অবশেষে পদত্যাগ করলেন মুগাবে
পার্লামেন্টে নিজের অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার মধ্যেই পদত্যাগ করলেন ৩৭ বছর ধরে জিম্বাবুয়েকে শাসন করে আসা প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে।
আজ মঙ্গলবার দেশটির স্পিকার জ্যাকব মুডেন্ডাকে চিঠি পাঠিয়ে মুগাবে নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে গৃহবন্দী হওয়ার পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে স্বেচ্ছায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মুগাবে চিঠিতে লিখেছেন। খবর বিবিসি, রয়টার্স।
এদিকে, মুগাবের পদত্যাগের খবরে পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়, উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন পার্লামেন্ট সদস্যরা। উচ্ছ্বসিত জনতা নেমেছে রাস্তায় রাস্তায়।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট মুগাবেকে অভিশংসনের জন্য যখন পার্লামেন্টে যৌথ অধিবেশনে বিতর্ক চলছিল, তখনই তাঁর পদত্যাগের ঘোষণা আসে। এর আগে তিনি পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
১৯৪০ সালে জিম্বাবুয়ে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর গত ৩৭ বছর ধরে দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে মুগাবে।
এক সপ্তাহ আগে দলের উত্তরসূরি নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যে গত সপ্তাহে সেনাবাহিনী জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয়। গৃহবন্দী করে মুগাবেকে।
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাওয়াকে তার উত্তরসূরি বিবেচনা করা হলেও গত মাসে হঠাৎ করে সরকার ও দলীয় পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করেন মুগাবে। স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে আসতে নানগাওয়াকের মতো অভিজ্ঞ নেতাকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর তার পদত্যাগ দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হলেও ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান ৯৩ বছর বয়সী মুগাবে।
এ নিয়ে দলীয় কোন্দলের মধ্যে গত বুধবার সেনাবাহিনী জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানায়।
তার দুদিনের মাথায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মুগাবের দল জিম্বাবুয়ের ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টির পক্ষ থেকেও জনগণের কাছে জনপ্রিয়তা হারানো এই নেতাকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়।
প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাঁকে রোববার পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেই আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় রোববার জানু-পিএফ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি মুগাবেকে দলীয় প্রধানের পদ থেকে বহিষ্কার করে, নানগাওয়াকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।
প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যাওয়ার জন্য মুগাবেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
এরপরেও রবার্ট মুগাবে পদত্যাগ না করায় মঙ্গলবার বিকালে তাকে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। পার্লামেন্ট সে বিষয়ে আলোচনার মধ্যেই প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের খবর জানান স্পিকার।
ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে দেশকে স্বাধীন করে এক সময় পুরো মহাদেশে উপনিবেশবিরোধী মুক্তির নায়কে পরিণত হয়েছিলেন ‘গ্র্যান্ড ওল্ড ম্যান’ মুগাবে।
প্রতিবেশী দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৯৪ সালে জাতিগত বিদ্বেষের অবসানের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান জানানো নেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
কালোদের নেতা মুগাবে পাশ্চিমা দেশগুলোতেও ‘থিংকিং ম্যানস গেরিলা’ নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন।
১৯৯০ সালের পর জিম্বাবুয়ের অর্থনীতির খারাপ হতে থাকলে দেশে তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে থাকে।
(ঢাকাটাইমস/২১নভেম্বর/ ইএস)