যশোর-২: আ.লীগে বিদ্রোহের শঙ্কা, বিএনপিতে জামায়াত চ্যালেঞ্জ

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:২৯ | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭, ১২:০৯

আব্দার রহমান, যশোর, ঢাকাটাইমস

এই আসনে দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছে একাধিক শক্তিশালী মনোনয়ন-প্রত্যাশী। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে প্রার্থী বাছাইয়ে বেগ পেতে হবে দুই দলকেই। তবে প্রধানত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে শঙ্কা বিদ্রোহের, আর বিএনপিতে চ্যালেঞ্জ জামায়াতকে ছাড় না দেয়ার।

চৌগাছা ও ঝিকরগাছা উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত যশোর-২ সংসদীয় আসন। বেশিবার পাসের হিসাবে এগিয়ে আওয়ামী লগি। তবে জামায়াতেরও প্রভাব আছে বেশ। আগের দশটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাঁচবার, জামায়াত তিনবার ও বিএনপি-জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার করে বিজয়ী হয়েছেন এই আসনে। 

আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোয়ন-প্রত্যাশী বর্তমান সাংসদ মনিরুল ইসলামসহ অন্তত সাতজন। মনিরুল ইসলামের নৌকার টিকিট ছিনিয়ে নিতে অন্য ছয়জন জোরালোভাবে মাঠে সক্রিয়। 

বিএনপি জোটের শরিক জামায়াতের শক্ত অবস্থানের জন্য গত দুটি নির্বাচনে তাদের ছাড় দিয়েছিল বিএনপি। দলের স্থানীয় নেতারা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরাই জোটের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চান। তারা জামায়াতকে ছাড় দিতে নারাজ।

কিন্তু জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন নিশ্চিত করার দাবিতে অটল। ফলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে জট থাকছেই।

প্রধান দুই দল ছাড়াও আওয়ামী লগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরাও মাঠে আছেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল ইসলাম এমপি নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমান এমপি মনিরুল ইসলামের বাবা। ১৯৭৯ সালে বিএনপির বদরুল আলা, ১৯৮৬ সালে জামায়াতের মকবুল হোসেন, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির মীর শাহাদাতুর রহমান, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জামায়াতের মকবুল হোসেন, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন আওয়ামী লীগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ২০০১ সালে জামায়াতের আবু সাঈদ মোহাম্মদ শাহাদাৎ হুসাইন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনিরুল ইসলাম মনির নির্বাচিত হন। তবে ২০১৪ সালে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। 

এবারও স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোন্দল বিদ্যমান। নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে দলের মধ্যে শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। বর্তমান এমপি মনিরুল ইসলাম মনির তার নৌকার টিকিট ধরে রাখতে যেমন তৎপর, তেমনি এই মনোনয়ন ছিনিয়ে নিতে তৎপর অন্য ছয় প্রার্থী। বিশেস করে মনিরুল ইসলামের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। 

নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে তৎপর অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ার হোসেন। তিনি গণসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন চৌগাছা ও ঝিকরগাছার প্রতিটি এলাকা। অংশ নিচ্ছেন প্রায় প্রতিটি দলীয় কর্মসূচিতে। একান্ত আলাপচারিতায় তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের অন্য প্রার্থীদের তুলনায় দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের সঙ্গে আছেন। তাকে মনোনয়ন দিলে নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী হবে বলে মনে করেন তিনি। 

এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আইনজীবী আহসানুল হক আহসান  নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে মাঠে রয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী মোহাম্মদ আলী রায়হানও দলের মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া গত দুই বছরে চৌগাছা-ঝিকরগাছায় বেশ কয়েকটি মহড়া দিয়েছেন নৌকার অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মেজর জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দিন।

অন্যদিকে, সর্বশেষ দুটি নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন জামায়াতের আবু সাঈদ মোহাম্মদ শাহাদাৎ হুসাইন। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। জামায়াত নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় কৌশলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। তবে এবার বিএনপির প্রার্থীরা জামায়াতকে আসনটি ছাড় দিতে নারাজ। বিএনপির অন্তত চারজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।

জোটের আসন ভাগাভাগির হিসাব-নিকাশে বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়ন নিয়ে অনেকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন। তারপরও দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা নাজমুল মুন্নী, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোটে মোহাম্মদ ইসহাক ও চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম। 

এই আসনে জাতীয় পার্টির নেতা মুফতি ফিরোজ ও চৌগাছা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নুরুল কদর মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।

দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, এই আসনে প্রার্থী বাছাই যেমন কঠিন হবে তেমনি সঠিক মনোনয়নের ওপর নির্ভর করবে জয়-পরাজয়। আওয়ামী লীগের নেতারা চাইছেন আসনটি ধরে রাখতে। বিএনপি-জামায়াতের লড়াই পুনরুদ্ধারের। ফলে আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মীর শঙ্কা, সঠিক প্রার্থী বাছাই না হলে মনোনয়ন-দ্বন্দ্বে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা আসনটি।

তবে এই আসনে বিএনপির মনোনয়নও সহজ কাজ হবে না। দলের নেতারা এবার প্রার্থী হবেনই। জামায়াত চায় জোটসঙ্গীর চেয়ে বেশিবার পাস করা আসনটিতে নিজেদের প্রার্থী দিতে, যা তাদের চলমান কোণঠাসা অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়ক হবে। 

(ঢাকাটাইমস/২৭নভেম্বর/মোআ)