ছেলের ‘অমানবিকতা’য় অসহায় বাবা

আবদার রহমান, যশোর থেকে
| আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৩৮ | প্রকাশিত : ২২ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:১৫

পুকুরের এক পাড়ে দালান ঘরে ঘুমান পুত্র, পুত্রবধূ ও স্ত্রী। অন্য পাড়ে কাঁঠাল গাছের নিচে শিকলে বাঁধা বৃদ্ধ ইউনুস আলী।

যশোরের মণিরামপুরের মাছনা গ্রামে এই ব্যক্তিকে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চার থেকে পাঁচ মাস এভাবেই দিনরাত পার করতে হচ্ছে ইউনুসকে।

ছেলে ইয়াকুব বিল্লাহর দাবি, তার বাবা মানসিক রোগী। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে গাছে বেঁধে রাখা হয়েছে। তবে ইউনুস আলীর ভাষ্য, ছেলে ইয়াকুব ও স্ত্রী আকলিমা তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিয়েছে। নিজের লাগানো গাছ বিক্রি করে এই টাকা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তারা সে টাকা মেরে দিয়ে এভাবে রেখেছে তাকে।

প্রতিবেশীরা বিষয়টিকে নিদারুণ অমানবিক বলছেন। ইউনুস আলীকে চিকিৎসা করালে সুস্থ হয়ে উঠতেন বলে তাদের ধারণা।

মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় পুকুরপাড়ের কাঁঠাল গাছের নিচে সিমেন্টের কাগজের উপর শুয়ে আছেন ইউনুস আলী।

কাছে যেতেই উঠে বসেন এই বৃদ্ধ। নাম জিজ্ঞাসা করতেই বলেন, ‘ইউনুস আলী, বাবার নাম মৃত ফজলুর রহমান।’ জানান তাকে কয়েক মাস ধরে এভাবে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।

কে এই কাজ করেছে-জানতে চাইলে ইউনুস জবাব দেন, ছেলে ইয়াকুব বিল্লাহ ও তার (ইউনুস) স্ত্রী আকলিমা। তাকে খেতেও দেয় না তারা। মাঝে মধ্যে বৃদ্ধা মা রোকেয়া বেগম ইউনুসকে খাবার দিয়ে যায়।

এ সময় সেখানে উপস্থিত ইউনুসের প্রতিবেশী কওছার আলী বলেন, আট বছর আগে হঠাৎ ইউনুস আলী মানসিক ভারসাম্যহীন হলে তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবারের লোকজন। কিন্তু ইউনুসের তেমন কিছু হয়নি জানিয়ে চিকিৎসকরা ওষুধ দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেন। তারপর মাঝেমধ্যে অসুস্থ হন আবার চিকিৎসা দিলে সুস্থ হয়ে যান ইউনুস আলী।

প্রতিবেশী আব্দুল গনি বলেন, ‘গেল বড় বৃষ্টি-কাদার মধ্যে ওই পুকুর পাড়েই শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় খেয়ে না-খেয়ে দিন-রাত কেটেছে ইউনুস আলীর। অথচ কোন চিকিৎসাই করাচ্ছে না ইউনুসের ছেলে ইয়াকুব।’

কথা হয় ইউনুস আলীর বৃদ্ধা মা রোকেয়া বেগমের সঙ্গেও। তিনি বলেন, ছেলেকে এভাবে মাসের পর মাস গাছে বেঁধে রেখে খেতেও দেয় না তার ছেলে ও ছেলের বউ। তিনি মাঝেমধ্যে খাবার দিয়ে আসেন।

এসময় ইয়াকুবের বাড়ি গেলে পুত্রবধূ আসমা ছাড়া কেউ বাড়িতে ছিলেন না। তিনি দাবি করেন, তার শ্বশুরকে তারা খাবার দিলেও তিনি তা খান না।

এসময় মুঠোফোনে ছেলে ইয়াকুব বিল্লাহর সাথে কথা হলে তিনি দাবি করেন, টাকা পয়সার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। গাছ বিক্রি করে বাবার দেয়া টাকা কী করেছেন, সে প্রশ্নের জবাব অবশ্য পাওয়া যায়নি ইউনুসের ছেলের কাছে।

ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :