শীতের হাওয়া সবজির বাজারে তবে...

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:১৯

আউয়াল খাঁন, ঢাকাটাইমস

‘আমি দিনে আনি দিনে খাই, কয় টাকা আর পাই! এত দামের তরকারি, চাইল, তেল কিনতে যে টাকা দরকার তা কামাইতে গেলে শইলডায় আর কিছু থাকে না। কিন্তু পরিবার আছে তো।’ বলছিলেন রামপুরা এলাকার ভ্যানচালক আসলাম। 

চাল থেকে শাকসবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের গরম দামে নাভিশ্বাস ওঠানো বর্ষা-শরৎ শেষে শীতের আগমনীতে একটু স্বস্তি আশা করেছিল ক্রেতারা। এরই মধ্যে বাজারে আসছে বিভিন্ন শীতের সবজি। সপ্তাহের ব্যবধানে ধাপে ধাপে শীতকালীন সবজির দাম কমবে বলে ধারণা করা হলেও ক্রেতারা বেশি দামেই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন এখনো।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে আকাশ ছুঁয়েছিল যেসব পণ্যের দাম, তা কিছুটা কমেছে। তা-ও আগের দামের চেয়ে এখনো অনেক বেশি ওপরে অবস্থান করছে।

ঝাঁজ বাড়িয়ে গত মাস দেড়েক আকাশচুম্বি চড়া পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ৯০ টাকা থেকে নেমে বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়।

কিছুটা দাম কমেছে শখের ইলিশের। শীতের সবজির অন্যতম সিমের দামও কমেছে অনেকটা। মাস খনেকের মধ্যেই সব ধরনের শীতকালীন পণ্যের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে এসে যাবে বলে মনে করেন রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও রামপুরা বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতারা। 

চালের দাম কিছুটা কমলেও বৈশাখের নতুন চাল ওঠার আগে পর্যন্ত আর কোনো স্বস্তির আশা নেই বলছেন ব্যবসায়ীরা। রামপুরার চালের বিক্রেতারা খুচরা বাজারে বর্তমানে মোটা চাল ৪০-৪২ টাকা, পাইজাম ৪২-৪৪ টাকা, আঠাশ ৫০-৫২ টাকা ও মিনিকেট জাতভেদে ৬০-৭০ টাকার ওপরে। এদিকে পোলাও চালও বিক্রি হচ্ছে ৯০-১১০ টাকায়।

স্বস্তির জায়গায় আসেনি শীতকালীন সবজি

হেমন্তের মাঝামাঝিতে শীতের নতুন সবজিতে বাজার ভরে গেলেও সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে এগুলোর দাম। মালিবাগ বাজারের সবজি ক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাজারে তো শীতের সবজি দেখা যায়, কিন্তু দাম তো রাখে বর্ষার মতো।’

বাজার ঘুরে দেখা যায়, সিম বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়, যা আগে ছিল ১২০-১৩০ টাকা। ফুলকপি-বাঁধাকপি আকারভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাউ ৩৫-৫৫ টাকা, লাল টমেটো ৮০-১০০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৬০ টাকা।

এ ছাড়া  বেগুন লম্বা ৭৫-৮০ টাকা, বেগুন গোল ৫৫-৬০ টাকা, আলু ২০-২৫ টাকা, লাল আলু২৫ টাকা, গাজর ৯০-১০০ টাকা, পটল ৪৫-৬০ টাকা।

দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। দেশি পেঁয়াজ ৭৫-৮০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসার সম্ভাবনা থাকায় চলতি মাসেই পেঁয়াজের দাম আরো কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন রামপুরা ও কারওয়ান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা। দেশি রসুন ১২০-১৩০ টাকা, ভারতীয় রসুন ১০০ টাকার ওপরে, চিনি ৫৫ টাকা ও মসুরের ডাল দেশি ৯৫-৯৮ টাকার ওপরে এবং ভারতীয়টা ৬৫ টাকা।  

আগের সপ্তাহের মতোই লালশাক, সরিষাশাক, মুলাশাক, কচুশাক ও পাটশাক ২০-২৫ টাকা আঁটি হাঁকছেন বিক্রেতারা, এ ক্ষেত্রে মুলোমুলি করে যা কমানো যায়। লাউশাক ৩৫-৫০ টাকা ছুঁয়েছে ও পুইশাক ৩০-৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।  

বাজারভেদে ব্রয়লার মুরগি ১২০-১৩৫ টাকা, লাল মুরগি ১৭০-১৭৫ টাকা, দেশি মুরগি আকারভেদে ৩০০-৪৫০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৪৮০-৫২০ টাকা ও খাসির মাংস ৭০০-৭৫০ টাকা কেজি।  

দেশি মুরগির ডিম ও হাঁসের ডিম ১৫০ টাকা ডজনে বিক্রি হলেও ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়।

ইলিশের দাম কিছুটা কমেছে

ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে বেশ কম দামে মিলেছিল রুপালি মাছটি। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই শখের মাছটির দাম চড়ে উঠে সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। গত শুক্রবার (১০ নভেম্বর) রামপুরা বাজারের মাছের ক্রেতা খলিলুর রহমান যেমন বলছিলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে যে মাছ নিলাম জোড়ায় ১৭০০ টাকা, ওইটা আজকে শেষ দাম চাচ্ছে ৩ হাজার টাকা। তখনি বুঝে গেছি এক বছরের জন্য ইলিশ মাছ সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।’

তবে ওই ক্রেতার আশঙ্কা আর বাড়েনি। চলতি সপ্তাহে ইলিশের দাম কমে এসেছে। একই আকারের জোড়া ইলিশের দাম কমে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রামপুরার ইলিশ মাছ বিক্রেতা শামীম সরদার বলেন, ‘নতুন মৌসুম না আসা পর্যন্ত ইলিশের দাম এখন তেমন কমবে না। গত সপ্তায় তিন হাজারে যে জোড়া বিক্রি করছি, আজকে সেই রকম জোড়া দুই হাজারে দিচ্ছি।’ তবে এই দাম আবার বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

এদিকে অন্যান্য মাছের বাজারেও সন্তুষ্টি ফেরেনি ক্রেতাদের। কাচকি মাছ কেজি ৩০০-৩২০ টাকা, দেশি শিং ৫৫০-৬৫০ টাকা, চিংড়ি ৫০০-৫৫০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৫৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০-২০০ টাকা, কই ৩৫০-৪০০ টাকা, মেনি ৩০০-৩৫০ টাকা, ছোট পুঁটি ৩০০-৩২০ টাকা, বাইম ৩৫০-৪০০ টাকা ও টেংরা মাছ ৩০০-৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/মোআ)