যাপন

শার্টেই স্বস্তি

তানিয়া আক্তার
 | প্রকাশিত : ২৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৩:১২

কেউ কেউ ব্যতিক্রম। জিন্স বলুন, আর নরমাল বলুন, সব ধরনের প্যান্টের সঙ্গে তারা কেবল শার্টই পরেন। অথচ আজকালকার তরুণ-যুবকরা টি-শার্টেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কিন্তু শিক্ষা বা চাকরিজীবনের নিয়মের বাতাবরণে বাধ্য হয়ে তাদের অনেককেই শার্ট পরতে হয়। তারাও একটু জেনেশুনে নিলে শার্টে স্বস্তি পাবেন। এমনটা হলে শার্ট পরেও হালফ্যাশনে এগিয়ে থাকা যাবে। বহুদিনের প্রচলিত এ পোশাকের কদর কিন্তু কখনোই কমেনি। এক্ষেত্রে ক্যাজুয়াল বা সাধারণ বেশের নৈমিত্তিক শার্ট পোশাকের চাহিদা মিটিয়ে চলেছে যুগের পর যুগ। কারণ সব সময় ফরমাল লুকে থাকা অস্বস্তির। কিন্তু ক্যাজুয়াল শার্ট ইচ্ছেমতো হাতা গুটিয়ে রাখা যায়। আবার প্যান্টের সঙ্গে ইন না করলেও চলে।

জেন্টল পার্কের ফ্যাশন ডিজাইনার জাহিদ হোসেন আকাশ বলেন, ফ্যাশন কেমন হবে, তা অনেকটা নির্ভর করে ঋতু আর ট্রেন্ডের ওপর। প্রতিবছরই রং, সুতা, শার্টের কলার, হাতার কাফ, বোতাম সব কিছুতেই পরিবর্তন আসে। পরিবর্তনগুলো খুব সূক্ষ্ম হলেও নজর কেড়ে নেয়। আর ঋতু পরিবর্তনের সময়গুলোয় ফ্যাশন মানেই ক্যাজুয়াল সাজ! তরুণদের পছন্দের তালিকায় সব সময়ই থাকে ক্যাজুয়াল শার্ট। এ ধরনের শার্টে যেমন স্বস্তি, তেমনি উৎসবেও মিলবে ফ্যাশনেবল লুক।

রং আর কাপড়

শার্টের রং আর নকশায় প্রতিবছরই ভিন্ন ভিন্ন লুক আসছে। সব রংই এখন ক্যাজুয়াল শার্টে ব্যবহার হয়। তবে সাদা, অফ হোয়াইট, মেরুন, আকাশি, কালো ও হালকা রংগুলো এখন ফ্যাশনেবল। শার্টের কলার, হাতায় এখন কলারের ভেতরে অন্য রঙের কাপড় দিয়ে ক্যাজুয়াল শার্টগুলোয় ফ্যাশনেবল লুক আনা হচ্ছে। প্রিন্টেড শার্টে ছাপা নকশার কোনো একটা রং বেছে নিয়ে দেওয়া হচ্ছে গলা কিংবা হাতায়। দুই রং বা দুই রকমের নকশা করা কাপড় জুড়ে দেওয়া হচ্ছে শার্টে। কিন্তু সাদা কিংবা স্বচ্ছ বোতাম তেমন আর দেখা যায় না। এর জায়গা করে নিয়েছে কাঠ আর প্লাস্টিকের রঙিন বোতাম। ক্যাজুয়াল শার্টের চেক প্রিন্টের জায়গা সবর্দাই থাকে। আবার এক রঙা আর স্ক্রিন প্রিন্ট তো ভালো লাগেই। তবে ফ্যাশন পরিবর্তনের তাগিদে এখন প্রচলিত অন্যান্য প্রিন্টের শার্ট ও তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান ডিজাইনার আকাশ।

নকশায় বৈচিত্র্য

ফ্যাশন ঋতুভেদে ভিন্ন হয়। এই শীতে তাই ক্যাজুয়াল ডেনিম ও একটু মোটা কাপড়ের ফুলস্লিভ শার্টের প্রতি তরুণ কিংবা তরুণীদের ঝোঁক বেশি। তবে ক্যাজুয়ালে ফুলহাতা শার্ট, হাফহাতার পাশাপাশি এখন থ্রি-কোয়ার্টার শার্টও চলছে। শার্টের হাতা গুটিয়ে বোতামে আটকে রাখার ব্যবস্থাও থাকছে এ শার্টে। পকেটেও থাকছে বৈচিত্র্য। এক বা একাধিক পকেট আবার কোনোটি পকেট ছাড়া। কোনো কোনো শার্টের নিচের দিকে জ্যাকেটের মতো পকেটও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। ফ্যাশনেবল লুক আনতে পকেটের নানা রকম ব্যবহার করা হয়। কলারেও এসেছে পরিবর্তন। সাধারণ কলারের পাশাপাশি ন্যারো, ব্যান্ড ও টিউনিক ব্যান্ডের কলার চলছে বেশ। ক্যাজুয়াল শার্ট নানা স্টাইলের পাওয়া যায়। গ্রাফিক শার্ট, ভি-নেক শার্ট, ক্রিউ নেক টি-শার্ট, পকেট টি-শার্ট এবং স্ট্রাইপ টি-শার্টের চাহিদা আছে। তবে এগুলোর রেগুলার ও ফিটেড দুটি স্টাইলই থাকছে।

এলিফ্যান্ট রোডের কাপড় ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই শার্টের কদর আছে। সব জায়গায় যেমন খুশি ইচ্ছামতো পরা যায় আবার পরতেও আরাম। তাই ছাত্রছাত্রী কিংবা চাকরিজীবীসহ সব গ্রাহকই কিনতে আসেন। দাম অন্য পোশাকের চেয়ে কম থাকায় একেকজন একসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন নকশার কয়েকটা কিনে নেন।’

যেখানে পাবেন

দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোয় নানা ধরনের দেশি তাঁতের কাপড়ে তৈরি ক্যাজুয়াল শার্ট পাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে সুতি, খাদি, সিল্ক, এন্ডি। রং আর নকশায় আছে দেশীয় লোকজ আমেজ। আড়ং, রঙ, দেশাল, বিবিয়ানা, নিপুণ, কে-ক্রাফট, নিত্য উপহার, নগরদোলা, বাংলার মেলাসহ দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোয়। এছাড়া অন্য ফ্যাশন হাউসগুলোতেও পাওয়া যাবে ক্যাজুয়াল শার্ট। আমবার লাইফস্টাইল, ওটু, আর্টিস্টি, একস্ট্যাসি, ইয়ালো, ইজি, জেন্টল পার্ক, ক্যাটস আই, বেস্টওয়ে, মেনজক্লাব, ইনফিনিটিতে পশ্চিমা ধাঁচের ক্যাজুয়াল পাওয়া যাবে। তবে ফ্যাশন হাউস ছাড়াও অনায়াসে কম দামে ফ্যাশনেবল ক্যাজুয়াল শার্টগুলো ঢাকা কলেজ, বায়তুল মোকাররম মার্কেট, নিউ এলিফেন্ট রোডের সামনে অস্থায়ী দোকানগুলোয় পাওয়া যাবে।

দর্জির ঘর

তবে কেউ নিজের গড়নের সঙ্গে মানানসই শার্ট দর্জির দোকান থেকে বানিয়ে পরতে পারেন। ফ্যাশন হাউস প্রবর্তনায় সুতি, খাদিসহ দেশি বিভিন্ন তাঁতের কাপড় পাওয়া যায়। এ কাপড় দিয়ে ইচ্ছেমতো শার্ট বানিয়ে নিতে পারেন।

চাঁদনী চকের সাথী টেইলার্সের সেলাই কারিগর মঞ্জু বলেন, ‘বেশ আগে শুধু অভিজাত শ্রেণির মেয়েরাই শার্ট বানাতে দিত। তাও লজ্জা নিয়ে অনেকে লুকিয়ে শরীরের মাপ দিত। কিন্তু এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা শার্ট বানিয়ে পরতে চায়। অনেকে আবার কেনা শার্টগুলো নিজের গড়নমতো সঠিক মাপের করে নিতে ছোট-বড় কিংবা হাতার স্টাইলে পরিবর্তন করে নেয়। তবে মেয়েদের শার্টগুলো ছেলেদের থেকে কাটে-ছাঁটে ভিন্নতা আছে। ডেনিম-জিন্সের প্যান্টের সঙ্গে ক্যাজুয়াল শার্ট পরতে দেখা যায়। কেউ কেউ স্কার্টের সঙ্গেও ক্যাজুয়াল শার্ট পরে। তবে শার্টটা ফিটেড পরতে চায়। শার্টের দৈর্ঘ্য শরীরের দৈর্ঘ্যরে সঙ্গে মিলিয়ে পরতে হয়। শার্টের ভিন্নতা আনতে নিচের দিকে চায়নিজ কাট, ভি কাট বা ¯্রটে কাট দেওয়া যায়। তবে শার্টের ধরন বুঝে বিভিন্ন ধরনের হাতা ব্যবহার করে তরুণীরা। ফুল ভি, হাফ ভি কিংবা থ্রি-কোয়ার্টার নানা রকম কাটিং হয় হাতার। আবার মেয়েদের কলার পেছনে ঠিক রেখে সামনে কাটিংয়ে পরিবর্তন আনে। উঁচু কলারের সঙ্গে সামনে ভি-শেপ বা ডিপ ভি-শেপ কলার বানিয়ে নেয়।’

দরদাম

দেশীয় ফ্যাশন হাউসের ক্যাজুয়াল শার্টের দাম পড়বে ৫০০ থেকে দুই হাজার ২৫০ টাকা। আর অন্য ব্র্যান্ডের হাউসগুলোতে ৭০০ থেকে দুই হাজার টাকা। ফুটপাতে কিংবা অস্থায়ী দোকানে ২৫০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।

(ঢাকাটাইমস/২৮নভেম্বর/টিআই/টিএমএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :