রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তারেক রহমানের বিচার শুরু
রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ চারজনের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেছে আদালত।
সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ১৫ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক করেন।
মামলার অপর তিন আসামি হলেন, একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, চ্যানেলটি সাবেক সাংবাদিক কনক সারোয়ার ও মাহতির ফারুকী খান।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর একই আদালত তারেক রহমান ও কনক সারোয়ার ও মাহতির ফারুকীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। আসামিরা পলাতক রয়েছেন মর্মে সোমবার আদালতে প্রতিবেদন আসায় চার্জগঠন করে আদালত।
মামলার জামিনে থাকা একমাত্র আসামি একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালামের অব্যাহতির আবেদন শুনানিকালে নাকচ করে আদালত।
২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর ইমদাদুল হক ঢাকা সিএমএম আদালতে মামলাটিতে চার্জশিট দাখিল করেন।
২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি তারেক রহমান এবং আবদুস সালামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রেহের এই মামলাটি দায়ের করেন তেজগাঁও থানার এসআই বোরহানউদ্দিন।
পরে ওই মামলায় ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি আব্দুস সালামের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর ঢাকা সিএমএম আদালত। ওই রিমান্ড শেষে ওই বছর ১৯ জানুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টা ২৮ মিনিটে (যুক্তরাজ্য সময় (৪/১/২০১৫ ইং সন্ধ্যা ৭ টা ২৮ মিনিটে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত ‘৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ ব্যানারে এক প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন বিচারাধীন মামলার পলাতক আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ (প্রায় ৫০ মিনিট) বক্তব্য দেন। তাঁর এই দীর্ঘ বক্তব্য একুশে টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে। ওই বক্তব্যে ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি একজন রাজনৈতিক নেতার কবর জেয়ারত করেন এবং রাজনৈতিকত বক্তব্য দিয়ে নিরপেক্ষ ও ন্যায় বিচার করতে পারবেন না’ মর্মে মন্তব্য করেন, যা স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের শামিল। সেই সাথে রাষ্ট্রের অন্যতম অঙ্গ বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করার ইন্ধন যোগায়। বিডিআর হেডকোয়ার্টাস পিলখানায় আওয়ামী লীগের মুখোশপরা লোকেরা ৭৫ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করে বলেও তারেক রহমান বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দাবীদার সেনা অফিসারদের চাকরিচ্যুত করা হয় মর্মে বক্তব্য দেন। তাঁর এ ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করত সরকারের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে উস্কে দেয়ার তথা সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। ‘একটি বিশেষ এলাকার পুলিশকে দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে’ বক্তব্যের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ ও বিভক্তি সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করতে প্ররোচিত করার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রয়াস চালান। তারেক রহমান প্রশাসনের লোকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার লক্ষে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, তারেক রহমান তার বক্তব্যে ঢাকা শহরকে অন্য জেলা শহর থেকে এবং ঢাকার এক এলাকাকে অন্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার জন্য তার দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন, যার ফলে বিএনপি জামায়াতসহ ২০ দলীয় ঐক্যজোটের সমর্থকরা ৫ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের মাধ্যমে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করার উস্কানি পায় এবং তিনি বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও পরোক্ষভাবে সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি প্রদর্শন করেছেন।
তার ওই সব বক্তব্য আব্দুস সালাম এবং অন্যান্যদের সহযোগিতায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত, গণতান্ত্রিক ও আইনানুগ সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, উস্কানিমূলক বিভ্রান্তিকর তথ্যাদি একুশে টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি মধ্যরাতে ইটিভি কার্যালয়ের নিচ থেকে সালামকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর তাকে ক্যান্টনমেন্ট থানার পর্নোগ্রাফি আইনের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৬ জানুয়ারি আদালতে হাজির করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান।
(ঢাকাটাইমস/২০নভেম্বর/আরজেড/জেবি)