কমিটির সীমানা জটিলতায় না.গঞ্জ আ.লীগ-বিএনপি

মো. মাজহারুল ইসলাম রোকন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:৩৯

দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে কমিটি গঠন কিংবা নেতৃত্ব নিয়ে নেতাদের মধ্যে বিরোধ-কোন্দল নতুন কিছু নয়। নারায়ণগঞ্জে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরেক মাত্রা। নিজ নিজ জেলা ও মহানগর কমিটির সীমানা নিয়ে দল দুটির ভেতরে সৃষ্টি হয়েছে নতুন বিরোধ।

সীমানা জটিলতার এই বিরোধ নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এখন আলোচনার কেন্দ্রে। কারা কোন এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেবেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংকট।

গত কয়েক মাস ধরে সীমানাসংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে ও কমিটির আওতাধীন এলাকার দাবিতে বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে জেলা বিএনপির সঙ্গে মহানগর বিএনপির আওতাধীন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে বিরোধ থেকে ইতিমধ্যে নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। যুবদলের এক কর্মীর মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদ।

সীমানা নিয়ে বিরোধের শুরু মূলত নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটি গঠনের পর থেকে। মহানগরের কিছু এলাকা জেলা কমিটিতে পড়েছে, কিংবা জেলা কমিটির কিছু এলাকা মহানগরে পড়েছে এমন সংকটে পড়েছে দুটি দল। ফলে সভা-সমাবেশ করতে গিয়ে বিরোধের কারণ হচ্ছে তা।

নারায়ণগঞ্জ জেলায় সাতটি থানা- সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, বন্দর, নারায়ণঞ্জ সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানা এলাকা নিয়ে সদর উপজেলা ও পরের চারটি থানা এলাকা নিয়ে চারটি উপজেলা পরিষদ রয়েছে।

এ ছাড়া সদর থানা, ফতুল্লা থানা, বন্দর থানার আংশিক এলাকা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুরো এলাকা নিয়ে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। এর মধ্যে পড়ে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা, বন্দরের কদমরসুল পৌরসভা ও সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা।

২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে তৎকালীন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহাকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর আবদুল হাই সভাপতি, মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা।

জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনের পর সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকা বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন দাবি করে গত ৬ মে মুছাপুর ইউনিয়ন এলাকায় কর্মিসভা করেন মহানগর সভাপতি ও সেক্রেটারি।

ওই দিনই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত দাবি করেন সিটি কর্পোরেশনের বাইরের কোনো এলাকায় মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মিসভা করার অধিকার নেই। এ নিয়ে জেলা ও মহানগরের শীর্ষ চারজন নেতার মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলতে থাকে।

গত ২৩ জুলাই মহানগর সভাপতি ও সেক্রেটারি দাবি করেন, ওই দিন ঢাকার ধানমন্ডিতে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। ওই বৈঠকে দীপু মনি গঠনতন্ত্র দেখে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বন্দরের সিটি কর্পোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড ও ৫টি ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে থানা কমিটি হবে যা মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন হবে। এ ছাড়া সদর থানাধীন আলীরটেক ও গোগনগর ইউনিয়ন নিয়ে সদর থানা কমিটি হবে যা মহানগরীর আওতাধীন।

গত ৩০ জুলাই নারায়ণগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের কর্মী সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচিতে আসেন দীপু মনি। সীমানাসংক্রান্ত বিষয়ে অনুষ্ঠানে তিনি কিছু বলেননি। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের দাবি প্রত্যাখান করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘দীপু মনিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি বলেছেন সিটি কর্পোরেশনের বাইরের কোনো এলাকা মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন নয়। সিটি কর্পোরেশনের বাইরে গিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম গঠনতন্ত্র বহির্ভূত।’

তবে এ বিষয় নিয়ে এখনো জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের মধ্যে জটিলতার অবসান হয়নি।

অন্যদিকে আরো জটিলতায় পড়েছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। দীর্ঘদিন পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করে কেন্দ্র। তাতে সিটি কর্পোরেশনের মূল এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাকে জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ফলে শুধু বন্দর ও সদর থানা এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছে মহানগর বিএনপির কমিটি। সদর থানার দুটি ইউনিয়ন গোগনগর ও আলীরটেক এবং বন্দরের সিটি করপোরেশনের বাইরের ৫টি ইউনিয়নসহ সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করে কেন্দ্র।

ওই সময় এ জেলার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মূলত সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আসনভিত্তিক হিসাব করে এভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত ৫ জুন মহানগর যুবদলের আওতাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মনঞ্জুরুল আলম মুছাকে মারধর করে জেলা যুবদলের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনায় জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে প্রধান আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা ঠুকে দেন যুবদল নেতা মুছা। মূলত ৮ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা যুবদলের নেতাকর্মীদের করা একটি অনুষ্ঠান নিয়ে মহানগর যুবদলের নেতা মুছার সঙ্গে বিরোধ থেকে এ ঘটনার সৃষ্টি।

মহানগরীর মূল এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জকে জেলা বিএনপিতে সংযুক্ত করে কমিটি গঠন করা হলে মহানগর বিএনপি মেনে নেয়। কিন্তু আগে গঠন করা মহানগর যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের কমিটির নেতারা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার কর্তৃত্ব ছাড়তে নারাজ। এ কারণে জেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় এখানে।

ফলে জেলা ও মহানগর বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে আরো সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

উপজেলা নির্বাচন: মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় সময়মতো ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও এক নেতা বহিষ্কার 

দেশ গরমে পুড়ছে, সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছে: এবি পার্টি

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ সালাম-মজনুর

নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল

মন্দিরে আগুন ও দুই শ্রমিক পিটিয়ে হত্যায় বিএনপির উদ্বেগ, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়: রিজভী

দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত করছে: ওবায়দুল কাদের

প্রতিমা পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে: ছাত্রশিবির সভাপতি

আল্লামা ইকবালের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মুসলিম লীগের আলোচনা সভা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :