অপারেশনের তারিখ পেতেই ছয় মাস

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:৪০

আব্দার রহমান, যশোর

যশোরের লুৎফুন নেছার কানে সমস্যা। চিকিৎসক বলেছেন অপারেশন লাগবে। যশোর জেনারেল হাসপাতালে যোগাযোগ করলেন তিনি। কিন্তু হাসপাতাল থেকে গত বৃহস্পতিবার তাকে ২০১৮ সালের ৫ মে অপারেশনের তারিখ দেয়া হয়েছ। অর্থাৎ লুৎফুন্নেসাকে অপেক্ষা করতে হবে প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস।

একইভাবে ৭ মে অপারেশনের তারিখ দেয়া হয়েছে কাসেদ আলীকে। ২৩ এপ্রিল আসতে বলা হয়েছে লাকি আক্তার, নবিছন, সোহরা, আনিজিরা ও সোহাগকে। আর মেহেদি হাসানকে সময় দেয়া হয়েছে আরও কয়েক মাস পরে। তাকে আসতে হবে ২০১৮ সালের ৭ জুলাই। সেই দিন অবধি ২৫৩ জনকে এভাবে তারিখ দেয়া হয়েছে।

কিন্তু যাদেরকে এত দেরিতে তারিখ দেয়া হয়েছে, তাদের অনেকেরই সমস্যাটি জটিল এবং এতদিন অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। তাহলে উপায়? ছুটতে হবে বেসরকারি হাসপাতালে।

সরকারি হাসপাতাল বলে এখানে অপারেশন করতে কোনো টাকা লাগে না, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধপত্র কিনতে হয় কেবল। ফলে স্বল্প আয়ের বা নিম্ন আয়ের মানুষরা এখানেই ভিড় করেন।

কিন্তু হাসপাতালে এসে হতাশ হয়ে ফিরতে হয় তাদের। কারণ ছয় থেকে আট মাস, কখনও কখনও আবার এক বছর অপেক্ষা করতে হয় সিরিয়াল পেতে।

আর এ জন্য চিকিৎসকদের কর্তব্যে অবহেলাকে দায়ী করছেন রোগী ও স্বজনরা। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকরা এই অভিযোগ স্বীকার করছেন না। তাদের দাবি, আন্তরিকতা নয়, অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধায় ঘাটতিই এর কারণ।

হাসপাতালে নাক, কান গলা (ইএনটি) বিভাগে চিকিৎসক রয়েছেন ছয়জন। সপ্তাহের দুই দিনে ছয় থেকে সাত জন রোগীর অপারেশন করেন তারা।  

চিকিৎসকরা বলছেন, ইএনটি বিভাগের জন্য হাসপাতালে মাত্র সাতটি শয্যা বরাদ্দ আছে। এছাড়া অপারেশন থিয়েটারে রয়েছে মাত্র একটি টেবিল। তাই পর্যাপ্ত চিকিৎসক থাকার পরেও রোগীদের অপেক্ষা করিয়ে রাখা ছাড়া তাদের উপায় থাকে না।

জানতে চাইলে হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি) এ আর এম মোর্শেদুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘হাসপাতালের ইএনটি বিভাগে প্রতিনিয়ত রোগীর চাপ থাকে। যারা বহিঃবিভাগ থেকে চিকিৎসা নেন। আমাদের ম্যানপাওয়ার থাকলেও পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় রোগীদের অপারেশন করতে পারি না। এছাড়া থিয়েটারে ইএনটি বিভাগের রোগীদের অপারেশনের জন্য মাত্র একটি টেবিল আছে। এজন্য বেশি রোগীকে অপারেশন করা সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে কয়েক মাস পরে অপারেশনের তারিখ দেওয়া হয়।’

আর যশোর মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিদিন বহিঃবিভাগে যেসব রোগী আসেন তাদের মধ্যে সপ্তাহে ৭০ জনকে আমরা অপারেশনের জন্য পরামর্শ দিই। তাদের মধ্যে সপ্তাহে ছয় থেকে সাত জন রোগীকে আর জটিল হলে তিন থেকে চার জন রোগীকে সোমবার ও বুধবার অপারেশন করে থাকি৷’

অপারেশনে বিলম্বে রোগীদের তেমন ক্ষতি হয় না বলে দাবি এই চিকিৎসা কর্মকর্তার। তিনি বলেন, ‘এদের মধ্যে একটা বড় অংশ ঠান্ডাজনিত কারণে আক্রান্ত হয়। এজন্য পরে অপারেশন করলেও কোন সমস্যা হয় না। আর যাদের সমস্যা বেশি তাদের আমরা দ্রুতই অপারেশনের ব্যবস্থা করি। তবে হাসপাতালে ইএনটি বিভাগের জন্য যদি শয্যা আর অপারেশন টেবিল বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় তাহলে এই সমস্যা আর থাকবে না।’

এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ কে এম কামরুল ইসলাম বেনু বলেন, ‘ইএনটি বিভাগে অপারেশন থিয়েটারে যদি ৪/৫টি টেবিল থাকত তবে রোগীদের অপারেশনের জন্য অপেক্ষা করতে হতো না।’

তবে রোগীদের সমস্যা হলেও অপারেশন থিয়েটারে আরও টেবিল সংযোজনের পরিকল্পনা আপাতত নেই বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি