রংপুরে হিন্দুপল্লীতে হামলা: নিহত হাবিবের বাড়িতে ফখরুল

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০১৭, ১৪:৩২ | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৪৪

রংপুর ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

রংপুরে হিন্দুপল্লীতে হামলার সময় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো হাবিবুর রহমানের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাবিবের বাবা আবদুর রাজ্জাকের হাতে এই সহায়তা তুলে দিয়েছেন তার বাড়িতে গিয়ে।

সোমবার রংপুর সদরের শয়েলশা ঠাকুরপাড়ায় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুপল্লী পরিদর্শক শেষে ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে লাল চাঁদপুর গ্রামে হাবিবের বাড়িতে যান ফখরুল। 

ফেসবুকে ধর্মীয় অবমানাকর পোস্ট শেয়ার দেয়ার অভিযোগ তুলে গত ১০ নভেম্বর যে মিছিল থেকে ঠাকুরপাড়ায় হিন্দুপল্লীতে হামলা হয়, সেখানে ছিলেন হাবিবুর রহমানও। সেদিন হামলাকারীরা অন্তত ১১টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া ছাড়াও বেপরোয়া ভাঙচুর চালায় বেশ কিছু বাড়িতে, ভেঙে দেয়া হয় মন্দির।

এ সময় পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাদের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ায় হামলাকারীরা। পরে পুলিশ গুলি চালালে আহত হয় বেশ কয়েকজন। নিহত হন হাবিবুর রহমান।

হিন্দুপল্লীতে হামলার এই ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশে গুরুত্ব পাওয়া ঘটনাগুলোর একটি। এরই মধ্যে সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই হামলায় জড়িত এবং মদদ দেয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে একাধিক, গ্রেপ্তারও হয়েছে বেশ কয়েকজন।

সরকারি দলসহ বেশ কিছু সংগঠনের নেতা-কর্মী, সদস্যরা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী পরিদর্শন করতে গিয়ে তাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের পাশাপাশি বিচারের আশ্বাস দেন। তবে এদের কেউই হামলাকারী হাবিবের বাড়িতে যাননি।

মির্জা ফখরুল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুপল্লী পরিদর্শনে যান। সেখান থেকে বেলা ১২টার দিকে যান হাবিবের বাড়িতে। সেখানে তিনি হাবিবের বাবা আব্দুর রাজ্জাকের কাছে অর্থ সহায়তার একটি খাম তুলে দেন।

হাবিবের বাবা সাংবাদিকদেরকে তার ছেলের বিষয়ে কিছু না বললেও বলেন, ‘আমিও এই ঘটনার বিচার চাই।’

মির্জা ফখরুল হাবিবের পরিবারকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা এই ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। তদন্ত করে যারা প্রকৃত অপরাধী তাদেরকেই শাস্তি দিতে হবে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি, যারা নিরপরাধ তাদের কাউকে হয়রানি না করতে। আমরা আশা করব এই ঘটনায় নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হবে না।’

এর আগে হিন্দু পল্লীতে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকেও ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেন ফখরুল। সেখানে তিনি বলেন, ‘কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা হলেই সরকার আমাদের দোষারোধ করে। কিন্তু তখন আমি তাদের বলব, আপনারা আপনাদের খতিয়ানগুলো খুলে দেখবেন, স্টাটিসটিক দেখবেন কোন সরকারের আমলে বেশি করে এই হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার হয়েছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার হয়েছে। তাহলেই বোঝা যাবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই অত্যাচার বেশি হয়েছে।’

এই ঘটনায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপির উপর দোষ চাপানো হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আপনারা রামুর (কক্সবাজারে বৌদ্ধদের ওপর হামলা) ঘটনায় দেখেছেন যে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দই সেখানে এই কর্মকাণ্ড করেছে। একইভাবে পাবনা এবং নাসিরনগরের (ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দুদের ওপর হামলা) ঘটনাও তারা ঘটিয়েছে।’

রংপুরে হিন্দুদের ওপর হামলায় এক বিএনপি নেতার নাম এসেছে- গণমাধ্যমকর্মীদের এমন মন্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে কেউ যদি করে থাকে তাহলে তারা ব্যক্তিগতভাবে করেছে, দলীয়ভাবে নয়।’

সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করার চেষ্টা করা দূরভিসন্ধি চলছে বলেও মনে করেন ফখরুল। বলেন, ‘আমরা মনে করি রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে তারা (সরকার)।’ তিনি বলেন, ‘এই ইস্যুগুলোতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবেলা করতে হবে। যারা এই ধরনের সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, রংপুর নগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/২০নভেম্বর/আরআর/ডব্লিউবি