ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/এআই/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিনোদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :