আমনের বাম্পার ফলনেও লোকসান গুণছে চাষিরা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:৩৪

ঠাকুরগাঁওয়ে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ধানের দামও বেশ ভালো। প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকা। তারপরও লাভের মুখ দেখছেন না চাষিরা। চাষিদের অভিযোগ, সার বীজ কীটনাশক ও শ্রমিক মজুরি অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় ভালো দামেও লোকসান ঠেকাতে পারছেন তারা।

উত্তরের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ঠাকুরগাঁও জেলা । চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৩ হেক্টর জমিতে। কিন্তু শেষদিকে বন্যার সঙ্গে বৃষ্টির অভাব দূর হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চাইতে জমিতে চারা রোপণ করা হয়। অর্থাৎ এ বছর এক লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছে। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন চাল।

এ বছর আমন চারা রোপনের শুরুতে ঠাকুরগাঁও জেলার বেশকিছু এলাকায় খরা পরিস্থিতি বিরাজ করে। চাষিরা তাড়াহুড়ো করে নিচু জমিগুলোতে আমন ধানের চারা রোপণ করেন। এরপর দেখা দেয় বন্যা। বন্যায় আমনের ক্ষেত ডুবে থাকায় এবং সময় মতো পানি নেমে যাওয়ায় এবার পোকার আক্রমণ তুলনামূলক কম দেখা দেয়।

বন্যায় প্রায় আট হাজার হেক্টর জমির চারা পানিতে পচে নষ্ট হওয়ায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চারা সরবরাহ করা হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় কৃষকরা আমন ক্ষেতে পরিচর্যা নেয় ভালোভাবে। জমিতে পরবর্তী সময়ে আর রসের অভাব হয়নি। গাম অবস্থা পর্যন্ত জমিতে রস থাকায় এবং পোকার আক্রমন তুলনামূলক কম হওয়ায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়। বর্তমানে দিগন্তজুড়ে সোনালী ধান ক্ষেত। বেশিরভাগ চাষ বসে না থেকে ধান কর্তন ও মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকা। তারপরও কৃষকরা লাভবান হতে পারছেন না বলে জানান তারা।

ঘনিমহেশপুর গ্রামের কৃষক জহির উদ্দীন ও আইয়ুব আলী জানান, আমন ধানের দাম যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরি। আগে যে মজুরকে দিতে হতো ২০০ টাকা এখন দিতে হয় সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। তাছাড়া ওই পরিমাণ মজুরি না পেলে শ্রমিকরা কাজে যায় না।

চাষি নজিব উদ্দীন জানান, একবিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিকদের মজুরি দিতে হয় তিন হাজার টাকা, রোপা লাগাতে দুই হাজার, মাহেন্দ্র ট্রাক্টর দিয়ে জমিতে তিন চাষ দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে এক হাজার, রোপা পরিচর্যা ও সার বিষ প্রযোগ করতে আরও দুই হাজারসহ প্রতি বিঘায় ব্যয় হয় প্রায় ৮ -১০ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ধান পাওয়া যায় ১৮ মণ। প্রতিমন ৮০০ টাকা হিসাবে ১৮ মন ধানের দাম দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৪০০ টাকা। তারপরও আছে ক্ষেত থেকে নিজ বাড়িতে ধান পরিবহণ।

এ হিসেবে একজন চাষি তিন মাস যে জমিতে পড়ে থাকেন তার মূল্য পাচ্ছেন না তারা।

কৃষক মোখলেসুর রহমান জানান, সরকার এ বছর ধানের দাম যা দিয়েছে কম দেয়নি। কিন্তু একজন মজুরকে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা হিসেবে মজুরি দিতে গিয়ে নিজের পাতে পড়ে শূন্য। কিছু কৃষকের বিঘা প্রতি ২/৪ হাজার টাকা লাভবান হলেও অন্যান্যদের ততটা পোষায় না।

কৃষক হামিদুর রহমান তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সরকার সার বীজ ও কীটনাশক বিষের দাম কমিয়ে দিলে এবং শ্রমিকদের মজুরি পূর্বের জায়গায় নেয়া সম্ভব হবে তবেই কৃষকেরা লাভবান হতে পারবে। অন্যথায় নয়।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে.এম মাউদুদুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, এবার আমন ধানের উৎপাদনও ভালো হয়েছে এবং বাজারে ধানের দামও বেশি। তারপরও শ্রমিকদের দাম ধানের দামের সাথে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রান্তিক চাষিরা উৎপাদিত পণ্যেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। তাই খাদ্য উৎপাদনকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে শ্রমিকদের একটা ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ করা উচিত। তবেই চাষিরা ফসল উৎপাদন করে লাভের মুখ দেখতে পারবে।

(ঢাকাটাইমস/২১নভেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :