৭ মার্চকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করা হোক

শেখ আদনান ফাহাদ
| আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৭, ১০:৩৩ | প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৩১

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কত গিয়েছি তার হিসাব নেই। কিন্তু গত ১৮ নভেম্বরের যাওয়া ছিল বিশেষ। ১৮ নভেম্বর ২০১৭ আমি, আমার মতো নতুন প্রজন্মের লাখো বাংলাদেশি বাঙালি ১৯৭০-এর ৭ মার্চকে খুঁজলাম। সোহরাওয়ার্দীতে গিয়ে আমি রেসকোর্সকে খুঁজলাম। কিন্তু এও কি সম্ভব? ফিদেল-চোখে হিমালয়সম ব্যক্তিত্ব, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অগ্নি-আহবান, সেই হুঙ্কার, সেই কণ্ঠ, স্টাইল, বিশাল আকাশ, বিস্তীর্ণ ময়দান, বাঁশ হাতে টগবগ করে ফুঁসতে থাকা স্বাধীনতাকামী বাঙালির সমুদ্র-গর্জন, এসবের কিছু কি আর ঘটানো সম্ভব? আর কোনোদিন ৭ মার্চ ফিরে আসবে না। জাতির পিতার ভাষণ আমরা হয়তো আরও লাখো কোটি বার শুনব।

তবে এ কান আরে সে কান হবে না, এ মন আর সে মন হবে না, এ মগজ সে আর সে মগজ হবে না, এ শিহরণ আর কোনদিন সে শিহরণ হবে না। আর কোনোদিন আমরা কেউ সাত মার্চের সে বিপ্লবী বাঙালি হতে পারব না। সাত মার্চ আর কোনোদিন হবে না। সম্ভব না। কিছুই মেলে না। তবে কেন যেন মনে হচ্ছিল, নির্মলেন্দু গুনের তন্দ্রাচ্ছন্ন বিকেলের আকাশের সাথে কালকের আকাশের কিঞ্চিৎ মিল ছিল, তবে সেটা একান্তই বর্ণ-মিল, ভাবের নয়। এ আকাশ কোনোদিন আর সাত মার্চের আকাশ হবে না। এ দিগন্ত আর কোনোদিন সাত মার্চের দিগন্ত হবে না। এটা সম্ভব না।

রেসকোর্স নামটি বিলুপ্ত হয়ে সোহরাওয়ার্দী হয়েছে। যে রুক্ষ ময়দান সেদিন বঙ্গবন্ধুর ভাষণে সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ সৃষ্টির সম্ভাবনায় সিক্ত হয়েছিল, সে ময়দানে আজ সবুজের সমারোহ। কার্পেটের মত সবুজ মাঠ, নানা প্রজাতির গাছ, গ্লাসহাউজ, কৃত্রিম লেক, কত কী! ১৮ নভেম্বরও লাখ লাখ মানুষ আসল, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে লাল-সবুজের পতাকা হাতে দিক-দিগান্ত কাঁপিয়ে তুলল। কিন্তু সাত মার্চ ফিরে আসল না। সাত মার্চ আর কোনোদিন হবে না। বঙ্গবন্ধু ছাড়া যেমন বাংলাদেশ কল্পনা করা যায় না, বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ ছাড়া রেসকোর্স পূর্ণতা পায় না। সেদিনের বাঙালি আর এখনকার বাঙালির মধ্যে বিস্তর অমিল। স্বাধীনতা অর্জনে উন্মুখ বাঙালি আর স্বাধীনতার সুফল ভোগ করার বাঙালির মধ্যে কি কোনো তুলনা হতে পারে? একজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে কি সাধারণ মানুষের তুলনা হতে পারে? বাঁশ হাতে লাখ লাখ শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র-জনতাসহ সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ সারা দেশ থেকে সেদিনের রেসকোর্স ময়দানে প্রাণাধিক প্রিয় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ শুনতে এসেছিলেন।

প্রকৃত অর্থে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তারিখেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেও ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেই বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের ‘স্বাধীনতা ও মুক্তি’ অর্জনের রূপরেখা ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১৮ই জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে ৭ মার্চেই স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেদিন পরিষ্কার বলা হয়েছিলো, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম-এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’।

৭ই মার্চ স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের ঘোষণা দেয়ার পর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পুনরায় স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া ও গ্রেপ্তার হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু নিয়মিতভাবে মানুষকে স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে আহ্বান জানিয়ে গেছেন। সবাইকে চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য তাগাদা দিয়েছেন।

সাত মার্চের আগেও নানা ভাষণে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের জন্য আলাদা রাষ্ট্র কায়েমের কথা বলেছেন। যেমন ৪ মার্চ, ১৯৭১ সালের সংবাদ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে লেখা হয়, ‘আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান গতকাল (বুধবার) বৈকালে পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসমুদ্রে ভাষণদানকালে মিলিটারি প্রত্যাহার ও জনতার হাতে ক্ষমতা না দেওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার খাজনা-কর না দেওয়ার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।

সে ভাষণে বঙ্গবন্ধু ৬ মার্চ পর্যন্ত সকাল ছয়টা হতে দুপুর দুইটা পর্যন্ত লাগাতার হরতালেরও ঘোষণা দেন। স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর গুলিবর্ষণসহ নানাবিধ অত্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানানো ছাড়াও উনি ৭ই মার্চ কী বলতে পারেন তারও একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ৩ মার্চের সেই ভাষণে। সংবাদ পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ মুজিব সেদিন মন্তব্য করেছিলেন, ‘৭ তারিখের মধ্যে সরকারি মনোভাব পরিবর্তন না হইলে রেসকোর্সে আমি আমার ভাষণ দিয়া দিব’।

পাকিস্তানী শাসকদের ধমক দিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘মনে রাখিবেন, বাংলার ৭ কোটি মানুষকে গুলি করিয়া মারা যাইবেনা। আর যদি মারেন, তাহলে আমরাও মারিব। যাহারা আমার জন্য জীবন দিয়াছিল, আমি জানি, আমি মরিলে আমার আত্মা দেখিতে পাইবে যে বাংলা স্বাধীন হইয়াছে, বাংলার মানুষ সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে রহিয়াছে’।

আবগেজড়িত কণ্ঠে সেদিন বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘আমার মৃত্যু হইলেও আমি আপনাদের সহিত বেঈমানি করিতে পারিব না। রক্ত দিয়া হইলেও আমি আপনাদের ঋণশোধ করিব’। সংবাদের এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে ১০ মার্চ এক সভায় বসার আমন্ত্রণও বঙ্গবন্ধু প্রত্যাখান করেন। ইয়াহিয়ার সাথে সেই সভায় বসার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ রাস্তায় রাস্তায় যখন শহীদদের রক্ত শুকায় নাই, যখন লাশ সৎকারের অপেক্ষায় পড়িয়া রহিয়াছে এবং হাসপাতালে যখন শত শত লোক মৃত্যুর সহিত লড়াই করিতেছে, তখন এই আমন্ত্রণ একটি নিষ্ঠুর তামাশা ছাড়া আর কিছুই নহে। অতএব, আমি এইরুপ আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করিলাম’।

৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার ঘোষণা করেন,-এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সরকারি অফিস, আদালতে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ই মার্চ এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘মুক্তির লক্ষ্য বাস্তবায়িত ও স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে বাঁচিয়া থাকার অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাংলা দেশের মানুষ সংগ্রাম ও সব কিছু ত্যাগ স্বীকারে দৃঢ় সংকল্প থাকিবে’।

১৪ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আন্দোলন চলবে, হরতাল, অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সংবাদপত্রে বিবৃতি আকারে ছাপানো সেই ভাষণে তিনি বলেন, ‘জীবনের বিনিময়ে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বাধীন দেশের মুক্ত মানুষ হিসেবে স্বাধীনভাবে আর আত্মমর্যাদার সাথে বাস করার নিশ্চয়তা দিয়ে যেতে চাই’।

ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধুর সাথে তৃতীয় দফায় আলোচনায় বসেন ১৮ মার্চ, ১৯৭১ সালে। আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে ১৮ মার্চ দৈনিক পূর্বদেশ সাংবাদিকদের সাথে বঙ্গবন্ধুর কথোপকথন পুরোটাই ছেপে দেয়। বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি সাংবাদিক তাঁকে একের এক প্রশ্ন করতে থাকেন। এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে এবং লক্ষ্যে উপনীত না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে’। তিনি সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আমি কি আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি?’

সাংবাদিকদের সাথে আলোচনার শেষ পর্যায়ে শেখ মুজিবকে খুব প্রফুল্ল দেখা যায়। তখন এক সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘এ হাসি থেকে আমরা কোন কিছু ধরে নিতে পারি? পূর্বদেশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ আমি সবসময়েই হাসতে পারি এবং এমন কি জাহান্নামেও হাসতে পারি’।

স্বাধীনতা অর্জনে বিদেশি সাহায্য চেয়েছেন কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘ আমার প্রয়োজন নেই। পাট, চা, ইত্যাদিসহ আমাদের যা প্রয়োজন বাংলাদেশে তা আছে’। কী নাই, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকারই শুধু বাঙালিদের নাই’।

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা’-খ্যাত ভাষণে বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার স্বাধীনতার কথা বলে দিয়েছিলেন। মুক্তির কথা বলে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি; না হলে, সেদিন ঢাকার আকাশে ঘুরতে থাকা পাকিস্তানী জঙ্গি বিমান থেকে বোমাবর্ষণ হতে পারত। ৭ই মার্চের ভাষণকে তাই অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ‘ডিফেক্টো ডেক্লেরেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ’ বলে অভিহিত করেন।

নিজে স্বাধীন বাংলাদেশে একাধিকবার সাত মার্চের ভাষণে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে মূল্যায়নধর্মী বক্তব্য দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। যেমন ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় রাষ্ট্রীয় সফরে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘গত ৭ই মার্চ (১৯৭১) তারিখে আমি জানতাম পৈশাচিক বাহিনী আমার মানুষের ওপর আক্রমণ করবে। আমি বলেছিলাম আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা ঘরে ঘরে দুর্গ তৈয়ার করো। আমি বলেছিলাম যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো। আমি বলেছিলাম এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। আমার লোকেরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বৃদ্ধ থেকে বালক পর্যন্ত সকলেই সংগ্রাম করেছে’।

শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা স্থানে সামরিক হামলা চালায় পাকিস্তানী বাহিনী। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানী বাহিনী। গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন।

তার ইপিআর-এ দেয়া ঘোষণপত্র ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স এজেন্সি তাদের প্রকাশিত দলিলে তুলে ধরেছেন- শেখ মুজিবই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাত ১২.৩০ মিনিটে এ স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন! তাদের এই দলিলে বহুজন সিনেটরের স্বাক্ষর আছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাত ১২.৩০ মিনিট অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই শেখ সাহেব ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণা করার কিছুক্ষণ পরই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস তাদের বৈকালিক সংস্করণে এই ঘোষণাপত্র ছাপিয়ে লিখেছিল “পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র টাইম ২.৩০ মিনিট (দুপুর) এ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন।”

বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন ৩.৩০ মি (রাত) আর তার কয়েক ঘণ্টা আগে অর্থাৎ রাত ১২.৩০ মিনিটে ঘোষণা প্রদান করেন। তার স্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্র ইপিআরের (বিডিআর ও পরবর্তীতে বিজিবি) ওয়্যালেসের মাধ্যমে সারাদেশের সরকারি প্রশাসন ভবন ও ফ্যাক্সের মাধ্যমে লিখিত আকারে প্রচার করা হয়। ২৭ মার্চ সকাল থেকেই রেডিওতে বার বার এটি পড়ে শুনানো হয় ।

২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র দখল করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। সেখানে বাঙালি মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। মেজর জিয়া বলেছিলেন, ‘ আমি মেজর জিয়া, আমাদের মহান জাতীয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি’।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে গত অক্টোবরে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। প্যারিসের ইউনেস্কো সদরদপ্তরে সংস্থাটির মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী তথ্যচিত্রের তালিকা ‘ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ অন্তর্ভুক্তের ঘোষণা দেন। এক বিবৃতিতে ইউনেস্কো বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল (ওয়ার্ল্ডস ডক্যুমেন্টরি হেরিটেজ) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’ ইরিনা বোকোভা আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক তাৎপর্য রয়েছে এমন বিষয়গুলোকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মেমোরিতে তালিকাভুক্ত করা হয়।’

১৮ নভেম্বরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সভায় অন্যতম বক্তা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘সাত মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেস্কো বরং উল্টো সম্মানিত হয়েছে’। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি নিশ্চয় বড় বিষয়, কিন্তু সাত মার্চের ভাষণ এমন বিশেষ কিছুর জন্ম দিয়েছে যে তার বড়ত্বের কাছে ইতিহাস মাথা নুয়ে সালাম জানাবে আজীবন। সাত মার্চের ভাষণ একটি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাগরিক কমিটির সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, আরও অনেক ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেলেও, সাত মার্চের ভাষণ একটি ক্ষেত্রে অনন্য। কোনো ধরনের স্ক্রিপ্ট ছাড়া স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ কোটি কোটি মানুষের মনের কথা বলার জন্য কী পরিমাণ স্নায়ু শক্তি দরকার, পাকিস্তানী সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামে জাতিকে আহবান করতে কত সাহস দরকার সেটা আমাদের পক্ষে অনুধাবন কিংবা কল্পনা করা সহজ নয়।

একটি পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে যে ভাষণ, সে ভাষণ জাতিসংঘের একটি বিভাগের স্বীকৃতি পাবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে কী করেছে? বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরে এ ভাষণ বাংলাদেশে বাজানো নিষেধ ছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধুর সে ভাষণকে, বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে স্থান দিয়েছে, কখনো ভুলে যায় নি। অনুকূল পরিবেশে আজ নানা উপলক্ষ ঘিরে মার্চের ভাষণ বাজানো হয়। কত হাজার কোটি বার এই ভাষণ বাজানো হয়েছে তার হিসেব নেই, হিসেব রাখা সম্ভব না। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তাই বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসে এক বিশেষ দিন। এ বিশেষ দিনকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা উচিত ছিল বহু আগেই। অনেক দেরি হয়ে গেছে, আর নয়। অবিলম্বে ৭ মার্চকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করা হোক। বঙ্গবন্ধু ঠিক যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানেও স্থায়ীভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা হোক।

লেখকঃ সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :