নদীপাড়ের মানুষ (শেষ পর্ব)

বাজার সংকটে অন্তহীন কষ্টে চরের মানুষেরা

প্রতীক ওমর, বগুড়া
 | প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:৩২

নদীর বুকে জেগে ওঠা বালির দ্বীপ। আমরা চর বলি। শহর গ্রামের মতো সেখানেও মানুষের বসবাস আছে। বহু যুগ ধরেই চরে মানুষ বাস করে আসছে। সংসার আছে। আবেগ অনুভূতি সব আছে তাদের মধ্যে। বিচিত্র মানুষের বসবাস সেখানে। কাজের মানুষ। কাজ করেই জীবনের চাহিদা মিটায় তারা। কখনো কৃষি কাজ আবার কখনো মাছ ধরা। বর্ষা মৌসুম তাদের কাছে আশির্বাদস্বরূপ আসে। যদি ভয়াবহতা না হয়। বর্ষা ভয়ংকর হলে তখন উল্টো বিপদে পড়তে হয় তাদের। ঘরবাড়ি পানির নিচে চলে যায়। স্বাভাবিক বন্যা হলে তারা খুশি। মাইলের পর মাইল বালির রাস্তায় পায়ে হেঁটে যেতে হয় না। তখন বাড়ি বাড়ি নৌকা ঠেকে। নিজের উঠোন থেকে নৌকায় উঠে যেকোনো জায়গায় সহজেই যাতায়াত করা যায়।

এখন চরের মানুষের কষ্টের দিন। নদীতে পানি নেই। নৌকা চলে সীমিত জায়গায়। চরের গ্রামগুলোতে যাওয়ার ভালো কোনো রাস্তাও নেই। থাকবেই কেমনে? বালির মধ্যে রাস্তা হবেও না। অনেক সময় স্থানীয়রা খরকুটো দিয়ে রাস্তা তৈরি করলেও বেশি দিন সেই রাস্তা টিকে থাকে না। বৃষ্টি হলেই ধসে যায়। উপায় না থাকায় বালির পাথারের মধ্য দিয়েই পায়ে হেঁটে পথ চলতে হয়। কখনো বালির রাজ্য পাড়ি দিয়ে আসতে হয় আবার কখনো প্রমত্তা নদীর বিপরীত স্রোত উপেক্ষা করে গন্তব্য পাড়ি দিতে হয় চরের মানুষকে।

এভাবেই জীবযুদ্ধে টিকে আছে চরের মানুষ। বন্যার পরপরই নদীতে নতুন নতুন চর জেগে উঠায় নৌকা আর চলে না। ফলে উৎপাদিত কৃষি পণ্য সহজে বাজারজাত করা যায় না। আবার বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে হাট-বাজার, অফিস আদালত, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজে সময়মত আসা তাদের জন্য দুরূহ হয়ে পড়েছে।

চরাঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যোগাযোগব্যবস্থা। নদী নাব্য হারিয়ে যাওয়ায় চরে তাদের বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নদীতে না চলছে নৌকা আবার ধূ ধূ বালুতে না চলছে কোনো যানবাহন। মাইলের পর মাইল তপ্ত বালুতে না যাচ্ছে হেঁটে পথ চলা।

শনি মঙ্গল হাটবার

চরে বড় কোনো হাটবাজার নেই। ৩০-৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাদের বাজার সদাই করতে হয়। সারিয়াকান্দি উপজেল সদর এখানকার চরবাসীদের একমাত্র কেনাবেচার জায়গা। সপ্তাহে দুই দিন এখানে হাট বসে। শনি এবং মঙ্গলবার। এই দুই হাটে চরের মানুষ তাদের সপ্তাহের বাজার সদাই করে থাকে। হাট বেশি দূরে হওয়ার কারণে তারা একদিনেই বেশি দিনের বাজার করে থাকে।

অপরদিকে চরে এখন চাষাবাদ হচ্ছে। মৌসুমি বিভিন্ন ফসল সেখানে চাষ করছে কৃষকরা। বর্ষা শেষের দিকে তারা নদী তীরে গাইঞ্জা ধানের চারষ করে করে থাকে। এই ধান চাষে কৃষকদের তেমন পরিশ্রম হয় না। খরচও নেই বললেই চলে। শুধু ধান পানির মধ্যে ছিটিয়ে দিলেই সময়ের ব্যবধানে চাষ হয়ে যায়। এছাড়াও চরের মরিচ, বেগন, মুসুর ডাল, মাস কালাই, বাদাম চাষ হয়। গৃহস্থরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য উপজেলা সদরের এই বাজারে আসে। এছাড়াও চরে প্রচুর পরিমাণ গরু পালিত হয়। এসব গরুর দুধ বিক্রির জন্যও তাদের এই হাটেই আসতে হয়। বিক্রির পর্ব শেষ হলে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি কিনে বিকালের মধ্যেই ঘরে ফেরে এসব মানুষ।

কথা হয় কাজলা ইউনিয়নের চকরথিনাথ চরের সাহের আলী, বেণীপুর চরের আব্দুস সালামের সাথে। তারা ঢাকাটাইমসকে জানান, চরে বড় হাটবাজার নেই। বাজার বসার সে রকম জায়গাও নাই। ফলে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে সারিয়াকান্দি বাজারে আসতে হয়। এই বাজারেই তারা কৃষিপণ্য বিক্রি করে আবার প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নেয়।

তারা বলেন, বর্তমানে নদীতে পানি না থাকায় নৌকা চলাচল বন্ধ হয়েছে। ফলে পায়ে হেঁটে বালু পথ পাড়ি দেয়া দুরূহ্ হয়ে পড়েছে। সারিয়াকান্দি সদরে আসতে সকালে বাড়ি হতে বের হতে হয়। পানি থাকলে হাটবাজার শেষ করে দুপুরের মধ্যেই বাড়ি ফেরা যেত। কিন্তু এখন নদী শুকে যাওয়ায় বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়। তারা আরও জানান, রাতে চরের রাস্তায় হাঁটা খুব কষ্ট এবং ভয়ানক।

শনিবার সারিয়াকান্দি হাটে গিয়ে দেখা যায় চরের মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। অন্য বারের সারিয়াকান্দির চিত্র পুরোই পাল্টে দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ হাটে বেচা কেনায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

পাকুরিয়া চরের মাসুদ হাসান, সাবজল হোসেন, আব্দুল মান্নান, আফজাল হোসেন, রহমত আলী, নয়াপাড়া চরের সেকেন্দার আলী জানান, বর্তমানে চরে তারা বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছেন। সেই সবজি ক্ষেতের জন্য সার এবং কীটনাশক কিনতে এসেছিলেন। তারা আরও জানান, চাষাবাদের কোনো পণ্য চরের মধ্যে পাওয়া যায় না। ফলে ছোট খাটো পণ্য কিনতে হলেও এখানে আসতে হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :