সমাজ সচেতনতায় পাবনার ‘সাইকেল বাদশা’

খাইরুল ইসলাম বাসিদ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:৪৪

মানব জীবন কি কেবল নিজের জন্য? কারও কারও ক্ষেত্রে নিজের স্বার্থটাই প্রধান। কিন্তু কারও কারও আবার অন্যের জন্য প্রাণ কাঁদে। এই যেমন পাবনার বাদশা আলমের।

সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে বেড়া উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের বাদশার পেশা তাঁত বোনা। দিন রাত হাড় ভাঙা খাটুনির পর মানুষটি সপ্তাকে ফুরসত পান সবে একদিন। সেই দিনটি নিজের বা পরিবারের জন্য না রেখে তিনি কাজে লাগান পরের জন্য। গ্রাম ঘুরে ঘুরে বিনামূল্যে বিতরণ করেন সবজির বীজ। মানুষকে সচেতন করেন বাল্যবিয়ে, যৌতুকসহ সামাজিক নানা সমস্যা নিয়ে।

বিনা স্বার্থে প্রায় এক যুগ ধরে এই সেবা দিচ্ছেন, বাদশা। সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ান বলেই তার নাম হয়েছে ‘সাইকেল বাদশা’।

জগন্নাথপুর গ্রামের আব্দুল বাতেন মোল্লা আর মনোয়ারা খাতুনের পাঁচ ছেলে চার মেয়ের মধ্যে চতুর্থ সন্তান বাদশা আলম। মঙ্গলবার তাঁত বন্ধ থাকায় তিনি তার প্রায় ভাঙা সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন জগন্নাথপুর থেকে শুরু করে দূর দূরান্তে।

গ্রামের কোন বাড়ির পাশে পতিত জমি দেখলেই বাড়ি মালিকককে ডেকে তাদেরকে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করেন এবং বাড়ির মালিকদের বিনামূল্যে লাউ, বেগুন, শাক, শিমসহ বিভিন্ন সবজির বীজ বিতরণ করেন।

কীভাবে বীজ বপণ করতে হয় তা-ও শিখিয়ে দেন বাদশা। মাঝে মধ্যে নিজে এসে সেসব বীজ থেকে উৎপাদিত চারার যতœও করেন তিনি। আর এই ফল ও সবজি বাড়ির মালিকরা নিজে খান, প্রতিবেশীদের দেন এবং কেউ কেউ তা বাজারেও বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

বাদশা আলম ঢাকাটাইমসকে জানান, ছোটবেলায় তার মা মনোয়ারা খাতুনকে দেখেছেন প্রতিবেশীদেরকে সবজির বীজ বিতরণ করতে। সেই থেকে উৎসাহী হয়ে বড় হয়ে এখন তিনি নিজে দূরের মানুষদের মধ্যেও বিনামূল্যে সবজির বীজ বিতরণ করে আসছেন। বাকি জীবনে তিনি এই কাজগুলো চালিয়ে যেতে চান।

এর বাইরে নিজের খরচে বাল্য বিবাহ ও যৌতুকবিরোধী লিফলেট ছাপিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করেন বাদশা। তার সাইকেলে একটি ব্যানার টাঙানো থাকে যেখানে বাল্যবিয়ে, যৌতুক ও মাদকবিরোধী বক্তব্য লেখা থাকে।

সমাজের জন্য এই চিন্তা বাদশার মনে কীভাবে এলো? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দেশে বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে। এজন্য তিনি বীজ বিতরণের পাশাপাশ বাল্যবিয়ে ও যৌতুকের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন।

এই মানুষটির জীবন দর্শনে দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি আর দেশকে বদলে দেয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পায় সব সময়। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই একটি করে ভালো কার করলি বদলে যাবে সমাজ। মডেল দেশ হবি বাংলাদেশ।’

বাদশা জানান, তার এই কাজে মানুষও তাকে উৎসাহ দেয় এবং সেই উৎসাহে তিনিও আনন্দ বোধ করেন। যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন ততদিন তিনি এই কাজ করে যাওয়ার কথাও জানান তিনি।

বাদশা বলেন, ‘ভালো কাজ করলে তা কখনো তা হারিয়ে যায় না। আর আমার এই কাজে যদি একজন মানুষও উপকার পায় তালিই আমি খুশি।’

বাদশা আলমের স্ত্রী মিনারা খাতুন জানান, সংসার জীবনে দুই সন্তান তাদের। তাদের বিয়ের পর থেকে প্রথম প্রথম তার কাছে মানুষের জন্য বাদশার এই ধরনের কাজ করাটাকে পছন্দ করতেন না। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। তবে তিনিও পরে বুঝেছেন, মানুষের জীবনটা আসলে পরের জন্যই। আর এ কারণে স্বামীর এই কাজে এখন তিনি গর্ববোধ করেন। এখন এ ধরনের কাজ করাকে উৎসাহ দেন মিনারা খাতুন।

হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাদশা আলম জনপ্রতিনিধিদের কাজের ধারাকে সহযোগিতা করছেন। বাদশাকে সহযোগিতার আশ্বাসও দিলেন এই জনপ্রতিনিধি।

ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :