লস্করে যোগ দেয়া কাশ্মিরি তরুণ ফুটবলারের আত্মসমর্পণ
কিছুদিন আগে অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে ছবি পোস্ট করেছিলেন নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ভারতের কাশ্মিরের তরুণ ফুটবলার মজিদ ইরশাদ খান (২০)। ছেলের এই ছবি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা আয়েশা বেগম।
ছেলেকে বাড়িতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে একটি ভিডিও পোস্ট করেন আয়েশা। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমি আমার ছেলের জন্য অপেক্ষা করছি। আমি চাই সে ফিরে আসুক এবং আবার ফুটবল খেলায় মেতে উঠুক।’
মায়ের আর্তনাদে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে তরুণ এই ফুটবলার।
বেশ কিছু দিন আগেই বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান মজিদ। জল্পনা চলছিল তিনি বিচ্ছিন্নতাবাসী সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবাতে নাম লিখিয়েছেন। কিন্তু পরে সেই জল্পনাই সত্যি হয়। একে ৪৭ রাইফেল হাতে তার ছবি উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ে। ছেলের লস্করে নাম লিখিয়েছে খবর পাওয়া মাত্রই মজিদের পরিবারের মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে। অবাক হন মজিদের বন্ধুরাও। ছেলেকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য তার বাবা-মা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান।
কাশ্মিরের পুলিশও মজিদকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। শেষ পর্যন্ত বাবা-মায়ের আর্জিতে সাড়া দিয়ে ওই দিন রাতে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন মজিদ।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার শন পোলকের মতো দেখতে বলে মজিদকে ‘কাশ্মিরের পোলক’ বলে ডাকা হয়। মেধাবী ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি ঝোঁক। নিজেকে এক জন দক্ষ ফুটবলার হিসেবেও তৈরি করেছেন। মজিদের বাবা এক জন সরকারি কর্মচারী, মা গৃহিণী। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে মজিদ। পড়াশোনা এবং ফুটবলের পাশাপাশি এলাকায় সেবামূলক কাজের জন্যও তার বেশ নামডাকও আছে। যে ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই খেলা আর পড়োশোনা নিয়ে থাকে, হঠাত্ তার এই পরিবর্তনে পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব তো বটেই, পাড়া প্রতিবেশীরাও বেশ অবাক হন। মূল স্রোতে ফিরে আসার জন্য ছেলেকে আর্জি জানান মজিদের বাবা-মা।
নিউজ এইট্টিন-কে মজিদের বাবা ইরশাদ খান জানান, ছেলের জীবন নিয়ে তিনি খুবই শঙ্কিত। মায়ের কাছে ছেলেকে ফিরে আসুক বলেও জানান তিনি। স্ত্রীকে দেখিয়ে বলেন, ‘ছেলেরে খবরটা পেয়ে একেবারে ভেঙে পড়ছে সে। কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছে না যে ছেলে জঙ্গি দলে ভিড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার এখন ৫৯ বছর বয়স। বুড়ো হয়েছি। কোনও দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সেটা সহ্য করার সাহস আর নেই। আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা, ছেলে যেন ফিরে আসে।’
কাশ্মিরের ইনস্পেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বলেন, ‘স্থানীয় জঙ্গিদের বার বারই আমাদের তরফে অনুরোধ করা হচ্ছে আত্মসমর্পণের জন্য। সন্ত্রাস ছেড়ে যাতে তারা মূল স্রোতে ফিরে আসে সেই চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনও দেয়া হবে।’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
(ঢাকাটাইমস/১৭নভেম্বর/এসআই)