মুক্তিযোদ্ধা হত্যায় যশোরে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর

যশোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:৪৯ | প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০১৭, ২৩:৫২

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বর হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। তারা হলেন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা আবদুল মোকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ুর।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন ঢাকাটাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত রবকুল মন্ডলের মেজো ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন। ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন গ্রামের বাদল সর্দারের বাড়িতে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কতিপয় চরমপন্থী তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই দিনই নিহতের ভাই মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

দীর্ঘ চৌদ্দ বছর পর ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয়। রায়ে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির দুই আঞ্চলিক নেতা দুর্লভপুরের মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আব্দুল মোকিম ও একই গ্রামের মৃত আকছেদ আলীর ছেলে গোলাম রসুল ঝড়ুসহ তিনজন আসামিকে মৃত্যুদ-াদেশ এবং দুর্লভপুরের মৃত কুদরত আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবু বক্করের ছেলে হিয়াসহ দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। বাকি ১৬ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

মামলার রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিলসূত্রে ফাঁসির দ-াদেশপ্রাপ্ত এক আসামি ও যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ পাওয়া দুজন আসামি আমিরুল ইসলাম ও হিয়ার দ-াদেশ মওকুফ করা হয়। মোকিম ও ঝড়–র ফাঁসির আদেশ বহাল থাকে। বৃহস্পতিবার রাতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যক্রর হয়।

মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন দুবার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি কৃতী খেলোয়াড় হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ভারতের পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি হায়ারে হা-ডু-ডু খেলেছেন।

নিহত মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বরের ছেলে কুমারী ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি কয়েক দিন আগেই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ও চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়। তবে দিনক্ষণ জানায়নি তারা। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দীর্ঘ ২৩ বছর পর বাবার হত্যার বিচার পাচ্ছি। অবশ্যই খুশি। আমার নিরপরাধ পিতা হত্যাকা-ের পর জনযুদ্ধের সময় কত হুমকি সহ্য করেছি। নিজেদের জীবন বাঁচাতে খুনিদের জীবন রক্ষার ব্যবস্থা করে দিতে হয়েছে। শাস্তি কার্যকর হওয়ায় আমরা খুশি।’

হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানান মনোয়ারের স্ত্রী চায়না খাতুন। তিনি বলেন, ‘একসময় বছরের পর বছর আমরা চোখের জলে বুক ভাসিয়েছি। আল্লাহ মুখ তুলে তাকিয়েছেন। তার দরবারে হাজার শুকরিয়া। খুনি দুজনের ফাঁসি কার্যকর হলো।’

নিহতের ছোট ভাই মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বলেন, ‘একসঙ্গে দুই ভাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। কত স্মৃতি আছে আমাদের। সেই ভাইকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রাণপ্রিয় ভাইকে হারিয়ে নীরবে-নিভৃতে ডুকরে ডুকরে কেঁদেছি।’ দুই যুগ পরে হলেও খুনিদের ফাঁসি হওয়ার সংবাদ শুনে ভালো লাগছে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :