ঢাবিতে জালিয়াতি করে তিন বছরে শতাধিক ভর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৪৭ | প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর ২০১৭, ২১:৫৯

প্রশ্ন ফাঁস ও ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হলে উত্তর সমাধানের মাধ্যমে গত তিন বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। প্রতিটি পরীক্ষায় লেনদেন হয়েছে ৪ থেকে ৭ লাখ টাকা। শুধু ঢাবি নয়, সরকারি ব্যাংক নিয়োগে ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতেও বড় চক্র জড়িত।

সম্প্রতি এ রকমই এক চক্রের হোতা এনামুল হক আকাশকে গাজীপুর ও নাবিদ আনজুম তনয়কে রংপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজ ক্রাইম ইউনিট। এরপর তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া সাত ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয় সোমবার রাতে।

ভর্তি জালিয়াতির হোতাদের সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, যেকোনো নিয়োগ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময় জালিয়াত চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে।

বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, এসব চক্র পরীক্ষায় জালিয়াতির জন্য মাস্টারকার্ডের মতো দেখতে পাতলা এক ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করছে, যার ভেতরে মোবাইল ফোনের সিম থাকে। আর পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর কানে থাকে অতি ক্ষুদ্র শ্রবণযন্ত্র। এ ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থেকে হলের ভেতরে পরীক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তর বলে দেয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতিতে সঙ্গে থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মূলত ২০১২ সাল থেকে ভর্তি জালিয়াত চক্রটি কাজ করে আসছে বলে জানান সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘তবে ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে জালিয়াত চক্রটি বেশি সক্রিয় হয়। এ সময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে শতাধিক ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছে।’ এ ছাড়া মেডিকেল ও ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় বড় একটি চক্রের সন্ধান পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ নিয়েও কাজ করছেন তারা।

এদিকে সোমবার রাতে থেকে মঙ্গলবার ভোর পর‌্যন্ত অভিযানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় ছাত্রসহ আটজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ মোল্লা নজরুল ইসলাম। মঙ্গলবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনার অন্যতম মূল হোতা নাভিদ আনজুম তনয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। আর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী আকাশ।

তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থেকে উত্তর বলে দিয়ে এবং পরীক্ষার দিন সকালে কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে আসছিল।

মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত আমরা শুধু ঢাবি নয়, ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতেও জালিয়াতির তথ্য পেয়েছি। সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিটি ভর্তি পরীক্ষায় একেকজনের জন্য ৪ থেকে ৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।’

এর আগে গত ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে অমর একুশে হল ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে অভিযান চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মহীউদ্দিন রানা ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

বিশেষ পুলিশ সুপার জানান, আদালতে এ দুজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ডিজিটাল ডিভাইস সরবরাহ এবং প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার মূল হোতা হিসেবে নাভিদ অনজুম তনয়ের নাম আসে। এ ছাড়া ওই চক্রের আরো বেশ কয়েক সদস্যের নামও জানা গেছে স্বীকারোক্তিতে।

স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে গত ১ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁও থেকে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিকে আটক করা হয়। নাফির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের আরেক হোতা আনিন চৌধুরীকে। তারাও ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এরপর গত ১৪ নভেম্বর রংপুরের কামাল কাছনা বাজার এলাকা থেকে তনয়কে ও গাজীপুর থেকে আকাশকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ডিজিটাল জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসে।

তনয় জানান, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে টাকার বিনিময়ে ডিজিটাল ডিভাইস এবং পরীক্ষার আগে কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে অবৈধ উপায়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সহায়তা করেছেন।

তনয়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম টিম। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে প্রক্টোরিয়াল টিমের সহায়তায় অবৈধ উপায়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাতজনকে আটক করা হয়।

আটক শিক্ষার্থীরা হলেন, তানভীর আহমেদ মল্লিক, মো. বায়জিদ, নাহিদ ইফতেখার, ফারদিন আহমেদ সাব্বির. প্রসেনজিৎ দাস, রিফাত হোসাইন এবং আজিজুল হাকিম। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

(ঢাকাটাইমস/২১নভেম্বর/এএ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

দাবি না মানায় সাত দিনের ক্লাস বর্জন কুবি শিক্ষক সমিতির

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের আহ্বান ইউজিসি চেয়ারম্যানের

নতুন রূপে সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রিয় লাইব্রেরি

জাপানের সুমিতমো করপোরেশন বৃত্তি পেলেন ঢাবির ৪০ শিক্ষার্থী

অবন্তিকার আত্মহত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে জবিতে মানববন্ধন 

শাবিপ্রবিতে রমজানে খাবার নিয়ে ‘মিল বিপাকে’ ফজিলাতুন্নেসা হলের শিক্ষার্থীরা

ববিতে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে পচাবাসি খাবার পরিবেশন, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

জাবির নতুন প্রক্টর হওয়ার দৌড়ে যারা এগিয়ে

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে কুবিতে বঙ্গবন্ধু লার্নিং হাব উদ্বোধন

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে হাবিপ্রবি ছাত্রলীগের ইফতার বিতরণ ও দোয়া মাহফিল

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :