ট্যানারি স্থানান্তরের পর এবার দূষিত হচ্ছে ধলেশ্বরী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:০৮ | প্রকাশিত : ২২ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:৩৮
ফাইল ছবি

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া কারখানাগুলো সরিয়ে নেয়ায় নদী দূষণ পরিস্থিতি পাল্টায়নি বলে মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয় বুড়িগঙ্গার বদলে ট্যানারিগুলো (চামড়া কারখানা) দূষণ করছে এখন ধলেশ্বরী নদী। এই পরিস্থিতিতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ওই বৈঠক থেকে।

বুধবার সচিবালয়ে নদী রক্ষা ও দখলমুক্ত টাস্কফোর্স কমিটির ৩৬তম সভা শেষে আলোচনার বিষয়বস্তু গণমাধ্যমকর্মীদের জানান নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, ‘সাভারের ট্যানারি থেকে যেন নদী দূষণ না হতে পারে প্রয়োজনে সেখানে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়া হবে। কাজটি করবে শিল্প মন্ত্রণালয়। আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি বলেছি।’

পাকিস্তান আমলে হাজারীবাগে বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে উঠা ট্যানারিগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও কারখানার অশোধিক বর্জ্য ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গাকে পুরোপুরি দূষিত করে ফেলেছে। দূষণ গিয়ে ঠেকেছে শীতলক্ষ্যাতেও।

এই অবস্থায় হাজারীবাগ থেকে কারখানাগুলো সাভারে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। সেখানে বর্জ্য পরিশোধনে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা (সিইটিপি) রাখা হয়েছে। বারবার সময়ক্ষেপণের পর অবশেষে কারখানাগুলোর একাংশ পুরোপুরি চামড়া শিল্পনগরীতে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাকিগুলো প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। আর হাজারীবাগের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বুড়িগঙ্গার দূষণ পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।

কিন্তু সাভারে চামড়া শিল্প নগরীর পাশে ধলেশ্বরীতে দূষণ ছড়াচ্ছে সেখানকার কারখানা থেকে ফেলা অশোধিত বর্জ্য। এই পরিস্থিতিতে ধলেশ্বরী আরেক বুড়িগঙ্গা হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন তুলে ধরেছেন পরিবেশবাদীরা।

মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এই বিষয়টি ছাড়াও শিল্প কারখানার বর্জ্য পরিশোধনে করা ইটিপি চালু না রেখে বন্ধ রাখার বিষয়টিতেও উদ্বেগ জানানো হয়। নৌমন্ত্রী বলেন, ‘নদীর তীরে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইটিপি থাকলেও তারা চালু রাখে না। পরিবেশের লোক গেলে তারা চালু করে। লোকজন চলে গেলে ফের বন্ধ করে দেয়। এতে অনেক নদী দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

‘জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান নদী দূষণ করছে তাদের তালিকা পাঠাতে, তালিকা পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

বুড়িগঙ্গার তীরে হবে ২৮০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে

ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীর দখলমুক্ত করতে ২০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে (হাঁটার রাস্তা) নির্মাণ করা হয়েছে জানিয়ে শাজাহান খান মোট ২৮০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণের কথা বলেন। বলেন, ‘তাহলে নদী দখল আর করতে পারবে না কেউ। এ কাজ আমরা অব্যাহত রাখব।’

মন্ত্রী বলেন, বুড়িগঙ্গা বাদেও সারাদেশে নদীর চারপাশে পিলার স্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে ঢাকার চার নদীর চারপাশে এ কাজটি করা হয়েছে।

অনেক জায়গায় স্থাপন করা পিলার উঠিয়ে ফেলা হয়েছে জানিয়ে শাজাহান খান বলেনম ‘যারা এসব উঠিয়ে ফেলেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

রাজধানীর খাল উদ্ধার

ঢাকায় বেদখল ১৩টি খাল শনাক্ত করা হয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে দুইটি উদ্ধার করে দখলমুক্ত রাখার জন্য দুইপাশে পাকা করার কথা জানান হয় বৈঠকে। বাকি ১১টি খাল উদ্ধারে যা যা করা দরকার তা করতে ঢাকা ওয়াসাকে নির্দেশ দেয়া হয়।

নৌ মন্ত্রী বলেন, ‘দখলকৃত ১৩টি খালের অনেকগুলো জায়গায় অনেক স্থাপনা হয়ে গেছে। তারপরেও সেগুলো আমরা উদ্ধার করব।’

আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধারের সিদ্ধান্ত হওয়ার কথাও জানান মন্ত্রী। বলেন, এটা উদ্ধারে অনেক জটিলতা আছে। কারণ ওখানে অনেক বড়বড় স্থাপনা হয়ে গেছে। সেগুলোকে অপসারণের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার কার্যক্রম চলছে। তবে অনেকসময় দখলকারীরা আদালতে চলে যায়, মামলা করে। এগুলো মোকাবেলা করেই আমাদের এগুতে হচ্ছে।’

নদীর তীরভূমি উদ্ধারের পর আবার যেন দখল না হয় সে ব্যাপারে মনিটরিং করতে বিআইডব্লিউটিএকেও নির্দেশ দেয়া হয় বৈঠকে।

দখল করা জায়গায় বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের কর্মকর্তারা বসেছেন। সবাই একমত হয়েছেন, স্থানান্তরের জন্য তাদের জায়গার দরকার। জায়গা হলে তারা ছেড়ে দেবে।’

‘আমরা সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছি, যে যে জায়গায় মসজিদ আছে তার পাশে সরকারি জমি থাকলে সেখানে স্থানান্তর করতে।’

ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/এমএম/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :