১৬ বছর পর সীমান্তে বাবা-মেয়ের প্রথম সাক্ষাৎ

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:১০ | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৩৩

মহিউদ্দিন মিশু, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

জন্মের পর বাবা-মায়ের হাত ধরে পৃথিবীকে চিনতে শিখে সন্তানরা। কখনও কখনও বাবা কাছে না থাকলে কয়েক দিন, কয়েক মাস কিংবা কয়েক বছর পর বাবার সঙ্গে পরিচয় হয় সন্তানের। কিন্তু জন্মের ১৬ বছর পর বাবার সঙ্গে দেখা হবে বলে কথা! প্রচণ্ড উত্তেজনায় ফুটছিলেন ভাগ্য বিড়ম্বিত এক ষোড়ষী কন্যা রনিকা দেবী।

ঘটনাটি কোন নাটক বা ফিল্মের নয়। ২০০১ সালে ভারতীয় নাগরিক এনিলু সিং  বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে কুলাউড়া সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি (তৎকালীন বিডিআর) হাতে আটক হন।  তখন তার কন্যা রনিকা দেবী নবজাতক। মৌলভীবাজার কারাগারে ১৬ বছর কারাভোগের পর নিজ দেশে ফিলে গেলেন ওই ভারতীয় নাগরিক।

শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর চেকপোস্ট সীমান্ত পথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উনুকোটির কৈলাশহর এলাকার কলারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মেরা সিং-এর ছেলে।

১৬ বছর পর বাবাকে কাছে পাওয়ার বাঁধভাঙা আনন্দে সকাল থেকেই আখাউড়া সীমান্তের ওপারে রাজ্যের আগরতলা নো-ম্যান্সল্যান্ডে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন ষোড়ষী কন্যা রনিকা দেবী। বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের আইনি প্রক্রিয়া শেষে মৌলভীবাজার জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ দুপুরে আখাউড়া স্থলবন্দর চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে এনিলু সিং-কে হস্তান্তর করেন। পরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা মো. পেয়ার হোসেন আগরতলা স্থলবন্দর চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) নয়ন জ্যোতি চাকমার কাছে হস্তান্তরের জন্য এনিলু সিংকে নিয়ে সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডে যান। এ সময় বাবাকে দেখতে পেয়ে সীমান্ত রেখা ভুলে দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বাবার বুকে মাথা রেখে পরম আদরে চোখের জলে বুক ভাসালেন মেয়ে রনিকা দেবী। এসময় রনিকা তার বাবার পায়ে লুটিয়ে পড়ে ভক্তি চুম্বন করেন। বাবা-মেয়ের কান্নায় উপস্থিত সবার চোখ পানিতে ভিজে যায়।

মৌলভীবাজার কারাগারের কারারক্ষী মো. আতাউর রহমান জানান, ২০০১ সালে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে বিজিবির (তৎকালীন বিডিআর) টহল জওয়ানদের হাতে আটক হন এনিলু সিং। এ ঘটনায় কমলগঞ্জ সিপি ক্যাম্পের বিজিবি বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় তিনটি মামলা করেন। পরে মৌলভীবাজার আদালত বিভিন্ন মেয়াতে তাকে ১৭ বছর ৩ মাসের সাজা দেন।

তিনি বলেন, জেল কর্তৃপক্ষের সাজা মৌকুফে গত ৯ অক্টোবর এনিলু জেল থেকে মুক্তি পান।  কিন্তু রাষ্ট্রীয় অনুমোদন না থাকায় পরবর্তীতে মুক্তিপ্রাপ্ত কারাবন্দি হিসেবে মৌলভীবাজার কারাগারে তাকে কারাভোগ করতে হয়। পরে উভয় দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি পান ওই ভারতীয় বন্দি এনিলু সিং।

আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডে শনিবার দুপুরে তাকে হস্তান্তরের সময় আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. পেয়ার হোসেন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- ২৫ ব্যাটালিয়নের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) চেকপোস্ট ক্যাম্প কমান্ডার মো. দেলোয়ার হোসেন, মৌলভীবাজার কারাগার প্রতিনিধি কারারক্ষী মো. আতাউর রহমান, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট অমলেন্দু কুমার দাশ মিলন।

অপরদিকে আগরতলা স্থলবন্দর চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) নয়ন জ্যোতি চাকমা, ১৬৮ বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডার আজাদ সিং, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কানাই লাল দাস প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)