বিপিএলে বলে বলে জুয়া
বাড্ডার একটি ছোট্ট সেলুন। একটু পরপরই সেলুনের মালিক মোবাইলের কল রিসিভ করছেন। আবার কখনও বলছেন, চিটাগং দুই হাজার, কখনও বলছেন কুমিল্লা তিন হাজার। বুঝতে বাকি রইল না, বিপিএলের ম্যাচ ঘিরে চলছে জুয়ার তুমুল আয়োজন। এ তো গেল শুধু বিপিএলে কোনো ম্যাচের জুয়ার হিসাব-নিকাশ। বিপিএলে ম্যাচ শুরু হলে প্রতি ওভারে, প্রতি বলে শুরু হয় জুয়ার আসর। স্থান, কাল এবং পাত্র ভেদে বল প্রতি ২ টাকার বাজিও ধরা হয়। আবার কোথাও এক লাখ টাকাও বাজি ধরা হয়। বিপিএল নিয়ে যে ঢাকার অলিতে-গলিতে জুয়ার আসর বসে, বিষয়টা সামনে এসেছে বাড্ডায় বিপিএল জুয়া নিয়ে এক তরুণের নিহত হওয়ার পর। আগেও বিপিএলের জুয়াকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে।
জানা গেছে, দলের হার-জিত, পরের বলে কত রান বা ছয়-চার হবে কি না, পরের ওভারে ব্যাটসম্যান আউট হবেন কি না, একজন বোলার কত উইকেট পাবেন, ব্যাটসম্যান কত রান করবেন, দলের কত রান হতে পারে, নির্দিষ্ট দল কত রান বা উইকেটের ব্যবধানে জিতবে ইত্যাদি ছোটখাটো নানা বিষয় নিয়েই চলছে প্রকাশ্যে বাজি ধরা। বাজির দরও ঠিক করেন নিজেরাই। মোহাম্মদপুর এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ী এলাকার চায়ের দোকান, সেলুনগুলোতে বিপিএল ঘিরে প্রতিদিনই বসছে জুয়ার আসর। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জুয়াড়িরা সামনাসামনি না থেকে ব্যবহার করছেন মোবাইল ফোন এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এসবের মাধ্যমেই তারা প্রতি ম্যাচ, বল, ওভার কিংবা ব্যাটসম্যানের রানের দর ঠিক করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গ্রুপ করে বল প্রতি জুয়া খেলা চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দশক ধরে দেশে যে ক্রিকেট উন্মাদনা দিন দিন বাড়ছে। এ উন্মাদনাকে এক শ্রেণীর জুয়াড়ি তাদের সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। প্রথমদিকে জুয়াড়িরা শহরকেন্দ্রিক তৎপরতা শুরু করলেও এখন তা ছড়িয়ে দিচ্ছে গ্রামে। অনেকটা প্রকাশ্যেই চলছে এ জুয়ার আসর। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা তেমন চোখে পড়ছে না।
ক্রিকেট নিয়ে জুয়া নতুন নয়। ২০১৪ সালে ঢাকায় ধরা পড়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জুয়াড়ি অতনু দত্ত। তাকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানতে পারে, ওই জুয়ার সঙ্গে আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ও নিরাপত্তা ইউনিটের কর্মকর্তা ধরম সিং যাদব জড়িত। রাজশাহীতে এ বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ক্রিকেট জুয়া নিয়ে বিরোধে নিহত হন এক যুবক। এর আগে জুয়াড়িদের সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগে জাতীয় দলের খেলোয়াড় আশরাফুল ইসলামসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৭ সেপ্টেম্বর/জেইউএম)