অমানবিক পরিশ্রমে স্কুলের দপ্তরিরা

রিমন রহমান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর ২০১৭, ১২:০৪

সকালে শ্রেণিকক্ষের তালা খুলে দিয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিরা। বিকালে স্কুল বন্ধ করে কেবল সন্ধ্যা পর্যন্ত একটু অবসর। সূর্য ডোবার পর এবার তাদের দায়িত্ব সারারাত জেগে স্কুল পাহারার। সকালে আবার দায়িত্ব স্কুলে। দিনরাত এভাবেই অমানবিক পরিশ্রম করছেন খোদ সরকারি স্কুলের দপ্তরি কাম প্রহরীরা।

এখানেই শেষ নয়। কখনও কখনও স্কুলের শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কাজও করতে হচ্ছে। দিনে স্কুল চলার সময়ে কাজেরও শেষ নেই তাদের। সুইপারদের মতো টয়লেট পরিষ্কার থেকে শুরু করে মালির মতো ফুলবাগান পরিচর্যাও করতে হচ্ছে তাদের।

দপ্তরিরা বলছেন, দিনে-রাতে পরিবারের কাজ তো দূরের কথা; ঘুমানোর মতো ঘণ্টা দুয়েক সময়ও পান না তারা।

দেশের অন্য স্থানের মতো রাজশাহীতেও কয়েক বছর ধরে দপ্তরি কাম প্রহরীদের নিয়োগ চলছে।

শিক্ষা অফিস বলছে, জেলার এক হাজার ৪৪টি স্কুলের মধ্যে প্রায় অর্ধেকটিতে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে দপ্তরি কাম প্রহরী নিয়োগ শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই নিয়োগ চলছেই। নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মচারীদের চাকরির কোনো নিশ্চয়তা না থাকলেও দিন-রাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে নিশ্চিতভাবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অমানবিক পরিশ্রমের কারণে ধীরে ধীরে স্কুলের দপ্তরি কাম প্রহরীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। জেলার অন্তত ১০টি স্কুলের প্রহরীদের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা গেছে। তবে বাস্তব কারণেই প্রহরীরা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।

জেলার মোহনপুর উপজেলার একটি স্কুলের একজন দপ্তরি বলেন, রাতে স্কুল পাহারাসহ দিনে অফিসের সব কাজই তাদের করতে হয়। দিন-রাত এমন পরিশ্রমে তাদের মনোবল এখন ভাঙতে শুরু করেছে। তারপরেও কখনও কখনও শিক্ষকরা তাদের দিয়ে ব্যক্তিগত কাজও করিয়ে নেন। মাস শেষে হাজিরার ভিত্তিতে তারা বেতন পান। মাসে কোনো দিন অনুপস্থিত থাকলে তাদের বেতন থেকে কেটে নেয়া হয় ওই দিনের মজুরি। অথচ তাদের সরকার নির্ধারিত সর্বসাকুল্যে বেতন সাত হাজার টাকা।

দপ্তরিরা বলছেন, দিনরাত দায়িত্বের কথা জেনেও তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সব কাজই করেন। কিন্তু এখন সুইপারের কাজ করাটা মানতে পারছেন না তারা।

এ বিষয়ে কথা বলতে থানা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সানাউল্লাহর দপ্তরে গেলে তিনি ব্যস্ততার কারণে কথা বলতে চাননি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নফীসা বেগমকেও তার কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী শ্রম আদালতের আইনজীবী সাইফুর রহমান বলেন, আট ঘণ্টার বেশি কোনো শ্রমিক, কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীকে কাজ করানো যাবে না। বাংলাদেশের কোনো আইনই এটা সমর্থন করে না। দপ্তরি কাম প্রহরীদের দিন-রাত কাজ করানোটা অমানবিক।

সাইফুর রহমান বলেন, আট ঘণ্টার জায়গায় কোনো শ্রমিককে ১০ ঘণ্টা কাজ করালে অতিরিক্ত দুই ঘণ্টার জন্য তাকে চার ঘণ্টার ওভারটাইম পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু দপ্তরিদের ক্ষেত্রে তা হয় না। দপ্তরিদের চাকরির নীতিমালাটি সংশোধন করা জরুরি।

(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/ব্যুরো প্রধান/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :