মোড়কে রাজস্ব আদায়ের নতুন নিয়মে ধস নামছে বেনাপোলে

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:৪৫

বেনাপোল প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

বেনাপোল কাস্টমস হাউজে ভারত খেকে আমদানিকৃত পণ্যের মোড়কের মূল্য ও পণ্যের মূল্য একই বিবেচনায় এনে রাজস্ব আদায়ের নতুন নিয়মের ফলে বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমে গেছে। ফলে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নামতে শুরু করেছে। 
যেসব পণ্য ইতিমধ্যে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে রাজস্ব বোর্ডের এ ধরনের নির্দেশের কারণে অধিকাংশ পণ্যের চালান খালাস নিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। 
কাস্টম সূত্রে জানা যায়, আমদানিকৃত পণ্যের সঙ্গে আসা মোড়কের শুল্ক আদায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে একধরনের ধোঁয়াশা ছিল। গত ৯ অক্টোবর এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস নীতি) মো. লুৎফর রহমান কাস্টমস হাউজ ও শুল্ক স্টেশনগুলোতে এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেন। 
তাতে বলা হয়, আমদানিকৃত পণ্যের সঙ্গে মোড়কের মূল্য ও পণ্যের মূল্য একই বিবেচনায় নিয়ে তা শুল্কায়ন করতে হবে। বিশেষ করে পণ্যের সঙ্গে একক ও অভিন্ন সত্তা হিসেবে বিবেচিত সব ধরনের প্যাকিং কন্টেইনার, ধারক, প্যাকিং ম্যাটেরিয়ালের খরচ পণ্যের পরিশোধযোগ্য মূল্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না থাকলে তার আলাদা মূল্যায়ন করে শুল্কমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। 
বেনাপোল কাস্টমস হাউজে বিভিন্ন মোড়কের একটি নির্দিষ্ট মূল্য বিবেচনায় এনে শুল্কায়ন করা হচ্ছিল। 
কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বেনাপোল কাস্টমস হাউজ থেকে ওই মূল্যে শুল্কায়ন না করে আমদানিকৃত পণ্যের যে মূল্য থাকবে সেই মূল্যে মোড়কেরও শুল্ক আদায় করতে হবে বলে নির্দেশনা জারির পর থেকে আমদানিকারকের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। 
এনবিআরের এমন সিদ্ধান্তে প্যাকেটসহ পণ্য আমদানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে প্যাকেটের মূল্যায়ন শুরু হলে একই প্যাকেটের ওপর দুই দফায় অর্থ পরিশোধ করতে হবে বলে মনে করছেন তারা। 
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে ৫৬ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মোট ঘাটতি ছিল ১০৩ কোটি টাকা, এর আগের অর্থবছরে ঘাটতি ৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। 
বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভারত থেকে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমে আমদানি হয় ১২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৮৩ মেট্রিক টন পণ্য। আর চলতি অর্থবছরের গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৩২৩ টন পণ্য আমদানি হযেছে। 
বেনাপোল আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, রপ্তানিকারকরা সব সময়ই পণ্যের সঙ্গে ব্যবহৃত মোড়কের মূল্য প্রধান পণ্যের সঙ্গে যোগ করে করেই বাজারে বিক্রি করে থাকে। প্যাকেটের মূল্য বাদ দিয়ে কোনো রপ্তানিকারক পণ্যের মূল্য প্যাকেটের গায়ে নির্ধারণ করে না। 
আমিনুল হক বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘোষিত শুল্কনীতির ওপর ভিত্তি করে ব্যাংক থেকে ঋণ ও ব্যক্তিগত পুঁজি বিনিয়োগ করে ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার ঋণপত্র খুলেছে। হঠাৎ করে নতুন নিয়মে শুল্কায়ন করা হলে পণ্যের মূল্য বাড়বে দ্বিগুণ। কিন্তু বর্ধিত দরে পণ্য বিক্রি সম্ভব হবে না। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে জানান তিনি। 
রাজস্ব বোর্ডের এক পত্রে বলা হয়েছে, পেন্সিল, কাজল, নেইলপলিশ বা সমজাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে ধারণসহ যেহেতু আমদানি করে ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয়, সেজন্য এ জাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে উপস্থাপিত পণ্য হিসেবে শুল্কায়ন হবে। এ ছাড়া একক ও অভিন্ন সত্তা হিসেবে বিবেচনা করে সব ধরনের প্রসাধনী, শ্যাম্পু, সুগন্ধি, খেলনা, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, পেন্সিল, কাজল, নেইলপলিশ, চকলেট, টিপস, ওয়েফার, বিস্কুট, কফি, বিভিন্ন কেমিকেল (এক কেজির প্যাকেট, জার, বোতলজাত) ও অন্যান্য যেসব পণ্য প্যাকিং আকারে ক্রেতার কাছে পৌঁছায়, সেসব পণ্যের ক্ষেত্রে মোড়কের ওজনভিত্তিক মূল্য প্রধান আমদানি পণ্যের মূল্যের সঙ্গে যোগ করে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নিরূপণ করতে হবে। তবে ক্যারেট, প্যাকেট, কন্টেইনার, কাঠের বাক্স ও সমজাতীয় প্যাকিং যা খুচরা পর্যায়ে পণ্যের সঙ্গে ক্রেতাদের সরবরাহ করা হয় না, তা এর আওতার বাইরে থাকবে। 
এনবিআর সূত্র আরো জানায়, পণ্যের প্যাকিংয়ের বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় এতদিন মাঠপর্যায়ে সিদ্ধান্তহীনতা ছিল। এ নির্দেশনার ফলে এসব বিষয়ে শৃঙ্খলা আসার সুযোগ তৈরি হবে। 
তবে আমদানিকারকরা বলছেন, এনবিআরের এই নির্দেশনার ফলে একই মোড়কের ওপর দুই দফায় মূল্য আরোপ হবে। তারা আশঙ্কা করছেন, এতে বর্তমান আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্র¯ত হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে বর্ধিত শুল্ক এড়াতে নিম্নমানের মোড়ক ব্যবহারে উৎসাহী হবেন। ফলে কার্যত সরকারের রাজস্বও কমে যাবে। 
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার শওকাত হোসেন জানান, রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সব ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।  
(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/মোআ)