সুস্বাস্থ্যের এসব নিয়ম মেনে ভুল করছেন নাতো?

নিশাত তাসনিম আরজু, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:০৯

স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কি করেন আপনি? প্রতিদিন ৮ গ্লাস পানি খান? কিংবা একটা আপেল? অথবা ৮ ঘন্টা ঘুমান?

হয়তো। তার কারণ আপনি ছোটো বেলা থেকেই শুনে এসছেন এসব করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আমাদের শৈশব থেকেই মা, দাদী-নানী পই পই করে বলেছে কিংবা পত্র পত্রিকার স্বাস্থ্য পাতায় এসব কথা বহুবার পড়েছি। বার বার কানের কাছে বাজতে বাজতে এসব কথাই আমরা অন্ধভাবে বিশ্বাস করে ফেলেছি। অথচ এত বছর ধরে আমরা যা বিশ্বাস করেছি তার কতটুকু সত্যি সেটা কি আমরা যাচাই করেছি?

অথচ স্বাস্থ্য নিয়ে যারা গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন তারা প্রচলিত এসব টিপসকে হেসে উড়িয়ে দিচ্ছেন আজকাল। এরকম কটি অতি জনপ্রিয় অথচ বিভ্রান্তিতে ভরপুর টিপস পাবেন নিচে-

১. প্রতিদিন ৮ গ্লাস পানি:

ছোটোবেলা থেকে বহুবার শুনে এসেছি আমরা, সুস্থ থাকতে আমাদের প্রতিদিন ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। অথচ গবেষকরা বলছেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ভালোর চেয়ে মন্দই করে বেশি। অতিরিক্ত পানি পান করলে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট তার ভারসাম্য হারায়। তাছাড়া আমাদের বুঝতে হবে যে, প্রত্যেকের শরীর আলাদা এবং তাদের শরীরে বিভিন্ন উপাদানের প্রয়োজনীয়তাও ভিন্ন ভিন্ন। তাই কার দেহে কী পরিমাণ পানি লাগবে সেটা অনেকটাই নির্ভর করছে সেই মানুষটি কোন ধরনের আবহাওয়ায় বসবাস করেন এবং সারাদিনে তিনি কি ধরনের কার্যকলাপে অভ্যস্ত।

২. প্রতিদিন একটি আপেল: “এ্যান এ্যপল আ ডে, কিপস দ্যা ডক্টর এ্যওয়ে” মানে প্রতিদিন একটি আপেল ডাক্তারকে কাছে ভিড়তে দেয় না, পৃথিবীর বহু ভাষায় খুবই প্রচলিত প্রবাদ প্রতিম এই সাস্ব্যবার্তা। এটাও সত্যি যে আপেল একটা স্বাস্থ্যকর ফল। কিন্তু শুধুমাত্র আপেল খাওয়া রোগ প্রতিরোধ নিশ্চিত করে না। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, একজন কোনো মানুষ যদি সপ্তাহে তিন থেকে পাচঁটি আপেল খান তাহলে তার শরীর সুস্থ্য থাকবে। কিন্তু শুধু আপেল নয়, তারা পাশপাশি অন্যান্য ফলও খেতে হবে। কেননা শরীরের যত রকমের ভিটামিন এবং খনিজের দরকার তার সবগুলো আপেলে নেই। এসব ভিটামিন পাবার জন্য আপনাকে অন্যান্য ফলের স্মরনাপন্ন হতেই হবে। তাছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ঋতু ভিত্তিক সব ফলই খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

৩. ৮ ঘণ্টা ঘুম : সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সব সময় একটা কথা মনে রাখতে হবে, একই তত্ত্ব সবার জন্য একই রকম ভাবে কাজ করবে না। সেরকমই এক তত্ত্ব শরীর সুস্থ্য ও কর্মক্ষম রাখতে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। মজার ব্যাপার হলো ঘুম কিন্তু একেক জনের জন্য একেক রকম পরমানে দরকার পড়ে। অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন ৪ ঘণ্টার কম ঘুমিয়েও পরদিন সকালে তরতাজা অবস্থায় থাকেন। আবার অনেকেই আছেন ১০ ঘণ্টা ঘুমিয়েও তা পারেন না। এর কোনোটাই কিন্তু মন্দ স্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। তাই ভাবুন, দেখুন কত ঘন্টা ঘুমালে আপনার শরীর ঝরঝরে হয়ে ওঠে। ঠিক তত ঘন্টা ঘুমান। কেননা আপনার ঠিক ততটাই ঘুম প্রয়োজন।

৪. প্রতিদিন একবার মলত্যাগ করা উচিত:

এটাও আরেকটা খুব প্রচলিত ধারনা যার আসলে কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু আগের এইসব তত্ত্ব আর আজকাল কাজ করে না। প্রতিদিন মলত্যাগ করা মানে এই নয় আপনি সুস্থ্য আছেন। আবার তিনদিনে একবার মলত্যাগ করা মানেই অসুস্থ হওয়া না। গবেষকরা একদিনে তিনবার বা সপ্তাহে তিনবার মলত্যাগ করার সাথে সুস্থতার কোনো সম্পর্ক খুজে পাননি। তবে হ্যা, যদি মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত যন্ত্রণা হয় বা মলের সাথে রক্ত যায় তাহলে অবশ্যই সেটা চিন্তার বিষয়!

৫. স্যানিটাইজারের মাধ্যমে নিজেকে জীবানুমুক্ত রাখা:

আমরা অনেকেই সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পর আবার স্যানিটাইজার ব্যবহার করি। আমরা মনে করি স্যানিটাইজার আমাদের হাতের বাড়তি জীবাণুকে ধ্বংস করে। আসল ব্যাপার হলো, স্যানিটাইজার আমাদের হাতকে ততটাই পরিষ্কার করে যতটা সাবান আমাদের হাতকে পরিষ্কার করে। এর চেয়ে কমও না বেশিও না।

৬. প্রতিদিন ডিটোক্সিফাইং :

ডিটোক্সিফাইং বলতে শরীর থেকে দূষিত পর্দাথ দূর করার একটি প্রক্রিয়াকে। ফেসবুক আর ইউটিউবের কল্যানে শরীরের দূষিত পদার্থ বের করার এই কৌশল আজকাল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে ডিটক্সিফাইং করার যেসব রাসায়নিক ওষুধ বা পানীয় বাজারে কিনতে পাওয়া যায় সেগুলো কিন্ত উপকারের চেয়ে অপকার বেশি করে। তাই ডিটক্স করার ওষুধ বা সিরাপ না খেয়ে প্রয়োজনে ঘরে তৈরি পানীয় দিয়েই শরীর শুদ্ধিকরণ করার যেতে পারে। তাছাড়া প্রসেসড খাবার বা পানীয় না খেলে, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকলে শরীর এমনিতেই শুদ্ধ হয়ে যায়। আলাদা করে ডিটক্স করার তেমন কোনো দরকার পড়ে না।

তথ্য সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/এনটিএ/কেএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :