টাঙ্গাইলের কর বাহাদুর যুগলপদ সাহা

গোপন করা সম্পদের মালিক সরকার

অনলাইন ডেস্ক
| আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:৪৮ | প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:৪২

নিয়মিত কর পরিশোধ করার স্বীকৃতি হিসেবে টাঙ্গাইলে ‘কর বাহাদুর’ উপাধি পেয়েছেন আয়কর আইনজীবী ৮৫ বছর বয়সী যুগলপদ সাহা ও তার পরিবার। ১৯৭৪ সালে প্রথম ৬০০ টাকা কর দিয়েছিলেন তিনি। এরপর গত ৪৩ বছর ধরে নিয়মিত কর দিয়ে রাজস্ব খাতকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন যুগলপদ সাহা। এবার কর দিয়েছেন লাখ ১ হাজার ৯৫৮ টাকা। তার পরিবারের ১০ সদস্যের মধ্যে নয়জনই করদাতা সদস্য। তিনি তো আছেনই, অন্য আটজন হলেন তার স্ত্রী, তিন ছেলে, দুই পুত্রবধূ এমনকি নাতিও।

সরকার এবার জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ করদাতাদের প্রথমবারের মতো ‘কর বাহাদুর পরিবার’ ঘোষণা করে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য দেশের ৬৪ জেলার ৮৪ জনকে এই উপাধি দেয়া হয়। তাদের একজন যুগলপদ সাহা।

এর আগে ২০০৯ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে নিয়মিত ৪২ বছর নিয়মিত কর দেওয়ার পুরস্কার পান তিনি। তার এসব স্বীকৃতি আর কর দেয়ার প্রেরণা নিয়ে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা হয় যুগলপদ সাহার। ঢাকাটাইমসের একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তার কর বাহাদুর হওয়ার গল্প আর তার অনিভূতি ও ভাবনার কথা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন টাঙ্গাইলে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. রেজাউল করিম।

ঢাকাটাইমস: কেমন আছেন?

যুগলপদ সাহা: ভালো আছি। আপনিও নিশ্চয় ভালো আছেন।

ঢাকাটাইমস: জি, আলহামদুলিল্লাহ। করবাহাদুর উপাধি পেয়ে কেমন লাগছে আপনার?

যুগলপদ সাহা: দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৮৪ জন করবাহাদুর নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে আমি একজন। করবাহাদুর খেতাবটি গর্বের বিষয় হওয়াই স্বাভাবিক। তবে করবাহাদুর খেতাব পেয়ে আমার বাড়তি কোনো অনুভূতি নেই। কারণ আমি কর বাহাদুর হওয়ার জন্য তো কর দিই না। দেশ পরিচালনার অংশিদার হতেই কর দিয়ে থাকি।

ঢাকাটাইমস: এ পর্যায়ে আসতে কে কে আপনাকে সহযোগিতা করেছেন। এর মধ্যে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?

যুগলপদ সাহা: বন্ধুবান্ধব-সহপাঠী থেকে শুরু করে পরিবারের সবার উঁৎসাহ পেয়েছি। তবে আমার এই অবস্থানের জন্য আমার বাবা-মায়ের অবদানই সবচেয়ে বেশি। তারা আমাকে সততার শিক্ষা দিয়েছেন। কারো পাওনা কীভাবে পরিশোধ করতে হয় সেটাও শিখিয়েছেন আমার মা-বাবাই।

ঢাকাটাইমস: আপনার কী মনে আছে প্রথম কবে কর দিয়েছেন?

যুগলপদ সাহা: ১৯৭৪ সালে। সেবার ৬০০ টাকা কর দিয়েছিলাম। তবে তখন ৬ টাকা কর দিতে আমার যতটা কষ্ট হয়েছিল এখন লাখ টাকা কর দিতে এতটা কষ্ট হয় না।

ঢাকাটাইমস: একজন সফল উদ্যোক্তার কোন গুণটি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

যুগলপদ সাহা: সততা। সততা থাকলে যে কেউ সফলতা অবশ্যই পাবেন। সঙ্গে গ্রাহকসেবার মান নিশ্চিত করা। আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি বেশির ভাগ খাতে সেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় উদ্যোক্তা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন না।

ঢাকাটাইমস: আপনি নিয়মিত কর দিচ্ছেন। এর পেছনে প্রেরণা কার?

যুগলপদ সাহা: ১৯৭০ সালের দিকে জেলার কর কর্মকর্তা ছিলেন মো. ইব্রাহীম ও তারেক মোস্তফা আলী। তারা দুজনই সৎ কর্মকর্তা ছিলেন। তারা বলতেন সম্পদের কর দেওয়াটা দায়িত্ব। কর পাওয়া সরকারের অধিকার। তাদের কাছ থেকেই আমি মূলত কর দেওয়ার প্রেরণা পেয়েছি। পরে ১৯৭৪ সালে আমির কর দেওয়ার উপযুক্ত হয়েই কর দেওয়া শুরু করি।

ঢাকাটাইমস: সরকারের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী ?

যুগলপদ সাহা: সরকারের কাছে প্রত্যাশা একটু মূল্যায়ন। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সরকারের পক্ষ থেকে করদাতাদের আমন্ত্রণ করে মূল্যয়ন করা প্রয়োজন। এতে করদাতাদের পরিচিতি বাড়ে। এদের সম্মাননা দেখে অন্যরাও কর দিতে উৎসাহ পাবে। পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিষয়ে করদাতাদের সুবিধা বাড়াতে সরকারের দৃষ্টি কামনা করছি।

ঢাকাটাইমস: করবাহাদুর পরিবার হিসেবে আপনি কোনো অগ্রাধিকার পেয়েছেন?

যুগলপদ সাহা: এ বছরই প্রথম করবাহাদুর খেতাব দেওয়া শুরু হলো। হয়তো সরকার এ বিষয়ে ভেবে দেখবে।

ঢাকাটাইমস: কর দিতে গিয়ে কখনো হয়রানির শিকার হয়েছেন?

যুগলপদ সাহা: কর শব্দটিই বিড়ম্বনা। করের হিসাব জানতেও করদাতাদের হয়রানি হতে হয়। এ হয়রানির জন্য অনেকেই কর দিতে আগ্রহী হয় না।

ঢাকাটাইমস: কর আদায় কীভাবে বাড়ানো যায়?

যুগলপদ সাহা: পিয়ন থেকে শুরু করে কর্মকর্তা পর্যন্ত সবাই সৎ হলে সাধারণ মানুষ কর দিতে উৎসাহ পাবে। কেউ যতটুকু সম্পদের হিসাব গোপন করবে সেটুকু সম্পদের মালিক সরকার হবে। এই ধারণা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিলেই কর দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে বলে মনে হয়। এ ছাড়া করের পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। করের হার না বাড়িয়ে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো দরকার। করদাতাদের সংখ্যা বাড়লে দেশের রাজস্ব খাত মজবুত হবে।

ঢাকাটাইমস: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

যুগলপদ সাহা: এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়ায় ঢাকাটাইমসকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/৩০নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :