বাগেরহাটে কাজ পাচ্ছে না ছোট ঠিকাদার

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর ২০১৭, ১৪:১৯
ফাইল ছবি

বাগেরহাটে ঠিকাদারি কাজের অভিজ্ঞতা ও বার্ষিক লেনদেন (টার্ন ওভার) উল্লেখযোগ্য পরিমাণে না থাকায় ছোট ছোট কয়েকশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পাচ্ছে না। যাদের অভিজ্ঞতা ও টার্ন ওভার বেশি তারাই প্রায় সব কাজ নিয়ে নিচ্ছেন। বাগেরহাটে এই প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বলতে গেলে হাতেগোনা কয়েকটি।

কোন কাজ না পেলেও ছোট ছোট ঠিকাদার বা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রতি বছর সরকারকে লাইসেন্স নবায়নে ফি বাবদ আড়াই হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে। কিন্তু কাজ না পাওয়ায় তাদের অভিজ্ঞতা যেমন বাড়ছে না, তেমনি টার্নওভারেও তেমন উন্নতি হচ্ছে না। এ জন্য এক ধরনের হতাশায় ভুগছে তারা।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলজিইডির (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) নিয়ম ও শর্ত পূরণ করতে না পারায় তারা কাজ পাচ্ছে না। নিয়ম শর্ত যেসব প্রতিষ্ঠান পূরণ করছেন তারা ঠিকই কাজ পাচ্ছে।

বাগেরহাটে যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে টার্নওভার অর্থাৎ অভিজ্ঞতা ভাল তাদের মধ্যে রয়েছে মেসার্স আলিফ স্টোর, মেসার্স সোহেল কনস্ট্রাকশন, মেসার্স শুভ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সোনিয়া এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স হাবিব এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, মেসার্স শাওন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মাসুদ এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স ঝর্ণা এন্টারপ্রাইজ। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাগেরহাট জেলার ছোট বড় প্রায় সব কাজ করছে।

ঠিকাদারিতে আগ্রহী কোন প্রতিষ্ঠানকে যখন কোন বিভাগ লাইসেন্স দিচ্ছে তখন তাকে শর্তে বলছে, দুই কোটি টাকা পর্যন্ত কাজের অনুকূলে কোন টার্নওভার ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হবে না বলে নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কাজের বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে ছোট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ।

মেসার্স প্রচেষ্টা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘২০১০-১১ অর্থ বছরে ঠিকাদারি করার আগ্রহ নিয়ে এলজিইডির একটি লাইসেন্স করি। আমাকে যখন লাইসেন্স দেয় তখন তারা শর্তে বলেছে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত কাজের অনুকূলে কোন বড় ধরনের টার্নওভার ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হবে না। গত ছয় বছর ধরে লাইসেন্সের নবায়ন ফি দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আজও একটা কাজ করতে পারিনি।

মেসার্স শান্তা অ্যান্ড ব্রাদার্সের সত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম পাভেল বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে এলজিইডির একটি লাইসেন্স করি। আমার কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় গত তিন বছরে একটি কাজও পাইনি। অথচ প্রতিবছর আমি আড়াই হাজার টাকা করে সরকারকে লাইসেন্স নবায়ন ফি দিয়ে যাচ্ছি।

বাগেরহাট এলজিইডি ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সদস্য সচিব আব্দুর রব সরদার জানান, জেলায় এলজিইডির সাড়ে তিনশ লাইসেন্সধারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ কাজ পাচ্ছে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। কোন কাজের অনুকূলে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান ১০ শতাংশ কমে দরপত্র জমা দিলেও তারা কাজ পায় না। কিন্তু কাজ পায় যাদের টার্নওভার ভাল। এটা বৈষম্যমূলক আচরণ।

শুরুতেই কেউ বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয় না। ছোট থেকে বড় হয়। যাদের অভিজ্ঞতা নেই বলে এখন কাজ দেয়া হচ্ছে না তাহলে কেন এদের লাইসেন্স দিল সরকার?

চলতি অর্থ বছরে অন্তত ১৫টি নতুন লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা পড়েছে জানিয়ে এই ঠিকাদার বলেন, জেলার অধিকাংশ লাইসেন্সধারীরা তাদের লাইসেন্স ঠিক রাখতে প্রতি অর্থ বছরে নবায়ন ফি সরকারকে দিয়ে যাচ্ছে। সরকার ঠিকই রাজস্ব পাচ্ছে, কিন্তু ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বাগেরহাট এলজিইডি ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক খান আবু বক্কর সিদ্দিক এই প্রতিবেদককে বলেন, জেলার ঠিকাদারদের কল্যাণে এই সংগঠন কাজ করে থাকে। সম্প্রতি আমরা এই সমিতির দায়িত্ব নিয়েছি। বিগত দিনে যারা এই সংগঠনের দায়িত্বে ছিল তারা কি করেছে জানি না। তবে আমরা এখন থেকে সমিতির অন্তর্ভুক্ত সকল সদস্যের কল্যাণে কাজ শুরু করেছি। এখন থেকে নিয়ম মেনে সবাইকে কাজ দিতে হবে। বৈষম্য দূর করতে আমরা খুব শিগগির আন্দোলনে নামছি।

বাগেরহাট এলজিইডির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, এই বিভাগের যারা ঠিকাদারি করতে আগ্রহী তারাই লাইসেন্স করছেন। নিয়মে বলা আছে এলজিইডির দুই কোটি টাকার দরপত্রে কাজ করতে কোন অভিজ্ঞতা লাগবে না। অথচ নিয়মের ম্যারপ্যাঁচে পড়ে ব্যাংকের একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা জমা দেখাতে না পারায় দরপত্রে ওইসব ঠিকাদাররা অংশ নিতে পারছেন না।

জানতে চাইলে বাগেরহাট এলজিইডির জেষ্ঠ্য সহকারী প্রকৌশলী আবু কামাল এই ঢাকাটাইমসকে বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের কাজ পেতে হলে কাজের অভিজ্ঞতা অবশ্যই থাকতে হবে। জেলার অধিকাংশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানেরই কাজের অভিজ্ঞতা ও ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকার যোগান নেই। তাই তারা কাজ পাচ্ছে না। যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ম শর্ত পূরণ করতে পারছে তারা ঠিকই কাজ পাচ্ছে।

অভিজ্ঞতা নেই অথচ নতুন করে লাইসেন্স দিচ্ছেন কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা বলেন, নতুন লাইসেন্সে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে। সরকার নতুন করে লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের কী করার আছে। আমরা শুধু সরকারের দায়িত্ব পালন করছি।

(ঢাকাটাইমস/৩০নভেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :