লুমের চাকা ঘুরল ১৫ বছর পর

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০১৭, ২০:১০

রাজশাহী ব্যুরো প্রধান, ঢাকাটাইমস

রাজশাহীর রেশম কারখানার লুমগুলো সর্বশেষ চলেছিল ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর। সরকার কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় সেদিনের পর আর লুমের চাকা ঘোরেনি। তবে এবার সেই চাকা ঘোরালেন রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। রেশম কারখানা আবার চালু করতে বুধবার লুমটি পরীক্ষা করে দেখেন তিনি।

এর আগে গত শনিবার রেশম কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা লুমগুলো চালুর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এরপর শুরু হয় পুরনো লুমগুলোর মেরামতের কাজ। একটি লুম এরই মধ্যে চালানোর উপযোগী করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে সেই লুমটিই চালু করে দেখলেন বাদশা। লুমটি চালু করার সঙ্গে সঙ্গে খট খট শব্দে ভরে ওঠে পুরনো কারাখানাটির চারপাশ।

এ সময় এমপি ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য কামাল উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কারখানার এই লুমটি চালু হতে দেখে তারাও উচ্ছ্বসিত হন।

রাজশাহী রেশম কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামি দেড় মাসের ভেতর কারখানার অন্তত পাঁচটি লুম চালু করা হবে। এরপরই উৎপাদনে যাবে রেশম কারখানা। পর্যায়ক্রমে কারখানার সব লুমই চালু করা হবে। এর ফলে রেশমের হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে রাজশাহীতে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্ধ ঘোষণার সময় রেশম কারখানায় মোট ৬৩টি লুম ছিল। এর মধ্যে উৎপাদন চলতো পুরনো ৩৫টি লুমে। নতুন ২৮টি লুম চালুর আগেই কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধের আগে কারখানাটি বছরে এক লাখ ৬ হাজার মিটার রেশম কাপড় উৎপাদন করতো। এখন ৬৩টি লুম চালু হলে বছরে কাপড় উৎপাদন হবে দুই লাখ ৮৭ হাজার মিটার।

বন্ধ ঘোষণার আগে আশরাফুল ইসলাম টুটুল ২৪ বছর প্রধান মেকানিক হিসেবে রাজশাহী রেশম কারখানায় চাকরি করেছেন। কারখানা বন্ধের পর তিনি অন্য পেশায় চলে গিয়েছিলেন। কারখানাটি চালু উপলক্ষে ফের ডেকে আনা হয়েছে দক্ষ এই কর্মীকে। তিনিই এখন লুমগুলো মেরামতের কাজ করছেন।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, অব্যবহৃত নতুন লুমগুলো তিনি কখনো চালাননি। তবে পুরনো সবগুলো লুম তিনি চালিয়েছেন। এখন লুমগুলো অকেজো। শুধু একটি লুম তিনি চালুর উপযোগী করেছেন। বাকিগুলোও তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে মেরামত করে ফেলবেন। এ ব্যাপারে নিজের দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের কথাও জানান আশরাফুল ইসলাম।

মেরামত করা লুমটি চালু করে দেখার পর রেশম বোর্ডের সদস্য ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, পুরাতন লুমগুলো নতুন লুমগুলোর চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ ভালো। আমরা পুরনো লুমগুলোতেই খুব ভালোমানের রেশম কাপড় উৎপাদন করতে পারবো। রাজশাহীকে আবার সিল্কসিটি হিসেবে পরিচিত করার যাত্রা শুরু হয়েছে।

বাদশা বলেন, রেশম কারখানা খুলে দেয়াটা রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। তিনি সেই দাবি পূরণ করে রাজশাহীর ঐতিহ্যকে রক্ষা করছেন। তিনি জানান, তুত চাষের উন্নয়নে ভারত থেকে ৩০ কোটি টাকা অনুদান পাওয়া গেছে। সরকার দেবে আরও দুই কোটি টাকা। রেশম শিল্পকে এগিয়ে নিতে এই টাকা তুতচাষিদের ঋণ দেয়া হবে।

রেশম বোর্ডের সদস্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান বলেন, কারখানার লুমগুলোর অবস্থা ভালো। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই একটি চালু করা গেছে। বাকিগুলোও চালু করা সম্ভব। রাজশাহীকে আমরা সিল্ক হাব হিসেবে পরিচিত করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এর অংশ হিসেবেই রেশম কারখানা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়।

বোর্ডের আরেক সদস্য কামাল উদ্দিন জানান, বন্ধ করার আগে কারখানাটিতে ৩০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতেন। বন্ধের পর সব শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে যারা এখনও কাজ করতে পারেন, তাদের কারখানায় কাজের সুযোগ দেয়া হবে। লুমগুলো চালুর সঙ্গে সঙ্গে পর্যায়ক্রমে এসব কর্মীদের ডাকা হবে।

রাজশাহী নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় ১৯৬১ সালে সাড়ে ১৫ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত হয় এই রেশম কারখানা। মূলধন না থাকার অযুহাতে বিএনপি সরকার কারখানাটি বন্ধ করে দেয় ২০০২ সালে। সে সময় অনেক আন্দোলন করেও কারখানাটি চালু করতে পারেনি রাজশাহীবাসী। দীর্ঘদিন পর আবার সেই রেশম কারখানা চালু হতে যাচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/আরআর/ইএস)