কিং খানের বেড়ে উঠা- ৯

বলিউডে শাহরুখ ‘ম্যানিয়া’ শুরু যেভাবে

আমিনুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:০৪ | প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ১৪:৫৬

১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ নামে দুটি হিন্দি সিনেমার নায়কের চিরাচরিত চরিত্রকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। এই দুই সিনেমায় দেখান হয় নায়ককে ‘জেন্টলম্যান’ হওয়ার দরকার নেই। অমিতাভ বচ্চন যেসব অ্যাকশনধর্মী সিনেমায় অভিনয় করতেন, চরিত্র যাই থাকুক না কেন-পুলিশ, স্মাগলার, শ্রমিক বা মাতাল- সব চরিত্রে একটা নীতিবোধ থাকত। চরিত্রে সততা থাকত। কিন্তু এই দুটি সিনেমায় শাহরুখ খানের চরিত্র আগের সব ধ্যানধারণাকে সম্পূর্ণ চুরমার করে দেয়।

‘ডর’ এ শাহরুখের প্রথম দৃশ্য শুরু হয় নায়িকার বাড়িতে হলি উৎসব উদযাপনের মধ্য দিয়ে। শাহরুখের নাম ছিল রাহুল। সুনীল (সানি দেওল) তার বউ কিরনকে (জুহি চাওলা) সাথে নিয়ে যখন হলি উৎসব উদযাপনে মত্ত, রাহুল চরম উৎসাহ নিয়ে তখন ঢোল বাজাতে ব্যস্ত। যশ চোপড়ার ছেলে আদিত্য চোপড়া সবসময় ভয় পেতেন এই ভেবে যে-আমিরখান যেহেতু এই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, শাহরুখ খান আসলে সেটা কতটুকু পারবেন। কিন্তু শাহরুখের ঢোল বাজানো ও হলি উৎসব উদযাপনের দৃশ্য দেখে আদিত্য চোপড়া ভবিষৎবাণী করলেন, ‘এই সিনেমায় শাহরুখ একেবারে ফাটিয়ে দেবে। আমি আর আমির খানকে মিস করছি না।’

রাহুলরুপী শাহরুখ এই মুভিতে একাকী, মায়ের দুঃখে কাতর একজন অসামাজিক মানুষ। রাহুলের মা ১৮ বছর আগে মারা যান। রাহুল নায়িকার পিছু নেয় এবং ভয় দেখাতে চায়। যখন কিরণ রাহুলকে বুঝিয়ে দেন যে-স্বামী সুনীলকে রেখে তার পক্ষে রাহুলকে ভালোবাসা সম্ভব নয়। তখন রাহুল হিংস্র হয়ে পড়ে। সে সুনীল ও কিরনের পিছু নেয়। সুনীলকে ছুরিকাঘাত করে কিরনকে ছিনিয়ে নিতে চায়। সুনীল রাহুলকে নির্দয়ভাবে পেটাতে থাকে এবং শেষ পর্যায়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে। মারা যাওয়ার আগে রাহুলের সেই বিখ্যাত ডায়লগ ‘কি-কি-কি-কি-কি-কি- কিরন...।’

ছবিতে অভিনয় করার সময়েই শাহরুখ বুঝে গিয়েছিলেন, সানি দেউল তাকে যতই পিটাবেন, দর্শক ততই তার জন্য সমবেদনা জ্ঞাপন করবে। যতই তিনি ক্ষ্যাপাটে প্রেমিক হোন না কেন।

বাস্তবে তাই হলো। ভালো চরিত্রের সানি দেউলকে বাদ দিয়ে, মন্দ চরিত্রের শাহরুখকে পছন্দ করল তামাম দর্শক। ছবি মুক্তির পর সানি দেউল অভিযোগ করলেন, ছবিতে তার চরিত্রটিকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়নি। বরং শাহরুখের চরিত্রের দিকে মনোযোগী হয়েছেন পরিচালক। সানি দেউল আর কোনোদিন শাহরুখের সাথে অভিনয় করেননি।

‘বাজিগর’ এর হালচাল

‘বাজিগর’ মুভিতে শাহরুখের অভিনয় আরও হিংস্র। নিজ হাতে তিনি প্রেমিকাকে হত্যা করেন উঁচু ভবন থেকে ফেলে দিয়ে। পিতার প্রতি অপমানের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এ কাজ করেন তিনি। প্রেমিকার বাবা শাহরুখের পিতাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছিলেন এক সময়। সে জন্য তিনি এ কাজ করেন। পরিচালক আব্বাস-মাস্তান জুটি নিজেরাই এই ছবির ভবিষৎ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন। কিন্তু শাহরুখ চিত্রনাট্য পড়েই এই ছবিতে মনপ্রাণ ঢেলে অভিনয় করেন। ছবি মুক্তির আগে বেশ কিছু জায়গায় এই মুভির প্রিমিয়ার শো হয়। কি আশ্চর্য! শাহরুখের নিষ্ঠুরতা দেখে দর্শক একটুও বিরূপ ভাব পোষণ করেনি। বরং শাহরুখের প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব দেখে হাততালি দিয়েছে দর্শক।

‘বাজিগর’ মুভির প্রচারণা উপলক্ষে শাহরুখ ছবির অন্যান্য কলাকুশলীদের সাথে লন্ডন যান। এটাই শাহরুখের প্রথম পাশ্চাত্য ভ্রমণ। বাজিগর মুক্তির পরের দিন নির্মাতা করন জোহরের বাবা যশ জোহর শাহরুখকে ফোন করে বললেন, ‘বেটা! বাজিগর সুপারহিট হচ্ছে, তুমি প্রাণ খুলে লন্ডন ঘুরতে পার।’

‘বাজিগর’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৩ সালের ১২ নভেম্বর। আর ‘ডর’ মুক্তি পেয়েছিল পরের মাসে ২৪ ডিসেম্বর। পরপর দুই মাস দুটি সুপারহিট মুভি উপহার দিলেন শাহরুখ। পুরো বলিউডে ব্যাপক হইচই। একজন নায়ক কী করে মন্দ চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক হৃদয় জয় করে ছবি সুপারহিট বানায়।

ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা হওয়ার আগেই শাহরুখ এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিয়ে বসলেন যে, এ বছর তিনিই পাবেন শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতার পুরস্কার। পরে দেখো গেল সত্যি সত্যিই শাহরুখ এই দুই ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পান। তবে শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতার পুরস্কারটি অল্পের জন্য পেয়ে যান পরেশ রাওয়াল ‘স্যার’ মুভিতে অভিনয়ের সুবাদে। আবার সমালোচকদের দৃষ্টিতে সেরা অভিনেতার পুরস্কারটি পেয়ে যান শাহরুখ খান।

বলিউডে শুরু হয় শাহরুখ ম্যানিয়া। যদিও বলিউড বাদশাহ বা কিং খান উপাধি তিনি তখনও পাননি। যার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত। (চলবে...)

(ঢাকাটাইমস/১৭নভেম্বর/এআই/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :