জামালপুর হাসপাতাল

১৮ মাস ধরে নষ্ট জেনারেটর ‘মেরামত’

দুলাল হোসাইন, জামালপুর
 | প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:৫৫

বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রায় অচল হয়ে পড়ে জামালপুর হাসপাতাল। কারণ ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিকল্প হিসেব কাজ করা জেনারেটরটি নষ্ট হয়ে গেছে দেড় বছর আগে। গত ১৮ মাস ধরেই চলছে এর মেরামত কাজ।

হাসপাতালটিতে শয্যা সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি আছে। এ ছাড়াও প্রতিদিন এক হাজারের বেশি রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। আর বিদ্যুৎ চলে গেলে দুর্ভোগে পড়ে সবাই। এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে রোগীদের মধ্যে।

কেবল হাসপাতাল নয়, বড় আকারের জেনারেটরটি দিয়ে চিকিৎসকদের আবাসিক ভবনেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেতো। কিন্তু এখন আর তা করা যাচ্ছে না। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেনারেটরটি যে নষ্ট, তা স্বীকার করতে চাইছে না।

গত ১৬ নভেম্বর রাতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না জামালপুর শহরে। এ সময় জেনারেটর চালু করতে না পারায় অন্ধকারে ছিল জেলার স্বাস্থ্যসেবার প্রধান এই ভরসাটি। এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও শহরবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

২০০০ সালে ২৫ লাখ ২৪ হাজার ৬০০ টাকায় জেনারেটরটি স্থাপন করা হয়। লোডশেডিং বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলে এই জেনারেটর চালিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ওয়ার্ড, অস্ত্রোপচার কক্ষ ও আবাসিক ভবনে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটান হতো। সবশেষ ২০১৬ সালের ১৯ জুন সকাল ১০টা ৩৩ মিনিট থেকে ১১টা ৩ মিনিট পর্যন্ত অর্থাৎ আধা ঘণ্টা জেনারেটরটি চালু করা হয়। এ সময় তখন খরচ হয় ১৩ লিটার ডিজেল। এরপর থেকে প্রায় ১৮ মাস জেনারেটরটি আর চালু করা হয়নি।

ওই সময় জেনারেটরটিতে বড় ধরনের ত্রুটি দেখা দেয়াই এর কারণ। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন স্থানীয় একজন মিস্ত্রি দিয়ে তা মেরামতের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ওই মিস্ত্রি এখনও কাজ বুঝিয়ে দেননি।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের কার্যালয়ের হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, জেনারেটর মেরামতের মজুরি বাবদ ওই মিস্ত্রি প্রায় এক লাখ টাকার বিল করেছেন। টাকা বরাদ্দ না থাকায় তার বিল পরিশোধ করা হয়নি।

যখন যা তেল লাগবে তা কিনে দুর্যোগের মুহূর্তে জেনারেটর চালু করার আদেশ আছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা মানছেন না। আর এ কারণে লোডশেডিং হলেই চিকিৎসা সেবা বিশেষ করে অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখতে হয়। অন্যদিকে রাতে পরিণত হয় ভুতুরে অবস্থার।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এত দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকার সময় আমাকে কেউ জানায়নি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক, নার্স, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, এমনকি জেনারেটরের দায়িত্বে থাকা মিস্ত্রি কেউ আমাকে জানায়নি। আমাকে জানালে আমি সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতাম।’

এতদিন ধরে জেনারেটর বিকল থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘না এ কথা ঠিক না। জেনারেটর ঠিকই আছে এবং তেলও মজুদ আছে।’

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিকুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘হাসপাতালে রাতে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের কেউ আমাকে জানায়নি। এটা আমাদের একটু ভুল বা যোগাযোগে ঘাটতির কারণে হয়ে গেছে।’

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জামালপুর-শেরপুর ইউনিটের সহকারী প্রকৌশলী ইউছুফ আলী বলেন, ‘এটি জেনারেটর) সঠিকভাবে পরিচালনা বা রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে হয়ত ত্রুটিপূর্ণ হয়ে গেছে। স্থানীয় মিস্ত্রির বদলে জেনারেটরটি ভালো প্রকৌশলী সংস্থা দিয়ে সঠিকভাবে মেরামত করা হলে ভালো হতো।

এটি অত্যন্ত শক্তিশালী একটি জেনারেটর মন্তব্য করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যখন এটি স্থাপন করা হয় তখন শুনেছিলাম প্রতি ঘণ্টায় ৪৩ লিটার ডিজেল খরচ হয় জেনারেটরটি চালাতে। এই ধরনের একটি জেনারেটর এখন নতুন করে স্থাপন করতে গেলে দেড় কোটি টাকা লাগতে পারে।’

ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :