শিক্ষার আলো বঞ্চিত তিস্তাচরের তিন হাজার শিশু

এস. কে সাহেদ, লালমনিরহাট
 | প্রকাশিত : ২৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:৫৭

‘নদীর এক চর ভাঙে আরেক চর গড়ে’ ভাঙা গড়ার এ খেলা প্রতি বছরেই হয়। ফলে চরাঞ্চলে গড়ে ওঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলো একদিকে যেমন বন্যায় বন্ধ থাকে অপরদিকে বাড়ি-ঘর অন্যত্রে সরিয়ে নেয়ার কারণে শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়ে। আবার দুর্গম কোনো কোনো চরে এখনো গড়েই উঠেনি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব সমস্যার কারণে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চরাঞ্চলের শিশুরা।

সরকারি ও বেসরকারি কোনো বিদ্যালয় গড়ে না ওঠায় তিস্তার চরাঞ্চলের কয়েক গ্রামের তিন হাজারের অধিক শিশু শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে সরকারের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম এই এলাকায় যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ কারণে মেয়ে শিশুরা শিকার হচ্ছে বাল্যবিয়ের মতো সামাজিক ব্যাধির আর ছেলে শিশুদের ভবিষ্যৎ থেকে যাচ্ছে অন্ধকারে।

সরেজমিনে লালমনিরহাট সদর উপজেলা ও আদিতমারী উপজেলার তিস্তার দুর্গম চর এলাকা মহিষখোচা ইউনিয়নের চর গোবরধন, চর চন্ডিমারী, শিংগিমারী, পুটিপাড়া, তালপট্টি এবং খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের পশ্চিম কালমাটি, পশ্চিম হরিণচড়া, বাগডারার চর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সরকারি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এমনকি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগেও এখানে গড়ে ওঠেনি কোনো প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে গ্রামগুলোর তিন হাজারেরও অধিক শিশু প্রাথমিক শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় প্রাক-প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কেন্দ্রের অভাবে কোনো ধর্মীয় শিক্ষাও লাভ করতে পারছে না এখানকার শিশুরা। অথচ ওই এলাকার উত্তর-পশ্চিমের চন্ডিমারী চর হতে দক্ষিণ-পূর্বের হরিণচড়া-তালপট্টি পর্যন্ত প্রায় ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রায় অর্ধশত মসজিদ আছে, কিন্তু নেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদভিত্তিক কোনো প্রাক-প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কেন্দ্র।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব এলাকায় যেতে হলে তিস্তানদী পাড়ি দিয়ে মহিষখোচা ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের নদীতীর হতে প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার এলাকা পায়ে হেঁটে যেতে হয়। এ কারণেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ এসব এলাকার মসজিদে কোনো পাঠকেন্দ্র দেয়নি।

চর এলাকার শিশু শিক্ষার্থী আনোয়ারুল হক (৮), খায়রুজ্জামান (১১), ওসমান গণি (৯), রুবিনা (৬), তানজিনা আক্তার (৯) জানায়, তাদের বাড়ি থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় ১০ থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। এসব বিদ্যালয়ে শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যাওয়া-আসা করতে তাদের খুব কষ্ট হয়। সে কারণে তাদের বাবা-মা গত বন্যার পর আর স্কুলে যেতে দেয়নি। চরের মূল ভূখণ্ডের অন্য শিশুদের মতো তারাও লেখাপড়া করতে না পারায় তাদের চোখে মুখে আক্ষেপের যেন শেষ নেই।

চর গোবরধন আরাজি ছালাপাক জামে মসজিদ, কুটিরপাড়া জামে মসজিদ, চর পশ্চিম কালমাটি জামে মসজিদের মুসল্লি আপিয়ার রহমান, আজিজার রহমান, আব্দুল কাফিসহ অন্যরা ঢাকাটাইমসকে জানান, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর মসজিদভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক ও সহজ কোরআন শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও আজ অবধি এসব অবহেলিত এলাকার কোনো মসজিদে একটি কেন্দ্রও চালু করা হয়নি। ফলে তাঁদের শিশু সন্তানরা সাধারণ শিক্ষা এমনকি ধর্মীয় শিক্ষাও লাভ করতে পারছে না। এতে করে এসব এলাকার শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে।

এব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান মিয়া যাতায়াতে অসুবিধার কারণে কেন্দ্র না দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন, বিগত বছরগুলোতে ওই এলাকায় কয়েকটি কেন্দ্র থাকলেও শিক্ষার্থীর অভাবে পরবর্তী সময়ে সেসব কেন্দ্র মূল ভূখণ্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৮নভেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :