জালিয়াতির জাল বিস্তৃত করছে ঢাবি ছাত্ররা!

শেখ আদনান ফাহাদ
 | প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:৩৪

নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সবার বাড়তি ভালোবাসা ও আবেগ কাজ করে। আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছি, তারাও এর বাইরে নই। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে একজন মানুষের দ্বিতীয় জন্ম হয়। আমাদেরও দ্বিতীয় জন্ম হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অর্জনে, গর্বে আমাদের মাথা উঁচু হয়। আবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ যদি অপরাধী হিসেবে কোথাও গ্রেপ্তার হয়, তাহলে আমাদের মাথা নিচু হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্ভবত তাবৎ দুনিয়ার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেটি একটি পরাধীন জাতির স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জনের প্রক্রিয়ায় সরাসরি ভূমিকা পালন করেছে। এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা যখন অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াতি করতে গিয়ে আটক হয়, তখন কোথায় থাকে এর সুনাম? যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কাবিল হয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, তাদের কেমন কষ্ট লাগে, লজ্জা লাগে, সেটা কি এই দুর্বৃত্তের দল কোনোদিন বুঝতে পারবে?

২০১৫ গত বছরের ২ নভেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে আটক হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আলী হোসেন জনি। একই অপরাধে ২৭ নভেম্বর নার্সিং কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হন মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান সুমন এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হন ফার্মেসি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র রাসেল সোহরাব। সে সময় তাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে আজীবন বহিষ্কার করা হয় এদের।

২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের ছাত্র মো. ফরহাদ উদ্দিন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এস এম ইমরুল কায়েস শুভ এবং চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের দ্বীন মোহাম্মদ সোহেলকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সঙ্গে সঙ্গে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ধরা পড়ে অনেক ছেলে মামলা খায়, আদালতে জামিন নিয়ে চলে আসে।

২০১৫ সালে জাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে ধরা খেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর এর এক ছাত্র। এক্স-ক্যাডেট এই ছেলে দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ, বহুত স্মার্ট। কিছু বাড়তি আয় করা যাবে ভেবে সে প্রক্সি দিতে জাহাঙ্গীরনগরে এসেছে। ছেলেটির বাবা নেই, মা একা সংসার চালান। বারবার অনুরোধ করছিল, ওর মাকে যেন না জানাই আমরা। আমরা ছেলেটির সাথে ভালো ব্যবহার করলাম। কিন্তু পুলিশে দিতে ভুল করলাম না। বেশ কয়েকদিন পরে নীলক্ষেত লেপ-তোষকের দোকানের সামনে দেখি ছেলেটি এক মেয়ের হাত ধরে গল্প করতে করতে কুয়েত মৈত্রী হলের দিকে যাচ্ছে। অবাক হওয়ার পাশাপাশি খানিকটা ভয়ও পেলাম। আমাকে যদি দেখে ফেলে আর আক্রমণ করে। তাই একটু আড়ালে থেকে ছেলেটিকে আবার দেখলাম। মেয়েটি হয়ত তাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু মেয়েটি হয়ত জানেনা, সাথের ছেলেটি কদিন আগে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা খেয়ে নিজের, মায়ের এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সুনাম নষ্ট করে এসেছে।

এভাবে প্রতিবছর প্রক্সি দিতে গিয়ে জাহাঙ্গীরনগরসহ অন্য দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ধরা পড়েছে আমার, আপনার প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র। জাহাঙ্গীরনগরে এবার আমার হাতেই বেশ কয়েকজন ভর্তিচোর ধরা পড়েছে, তাও ভাইভা দিতে ও ভর্তি হতে এসে। এদের একজন ঢাকাটাইমসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিকে বলেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের এক ছাত্রলীগ নেতা তাকে প্রক্সির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে কয়েকজন প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টার অভিযোগে ধরা পড়েছে। এসব লিখতে ভালো লাগে না। কিন্তু না লিখে উপায় কী? বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁসে অভিযুক্তরা হলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মারুফ হোসাইন মারুফ (২২)। তিনি যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানাধীন নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের বলরামপুর ইউনিয়নের মুরাদ মোল্লার ছেলে ও অমর একুশে হলের শহীদ বরকত ভবনের বাসিন্দা। আরেকজন মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আলমগীর হোসেন শাহিন (২৪)। তিনি পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার লেবুখালি ইউনিয়নের কার্তিকপাশা গ্রামের মৃত আব্দুর কাদের হাওলাদারের ছেলে ও অমর একুশে হলের শহীদ বরকত ভবনের বাসিন্দা। এবং গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মাহামুদুল হাসান আবিদ (২৩)। তিনি পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌরসভার কলেজপাড়ার জাহিদুল ইসলামের ছেলে ও অমর একুশে হলের শহীদ রফিক ভবনে বাসিন্দা।

আলমগীর হোসেন শাহিন পুলিশকে জানিয়েছে, সে আবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য। হলের নামটি সবাই একটু খেয়াল করুন। অমর একুশে হল। আটককৃতদের সবাই অমর একুশে হলের। গতবার জাহাঙ্গীরনগরে জালিয়াতি চেষ্টার এক ঘটনায় অমর একুশে হলের এক ছাত্রের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছিল।

ঢাকাটাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রশ্ন ফাঁস ও ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হলে উত্তর সমাধানের মাধ্যমে গত তিন বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। প্রতিটি পরীক্ষায় লেনদেন হয়েছে ৪ থেকে ৭ লাখ টাকা। শুধু ঢাবি নয়, সরকারি ব্যাংক নিয়োগে ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতেও বড় চক্র জড়িত।

সম্প্রতি এ রকমই এক চক্রের হোতা এনামুল হক আকাশকে গাজীপুর ও নাবিদ আনজুম তনয়কে রংপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজ ক্রাইম ইউনিট। এরপর তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া সাত ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ভর্তি জালিয়াতির হোতাদের সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, যেকোনো নিয়োগ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময় জালিয়াত চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে।

বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, এসব চক্র পরীক্ষায় জালিয়াতির জন্য মাস্টারকার্ডের মতো দেখতে পাতলা এক ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করছে, যার ভেতরে মোবাইল ফোনের সিম থাকে। আর পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর কানে থাকে অতি ক্ষুদ্র শ্রবণযন্ত্র। এ ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থেকে হলের ভেতরে পরীক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তর বলে দেয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতিতে সঙ্গে থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মূলত ২০১২ সাল থেকে ভর্তি জালিয়াত চক্রটি কাজ করে আসছে বলে জানান সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘তবে ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে জালিয়াত চক্রটি বেশি সক্রিয় হয়। এ সময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে শতাধিক ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছে।’ এ ছাড়া মেডিকেল ও ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় বড় একটি চক্রের সন্ধান পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ নিয়েও কাজ করছেন তারা।

এদিকে গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় ছাত্রসহ আটজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ মোল্লা নজরুল ইসলাম। গত মঙ্গলবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনার অন্যতম মূল হোতা নাভিদ আনজুম তনয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী আকাশ।

তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থেকে উত্তর বলে দিয়ে এবং পরীক্ষার দিন সকালে কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে আসছিল।

মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত আমরা শুধু ঢাবি নয়, ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতেও জালিয়াতির তথ্য পেয়েছি। সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিটি ভর্তি পরীক্ষায় একেকজনের জন্য ৪ থেকে ৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।’

এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের একটা অংশ নিজ প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে একটা জালিয়াতি সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এই সিন্ডিকেট কাজ করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও স্থানীয় ছাত্র গ্রেপ্তার করে পুলিশে দেওয়ার নজির আছে। তবে জাহাঙ্গীরনগর থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা পড়ার নজির আছে বলে আমার জানা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এসব জালিয়াতদের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে তাদের বিচার দাবি করে ফেসবুকসহ নানা প্ল্যাটফর্মে কথাবার্তা বলছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনসমূহ নিজেদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যতটুকু পারছেন জালিয়াতি প্রতিরোধের ব্যবস্থা করছেন। পুলিশে দিচ্ছেন মামলাসহ। আদালতে গিয়ে এসব জালিয়াত জামিন নিয়ে বের হয়ে এসে আবার নতুন করে জালিয়াতি করার কাজে ব্যস্ত হচ্ছে।

এখন সময় এসেছে নতুন করে ভাবার। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকদের একটা সমন্বিত টিম পুলিশের সাথে মিলে পুরো বছর জুড়ে কাজ করতে পারে। আলাদা করে টিম গঠনেরও দরকার নেই। প্রক্টরিয়াল টিমগুলো মিলেই একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করা যেতে পারে। শিক্ষকদের এই দলটি পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখলে আগেভাগেই অনেক জালিয়াতির চেষ্টা প্রতিরোধ করা যাবে। এক্ষেত্রে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিতে একটা দ্রুত বিচার আদালত স্থাপন করা যেতে পারে। সাধারণ আদালতে অনেক সময় লাগে বিচার কাজ সম্পাদন করতে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থী সমাজের সবাইকে দরদ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে সক্রিয় হতে হবে। তবেই জালিয়াতমুক্ত ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :